জুমবাংলা ডেস্ক : খুলনায় ভ্রাম্যমাণ এক ব্যবসায়ী গত একমাস ধরে কুকুরের মাংস দিয়ে তৈরি বিরিয়ানি বিক্রি করে আসছিলেন। বুধবার তাকেসহ মাংস সরবরাহ করা তিন কিশোরকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এরপর সারাদেশে এ নিয়ে শুরু হয়েছে সমালোচনা।
কুকুরের মাংস সরবরাহ করা আটক তিন বন্ধু বাড়তি টাকা আয়ের লোভে এ ধরনের সমাজবিরুদ্ধ কাজে নেমেছিলেন বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
শুরুর দিকে তাদের থেকে কেউ মাংস কিনতে রাজি ছিলেন না। মো. আবু সাইদ নামে এক ব্যক্তি তাদের কাছ থেকে প্রথমে মাংস কিনতে রাজি হন। প্রতি কেজি মাংস তিনি কিনতেন ৪০০ থেকে সাড়ে ৪০০ টাকায়।
আর প্রতি প্লেট বিরিয়ানি বিক্রি করতেন ৪০ টাকায়। নগরীর বিভিন্নস্থানে ফেরি করে বিক্রি করতেন এই বিরিয়ানি। প্রতিদিন চার-থেকে পাঁচ কেজি মাংস কিনতেন আবু সাইদ।
আটকের পর অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে তেরখাদা উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা প্রিয়ঙ্কর কুণ্ডু খুলনা মহানগর দায়রা জজ আদালতে মামলা দায়ের করেছেন।
কুকরের মাংসের বিরিয়ানির খোঁজ মিললো যেভাবে
পরিত্যক্ত একটি ভবন থেকে দুর্গন্ধ পাচ্ছিলেন আশপাশের বাসিন্দারা। আর এই গন্ধের উৎস খুঁজতে গিয়ে দেখা মেলে তিন কিশোরের। তারা কুকুর নিয়ে ওই ভবনের দিকে যাচ্ছিলেন।
স্থানীয়রা কিশোরদের পিছু নেন এবং দেখতে পান, ভবনের বিভিন্ন জায়গায় আরও অনেক হাড় এবং মাংস-চামড়ার মতো জিনিস পড়ে আছে। এরপর কিশোররা কুকুরগুলোর গলা কেটে রশিতে ঝোলালে স্থানীয়রা তাদের হাতেনাতে আটক করে।
খবর দেয়া হয় পুলিশকে। পুলিশ এসে তিন কিশোরকে নিয়ে যায়। জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানান, আবু সাইদের হোটেলে কুকুরের মাংসের বিরিয়ানি বিক্রি করা হয়। পরে পুলিশ তাকেও আটক করে।
অভিযুক্তদের আটকের যে ভিডিও একাত্তরের কাছে এসেছে তাতে অবশ্য, আবু সাইদকে গোটা ঘটনা অস্বীকার করতে দেখা যায়। তিনি বলেন, ওই তিন কিশোরের কাউকেই তিনি চেনেন না। বরং তিনি খাসির মাংস ভেবেই ওই মাংসগুলো কিনেছেন।
এসময় এক পুলিশ সদস্যকে অনুরোধের স্বরে সাইদ বলেন, ‘স্যার মোবাইলটা দেন, আমি বাসায় ফোন দিয়ে একটু জিজ্ঞেস করি- কেউ মাংস খেয়েছে কিনা।- আমি আগে থেকে এগুলো কিছুই জানতাম না।’
সাইদ মিথ্যা বলছে দাবি করে ওই তিন কিশোর জানান, গত বেশ কিছুদিন ধরেই দুই-তিন-চার বা পাঁচ কেজি করে মাংস সাইদ তাদের থেকে কিনতেন। সেগুলো তিনি বিরিয়ানিতে দিয়ে বিক্রি করতেন।
কুকুর আসতো কোথা থেকে
কুকুর জবাই চক্রের প্রধান খালিশপুরের ডলার হাউজ মোড় এলাকার অষ্টম শ্রেণির ছাত্র (১৬) তার দুই বন্ধুকে (১৬) সাথে নিয়ে কুকুরের মাংসের ব্যবসা শুরু করেছিলেন। তারা শুরুতেই স্থানীয় এক পরিত্যক্ত পলিটেকনিক কলেজের ভবন খুঁজে বের করেন- যার আশপাশে মানুষের উপস্থিতি কম।
এরপর তারা তাদের বাড়ির আশপাশের এবং এলাকার কুকুরগুলোকে খাবারের লোভ দেখিয়ে কাছে এনে দড়িতে বাঁধতেন। তারপর তিন বন্ধু সেগুলোকে টেনে ভবনে নিয়ে আসতেন।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এ ঘটনার মূলহোতা কিশোর জানান, শুরুতে তারা তাদের পোষা কুকুর কেটে বিক্রি করেন। সে সময় তারা ওই মাংস খাসির মাংস বলে ফেরি করার চেষ্টা করেন। কিন্তু তাতে ততোটা সুবিধা করতে না পেরে তারা সাইদের সাথে চুক্তি করেন।
পুলিশ যা বলছে
খালিশপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আনোয়ার হোসেন জানান, পরিত্যক্ত ভবনটি থেকে কয়েকদিন ধরে দুর্গন্ধ পাচ্ছিলেন স্থানীয়রা। ঘটনার দিন বিকেলে একটি কুকুর নিয়ে ওই ভবনে চার জনকে ঢুকতে দেখেন স্থানীয়রা। কয়েকজন তাদের পিছু নেন। তারা গিয়ে দেখেন, কুকুরটিকে জবাই করে মাংস কাটার প্রস্তুতি চলছে। পরে পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যায়।
তিনি জানান, ওই ভবনটি থেকে অনেকগুলো কুকুরের চামড়া ও হাড় উদ্ধার করা হয়েছে। আটকরা জানিয়েছেন তারা প্রায় এক মাস ধরে কুকুরের মাংস দিয়ে বিরিয়ানির ব্যবসা করছিলেন। খালিশপুরের বঙ্গবাসী এলাকায় প্রতি প্লেট বিরিয়ানি মাত্র ৪০ টাকায় বিক্রি করতেন তারা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।