জুমবাংলা ডেস্ক : এপ্রিল মাসে সাধারণত প্রচণ্ড গরম হয়। আবার এক সময় বজ্রঝড় হয়ে সেই গরম প্রশমিত হয়। তারপর আবহাওয়া একসময় আবার গরম হয়। এভাবে তাপ ও ঝড়বৃষ্টির মধ্যে দিয়ে চলে এ মাস। কিন্তু এবারের এপ্রিল মাসে ঘটেছে বেশ কিছু ব্যতিক্রম ঘটনা। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, দিন দিন এপ্রিল মাসে তাপ্রবাহ বাড়ছে আর কমছে বজ্রঝড়ের সংখ্যা।
চলতি এপ্রিল মাসে গত ৭৬ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সময় ধরে তাপপ্রবাহ ছিল। এ মাসের ১ তারিখ থেকে শুরু হয়েছে তাপপ্রবাহ। আজ ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত তা চলছে। এছাড়াও ১৯৯৭ সালের এপ্রিল মাসে, ১৪টি বজ্রঝড়ের রেকর্ড হয়। কিন্তু এবার হয়েছে মাত্র একটি।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. উমর ফারুক বলেন, ১৯৪৮ সাল থেকে উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখেছি, এবারের মতো তাপপ্রবাহ টানা আগে হয়নি। এবার ৭৬ বছরের রেকর্ড এবার ভেঙে গেল।’
বৈশাখ মাসের সঙ্গে বৈশাখী ঝড়ের এক নিবিড় সম্পর্ক। মধ্য এপ্রিলে শুরু হওয়া বৈশাখের প্রায় অর্ধেকটা পার হয়েছে। কিন্তু এবার এ ঝড়ের সংখ্যা অনেক কম। আবহাওয়াবিদদের কাছে এ ঝড় হলো ‘বজ্রঝড়’।
এবারের এপ্রিল মাসে এই তাপপ্রবাহের মাসে বজ্রঝড় বা কালবৈশাখীর সংখ্যা গেছে কমে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক জানান, আবহাওয়া ও জলবায়ু নিয়ে গবেষণা করছেন তিনি। ১৯৮১ থেকে চলতি বছরের এপ্রিল মাসের উপাত্ত তুলে ধরেছেন তার গবেষণায়। এই ৪৩ বছরে এপ্রিল মাসে ৩৬৫টি বড় বজ্রঝড় হয়। সবচেয়ে বেশি ঝড় হয়েছিল ১৯৯৭ সালের এপ্রিল মাসে, ১৪টি। আর ১৯৯৯ এবং ২০০৯ সালে সবচেয়ে কম চারটি করে ঝড় হয় এপ্রিলে।
তিনি আরও বলেন, গত বছরের এপ্রিলে বজ্রঝড় হয়েছিল সাতটি। ২০২২ এবং ২০২১ সালে হয় যথাক্রমে নয়টি ও আটটি। আর এ বছর মাত্র একটি।
তীব্র তাপ্রবাহ, জলবায়ু পরিবর্তন, বজ্রমেঘ সৃষ্টি না হওয়া-এসব কারণেই এবার বজ্রঝড়ের সংখ্যা কম বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, বজ্রঝড় কমে যাওয়ার এ অবস্থা অস্বাভাবিক।
দেশে মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত বজ্রঝড় হয়। আবহাওয়া অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক সমরেন্দ্র কর্মকারের মতে, সব কালবৈশাখীই বজ্রঝড়। কিন্তু সব বজ্রঝড় কালবৈশাখী নয়। কারণ কী? তিনি বলেন, মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত যেসব বজ্রঝড় হয়, সেগুলো আসলে কালবৈশাখী। উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে আসা বায়ুর কারণে যে ঝড়বৃষ্টি হয়, তাকে ইংরেজিতে নরওয়েস্টার বলে। সেটিই কালবৈশাখী।
এপ্রিলে ঝড় কমছে
এপ্রিল মাসে প্রচণ্ড গরম পড়ে। বজ্রঝড় হয়ে সেই গরম আবার প্রশমিত হয়। এভাবে তাপ ও ঝড়বৃষ্টির মধ্য দিয়ে চলে এ মাস। কিন্তু দিন দিন তাপপ্রবাহ বেড়ে কমছে বজ্রঝড়ের সংখ্যা। আবহাওয়াবিদ মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, সবচেয়ে বেশি ঝড় হয়েছিল ১৯৯৭ সালের এপ্রিলে, ১৪টি। গত বছর (২০২৩) এ মাসে বজ্রঝড় হয়েছিল সাতটি। ২০২২ এবং ২০২১ সালে হয় যথাক্রমে নয়টি ও আটটি; আর এ বছর হয় মাত্র একটি।
দক্ষিণে অস্বাভাবিক ঝড়
চলতি মাসের ৭ তারিখে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের পিরোজপুর, ঝালকাঠি ও বাগেরহাটের বিভিন্ন স্থানে বজ্রঝড় বা কালবৈশাখী বয়ে যায়। দক্ষিণ জনপদে এ সময় ঝড় বেশ অস্বাভাবিক। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, এ সময়ের ঝড় সাধারণত দেশের উত্তর–পশ্চিমাঞ্চল থেকে মধ্যাঞ্চলে শুরু হয়। এবার এর ব্যতিক্রম ঘটল।
এপ্রিলে ঝড় কমছে কেন
এপ্রিল মাসে ঝড় কমে যাওয়ায় অস্বাভাবিক তাপপ্রবাহকেই কারণ মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তনসংক্রান্ত আন্তসরকার প্যানেলের (আইপিসিসি) সঙ্গে যুক্ত।
এছাড়াও তাপমাত্রা বৈশ্বিকভাবে ১ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে। এ বছরের এপ্রিল মাস ভারতে ১২২ বছরের মধ্যে ছিল সবচেয়ে বেশি উষ্ণ। আমাদের যে বায়ুপ্রবাহ, তার সঙ্গে সীমান্তসংলগ্ন ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, বিহার ও ওডিশার সম্পর্ক আছে। এ সময় এসব অঞ্চলে সাগর থেকে আসা জলীয়বাষ্প বজ্রমেঘের সৃষ্টি করে। কিন্তু এবার ভারতের ওই সব অঞ্চলেও প্রচণ্ড গরম পড়েছে। আর্দ্রতাপূর্ণ জলীয় বাষ্প জড়ো হয়ে বজ্রমেঘ সৃষ্টি করেনি। তাতেই এ বিড়ম্বনা। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেই এ অবস্থা দেখছি আমরা, বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
বাংলাদেশের ঝড় নিয়ে ‘ক্লাইমেট ফিচার অব দ্য থান্ডারস্টর্ম ডেজ অ্যান্ড থান্ডারস্টর্ম ফ্রিকোয়েন্সি ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক গবেষণা করেছেন আবহাওয়াবিদ সমরেন্দ্র কর্মকার। তিনি বলেন, জলীয় বাষ্পের সঙ্গে আদ্রতার একটি মেলবন্ধন ঘটে মেঘ সৃষ্টি হয়। সেটি ঘটছে না। তবে কয়েক দিনের অপেক্ষার পর বাংলাদেশে ঝড়বৃষ্টি শুরু হতে পারে বলে মনে করেন এই আবহাওয়াবিদ। আর তখন বজ্রঝড়ের মাত্রা অনেকটা প্রবল হতে পারে বলেও মনে করেন তিনি।
পরিবেশের ওপর প্রভাব
অতি তাপপ্রবাহের ফলে সাগর ও ভূমিতে থাকা জলীয় বাষ্প প্রবল হয়ে উঠতে পারে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা। আর এর কারণে এরপর যখন বৃষ্টি শুরু হবে তার পরিমাণ বেশি হতে পারে। এরই মধ্যে ভারতের আবহাওয়া অফিস বলেছে, এবার স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি মাত্রায় বর্ষা হতে পারে।
গত বছরের সেপ্টেম্বর মাস থেকে প্রশান্ত মহাসাগরীয় বায়ু প্রবাহ এল নিনো সক্রিয় ছিল। আর এর ফলে ২০২৩ সালের মার্চ মাস থেকে চলতি বছরের মার্চ মাস আগের যে কোনো বছরের চেয়ে ছিল উষ্ণ। আর এই তাপের কারণে বজ্রঝড় কম হওয়া দেশের পরিবেশের জন্য হুমকিস্বরূপ বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
বজ্রঝড়ের তাণ্ডবে ঘরবাড়ি ও গাছপালা ভাঙে। ফসলেরও ক্ষতি হয় অনেক সময়। কিন্তু এর ফলে হওয়া বৃষ্টি ফসলের জন্য খুব উপকারীও।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।