লাইফস্টাইল ডেস্ক : মা মারা গেছেন। বোনের বিয়ে হয়েছে। বড় ভাই আলাদা সংসার গড়েছেন। স্ত্রী, একমাত্র মেয়ে এবং বাবাকে নিয়ে সাজানো মিরাজ আফ্রিদির জীবন সংসার।
দুটি হাত ছাড়াই পৃথিবীতে এসেছেন মিরাজ আফ্রিদি। দৈনন্দিন কাজে স্ত্রী ও দুই পা-ই তার একমাত্র ভরসা। তবু দমে যাননি। নিজের প্রচেষ্টায় হয়েছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জনপ্রিয় মুখ।
সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য প্রতিষ্ঠা করেছেন এতিমখানা। পাবনার আটখোরিয়ার আলোচিত এই কন্টেন্ট ক্রিকেটার।
মিরাজ বলেন, মানুষ চাইলে সব করতে পারে। সবসময় ভাবি, আল্লাহ আমাকে হাত দেননি, দুইটা পা তো দিয়েছেন। দুই পা দিয়েই দৈনন্দিন সব কাজের পাশাপাশি ভিডিও তৈরি ও এডিট করি। আমার স্ত্রী এবং কাছের এক ভাই আমাকে সব কাজে সযোগিতা করেন। ছোটবেলায় এলাকার মানুষ আমাকে বলত, তোর হাত নেই; জীবনে তুই কিছুই করতে পারবি না। লেখাপড়া না করে ঢাকায় গিয়ে ফুটপাতে বসে ভিক্ষা কর। অনেক টাকা আয় করতে পারবি। এসব শুনতে ভালো লাগত না। ভাবতাম আমাকে কিছু একটা করতে হবে। মনে মনে প্রতিজ্ঞা করতাম, প্রয়োজনে না খেয়ে থাকব কিন্তু কারো কাছে হাত পাতব না।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিও তৈরির শুরুর দিকের কথা জানিয়ে মিরাজ বলেন, ২০১৭ সালে টিকটকে আমার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। তখন আমার ভাবি বলেছিলেন, তুই কিভাবে প্রতিদিন কাজকর্ম করিস সেইসব ভিডিও বানিয়ে ফেসবুক, ইউটিউবে আপলোড কর। আমার মনে হয়, কিছু একটা হবে। যেই কথা সেই কাজ। আমি ভিডিও বানাতে থাকি। আস্তে আস্তে মানুষ আমাকে ভালোবাসতে শুরু করল। সামাজিক যোগযোগমাধ্যম থেকে উপার্জনেই আমার সংসার চলে। আমি কারো বোঝা হয়ে থাকতে চাই না।
এসএসসি ও এইচএসসির গণ্ডি পেরিয়ে মিরাজ এখন অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। তার জন্য খেলাপড়া চালিয়ে যাওয়া মোটেও সহজ ছিল না।
তিনি বলেন, আমার হাত না থাকায় আট বছর বয়স পর্যন্ত কোনো স্কুলে ভর্তি হতে পারিনি। শিক্ষকরা বলতেন, আমি লিখতে পারব না। আমার বোন আমাকে আস্তে আস্তে পা দিয়ে লিখতে শেখান। এরপর স্যারদের গিয়ে আমি লিখে দেখালে তারা আমাকে স্কুলে ভর্তি করেন। এভাবেই আমার পড়ালেখা চলছে। শিক্ষক ও সহপাঠীরা আমাকে যথেষ্ট সহযোগিতা করেন। সবার প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।
মিরাজ তার আয়ের একটা অংশ দিয়ে গ্রামে এতিমখানা প্রতিষ্ঠা করেছেন। মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৪০ জন। এর মধ্যে ১০-১২ জন এতিম শিশুকে বিনা খরচে থাকা-খাওয়ার পাশাপাশি লেখাপড়ার সুযোগ করে দিয়েছেন। এতিমখানা প্রতিষ্ঠারও একটি ইতিহাস রয়েছে।
মিরাজ বলেন, একদিন আমার এক মামাকে বলি যারা দরিদ্রতার কারণে খেলাপড়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে তাদের জন্য কিছু করা যায় কিনা। মামা তাতে সায় দেন; কিন্তু মাদ্রাসার জন্য জমি কেনা ও ভবন নির্মাণের জন্য পর্যাপ্ত টাকা আমার কাছে ছিল না। এলাকার অনেকের সাথে বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করলে তারা বলেছিলেন, ক্লাব ঘর নির্মাণ করতে চাইলে তারা জমি দেবেন কিন্তু মাদ্রাসার জন্য কেউ জমি দিতে রাজি হননি।
মনটা খারাপ হয়ে যায়। নিরুপায় হয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মাদ্রাসা নির্মাণের জন্য সহায়তা চেয়ে একটি ভিডিও পোস্ট করি। আমার মনে আছে, বিভিন্নজনের কাছ থেকে একদিনে প্রায় আড়াই লাখ টাকা সাহায্য পেয়েছিলাম। এভাবেই আমি এতিমখানাটা গড়ে তুলেছি। আমার স্বপ্ন, এলাকায় বড় একটি মাদ্রাসা নির্মাণ করব।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।