জুমবাংলা ডেস্ক : অনলাইন ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম ইউটিউবে একটি গাড়ির ভিডিও রিল ভাইরাল হয়েছে। বিশ্বখ্যাত রোলস রয়েস ব্র্যান্ডের গাড়িটিতে কোনো রেজিস্ট্রেশন নম্বর নেই। নম্বর প্লেটের জায়গায় দেখা যাচ্ছে গাড়ি পরিবেশক প্রতিষ্ঠানের নাম। বিলাসবহুল ও দামি গাড়িটির মালিক কে, তা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলছে তুমুল আলোচনা। কিন্তু নম্বর প্লেট না থাকায় গাড়ি কার নামে নিবন্ধিত, সে তথ্য পাওয়া সম্ভব নয়নি। খবর আজকের পত্রিকা’র।
আজকের পত্রিকার বিস্তারিত প্রতিবেদন:
দামি গাড়িগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে সচরাচর আমদানি বেশি হয় টয়োটা, মিতসুবিশি ও নিশান। এর বাইরে কোটি টাকার বেশি দামের গাড়ির বাজার মার্সিডিজ বেঞ্জ, বিএমডব্লিউ, অডির মতো ব্র্যান্ডগুলোর দখলে। কয়েক বছর ধরে ঢাকার রাস্তায় মার্সিডিজ, বিএমডব্লিউ ও অডি গাড়ির চলাচল পরিচিত দৃশ্য হয়ে গেছে। রাজধানীর অলিগলিতেও এখন চোখে পড়ে এসব গাড়ি। বিলাসবহুল এসব গাড়ি আমদানির সংখ্যা দুই হাজার ছাড়িয়ে গেছে। তবে রোলস রয়েসের দেখা তেমন মেলে না। ভাইরাল হওয়া রোলস রয়েস গাড়িটির মালিক কে তা জানার চেষ্টা করেছে এই প্রতিবেদক। তবে পরিবেশক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
গত সোমবার একটি ইউটিউব চ্যানেল থেকে ঢাকার বনানীর রাস্তায় চলতে থাকা রোলস রয়েসের ভিডিও রিল হিসেবে আপলোড করা হয়। এটি শুক্রবার পর্যন্ত ১৭ লাখ বার দেখা হয়েছে; মন্তব্য পড়েছে ৪৩৭টি।
ভিডিওতে আপলোডকারী বলেন, তিনি ঢাকায় প্রথম রোলস রয়েস গাড়ি দেখলেন। তিনি বৈদ্যুতিক গাড়িটির ভিডিও ধারণ করেছেন ৩ নভেম্বর। এটি রোলস রয়েস স্পেক্টার মডেল। যুক্তরাষ্ট্রে এই গাড়ির দাম প্রায় ৫ লাখ ডলার। বাংলাদেশে যেটির দাম আসে ৬ কোটি ২৫ লাখ টাকা। এখানে ৫০০ শতাংশ ভ্যাট যুক্ত করলে দাম আসবে ৩৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা। গাড়িটি ২০২৫ সাল থেকে বাংলাদেশে পাওয়া যাবে। হয়তো এটি পরীক্ষামূলকভাবে চলছে। গাড়ির ভেতরের চালকের চেহারায় একটা গর্ব গর্ব ভাব ছিল। এটি এক চার্জে ২৯১ মাইল যাবে। যদিও পরে তিনি ভিডিওর ক্যাপশনে ভ্যাটের তথ্য ৮৯ শতাংশ উল্লেখ করেন।
তাঁর এই রিল আপলোডের পর অনেকেই মন্তব্য করেছেন। একজন লিখেছেন, এটি বাংলাদেশের একটি বড় গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রির মালিকের গাড়ি। আরেকজন দাবি করেছেন, গাড়িটি তিনি বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) মিরপুর কার্যালয়ে দেখেছেন। আরেকজন লিখেছেন, এমন গাড়ি বাংলাদেশে আরও তিনটা রয়েছে। অনেকে ‘মালিক কে’ জানতে চাইছেন, আবার কেউ গাড়ির দাম জানার চেষ্টা করেছেন।
গাড়িটির ছবি ও মডেল অনুসন্ধানের জানা যায়, রোলস রয়েস স্পেক্টার হলো ব্রিটিশ বিলাসবহুল গাড়ি প্রস্তুতকারক রোলস রয়েসের প্রথম সম্পূর্ণ বৈদ্যুতিক গাড়ি। এটি ব্র্যান্ডটির একটি আধুনিক ‘গ্র্যান্ড ট্যুরার’ মডেল, যা বৈদ্যুতিক ড্রাইভ ট্রেনসহ বিলাসিতা ও পারফরম্যান্সের জন্য বিখ্যাত। রোলস রয়েস স্পেক্টার আনুষ্ঠানিকভাবে ২০২২ সালে উন্মুক্ত করা হয়। প্রথম ডেলিভারি শুরু হয় ২০২৩ সালের শেষের দিকে। ইউএস ডলারে গাড়িটির দাম ৪ লাখ ২২ হাজার ৭৫০ ডলার, যা বাংলাদেশি টাকায় দাঁড়ায় ৫ কোটি ৫ লাখ ৪২ হাজার ৪৮৪ টাকা। তবে বৈদ্যুতিক গাড়ি না হলে (চার হাজার সিসির বেশি ধরে) শুল্ক–কর দিতে হতো ৮২৬ দশমিক ৬০ শতাংশ বা প্রায় ৪১ কোটি ৭৪ লাখ টাকা।
২০২৪ সালের এপ্রিলে ঢাকার প্রিয়াঙ্কা ট্রেডিং লিমিটেড চট্টগ্রাম বন্দর থেকে এই একই মডেলের গাড়ি খালাস করে। গাড়িটির আমদানিমূল্য ছিল ২ লাখ ৭০ হাজার ব্রিটিশ পাউন্ড, যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৪ কোটি ১৩ লাখ টাকা। এর শুল্ক, কর এবং অন্যান্য ফি মিলে আমদানি খরচ দাঁড়িয়েছে ৭ কোটি ৮২ লাখ টাকা। বৈদ্যুতিক গাড়ির কারণে শুল্ক-কর কম ছিল, অন্যথায় ৩৪ কোটি টাকার শুল্ক দিতে হতো। তবে ভাইরাল গাড়িটি একই গাড়ি কি না, তা নিশ্চিত হতে পারেনি এই প্রতিবেদক।
গাড়িটির নম্বর প্লেটে কন্টিনেন্টাল মোটরসের নাম দেখে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। গত বুধবার কন্টিনেন্টাল মোটরসে কল দিলে তাঁরা লিখিত প্রশ্ন পাঠানোর কথা জানায়। পরবর্তীকালে প্রশ্ন পাঠানো হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর তেজগাঁও অঞ্চলে কন্টিনেন্টাল মোটরসের শোরুমে সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, ভাইরাল গাড়িটি শোরুমে না থাকলেও মার্সিডিজ, বিএমডব্লিউ ও টেসলার গাড়ি ছিল।
কন্টিনেন্টাল মোটরসের শোরুমে দায়িত্বরত সহকারী ব্যবস্থাপক (সেলস) আব্দুল কাদির অনিক বলেন, এই গাড়িটি এখন তাঁদের শোরুমে নেই। তাদের শোরুমের কাজ চলাতে এখানে বেশি গাড়ি রাখা হচ্ছে না।
ভাইরাল গাড়িটি তাদের কি না এবং এই বিষয়ে তথ্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি তাদের মার্কেটিং বিভাগ থেকে জানানো হবে। তবে তার দেওয়া নম্বরে মার্কেটিং বিভাগের কর্মকর্তা আহনাফের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। মঙ্গলবার রাতে পাঠানো প্রশ্নের উত্তরের জন্য কন্টিনেন্টাল মোটরসের কর্মকর্তা ইশরাত তৃষা সঙ্গে দেখা করলে তিনি বলেন, তাদের মার্কেটিং বিভাগ যদি মনে করে তবেই তথ্য দেবে। এর বাইরে তাদের কিছু করার নেই।
বাংলাদেশে রোলস রয়েস গাড়ি আমদানির প্রথম ঘটনা ২০১৭ সালে ঘটে। উত্তর কোরিয়ার এক কূটনীতিক মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে ৩০ কোটি টাকার একটি গাড়ি আমদানি করেন। এর মধ্যে শুল্ক-কর ছিল ২২ কোটি টাকা। ২০২২ সালে চট্টগ্রামে আরেকটি রোলস রয়েস গাড়ি শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানি করা হলেও শুল্ক গোয়েন্দা সেটি জব্দ করে এবং পরে ৮৫ কোটি টাকা শুল্ক-কর ও জরিমানা আদায় করা হয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।