জুমবাংলা ডেস্ক : থরে থরে লিচুর পসরা সাজিয়ে বসেছেন চাষিরা। আড়তে তোলা এসব লিচু বিক্রির জন্য চলছে হাঁকডাক। এই আড়তে লিচু কিনতে এসেছেন দূরের ব্যাপারিরা। প্রতিদিন ২২ থেকে ২৫ লাখ পিস লিচু সরবরাহ করা হচ্ছে দেশের বিভিন্ন এলাকায়।
নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের বেড়গঙ্গারামপুর কানুমোল্লার বটতলার লিচু আড়তের চিত্র এটি। গত ৮ মার্চ থেকে শুরু হওয়া লিচুর আড়তে প্রতিদিন চলছে এই বেচাবিক্রি। সকাল থেকে গ্রামের বাগানগুলোতে চলছে লিচু সংগ্রহের কাজ। চাষিরা লিচু সংগ্রহ করে দুপুর নাগাদ আড়তে নিয়ে যাচ্ছেন বিক্রির জন্য।
চাষিরা বলছেন, খরার কারণে চলতি মৌসুমে লিচুর গুটি ঝরে পড়েছে। ফেটে নষ্ট হয়েছে অনেক লিচু। তবে ঘনত্ব কম হওয়ায় গাছের লিচু আকারে বড় হয়েছে। কিন্তু বিক্রির ক্ষেত্রে গত বছরের তুলনায় চলতি মৌসুমে লিচুর দাম কম পাচ্ছেন চাষিরা। আকার ভেদে প্রতি হাজার লিচু ৫০০ থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ১৫০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। এতে লোকসান না হলেও খুব বেশি লাভ হচ্ছে না চাষিদের।
স্থানীয়রা জানান, এখানে প্রতিবছরই এই লিচুর আড়ত বসে। চলতি মৌসুমেও এ আড়তে ১৭টি ভাণ্ডার গড়ে উঠেছে। নাজিরপুর ইউনিয়নে প্রায় ৪ হাজার বিঘা জমিতে বিভিন্ন জাতের আগাম লিচুর আবাদ হয়। এসব লিচু গাছ থেকে সংগ্রহ করে কম সময়ে মোকামে পাঠাতে প্রত্যন্ত গ্রামেই ২০০১ সালে গড়ে উঠেছে এই আড়ত।
লিচুর আড়তের ইজারাদার সাখায়াত মোল্লা বলেন, ‘মধুমাস জ্যৈষ্ঠের প্রধান অর্থকারী ফল লিচু। লিচুকে ঘিরে বৈশাখের শেষ সপ্তাহ থেকে জ্যৈষ্ঠ মাসজুড়ে ছাত্র-ছাত্রীসহ নারী-পুরুষ কর্মব্যস্ত হয়ে পড়েন। প্রথম সকাল থেকে গ্রামের বাগানগুলোতে শুরু হয় লিচু সংগ্রহ আর প্রক্রিয়াজাতকরণ।’
তিনি আরও বলেন, ‘এরপর দুপুর নাগাদ এই আড়তে বিক্রির উদ্দেশে লিচুর পসরা সাজানো হয়। দূরের ব্যাপারিরা লিচু কিনে তা বিক্রি করছেন দেশের বিভিন্ন জেলায়। এ আড়ত থেকে প্রতিদিন প্রায় ৪০টির মতো ট্রাকে লিচু নেওয়া হচ্ছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, যশোরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায়।’
আব্দুল্লাহ আলীসহ অন্তত ১০ জন চাষি জানালেন, মৌসুমের শুরুতে খরার কারণে লিচুর গুটি নষ্ট হয়েছে। তবে লিচু আকারে বড় হয়েছে। কিন্তু দাম একটু কম পাচ্ছেন তারা।
চাষি আকবার আলী জানান, তিনি এক একর জমিতে লিচু বাগান করেছেন। সার-কীটনাশক, সেচ এবং শ্রমিকের মজুরি বাবদ প্রতি বিঘায় ২০ থেকে ২২ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। বর্তমান বাজার দর অনুযায়ী গড়ে ১ হাজার ৫০০ টাকা বিক্রি করবেন। এতে তিনি লাভবান হবেন।
বুধবার (১১ মে) লিচুর আড়ত ঘুরে দেখা গেছে, আড়তে থরে থরে সাজানো লাল টস টসে লিচু। এক একটি পসরায় লিচু রয়েছে ৪ থেকে ৫ হাজার পিস। বিক্রি হবে ৬ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকায়। এই লিচুকে ঘিরে কর্ম মুখর মানুষের জটলা। আড়তদার, পাইকার, ক্রেতা-বিক্রেতা ও ফড়িয়াদের হাঁকডাকে মুখর বাজার।
সিলেটের বাদামতলী থেকে আসা ‘মা-বাবা ফল ভাণ্ডার’র প্রতিনিধি রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘১০ বছর ধরে আড়ত থেকে লিচু কিনে আমি সিলেটে বিক্রি করি।’
একই তথ্য জানালেন বগুড়ার মৌসুমি ফল ভাণ্ডার, ঢাকার কাজিপাড়ার মাসিক ফল ভাণ্ডার, যাত্রাবাড়ীর ফলভাণ্ডার। তারা বলেন, ‘ভরা মৌসুমে আমরা লিচু কিনে তা দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করি।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হারুনর রশিদ বলেন, ‘এ বছর গুরুদাসপুর উপজেলায় প্রায় ৪১৫ হেক্টর জমিতে মোজফ্ফর, বোম্বাই ও চায়না-৩ জাতের লিচু চাষ করা হয়েছে। গত বছরের তুলানায় ১২ হেক্টর বেশি চাষ হয়েছে। উপজেলায় চলতি মৌসুমে ৫০০ মেট্রিক টন লিচু উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। এর বাজার মূল্য ৩০ থেকে ৪০ কোটি টাকা।’ সূত্র : ইত্তেফাক।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।