আন্তর্জাতিক ডেস্ক : এই মুহূর্তে অ্যাকুয়ারিয়ামে বা বন্দী অবস্থায় আছে যেসব মাছ, সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বয়স্ক হিসেবে বিবেচনা করা হয় ম্যাথুসেলাহ নামের একটি মাছকে। ধারণা করা হচ্ছে, মাছটির বয়স ১০০ বছর কিংবা তারও বেশি হতে পারে। ৮৫ বছর ধরে একই অ্যাকুয়ারিয়ামে বাস মাছটির।
নতুন একটি পদ্ধতি ব্যবহার করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়ার ৩৩টি লাংফিশের ডিএনএ বিশ্লেষণ করেন গবেষকেরা। উদ্দেশ্য মাছগুলোর বয়স নির্ণয়। এতেই বেরিয়ে আসে ম্যাথুসেলাহ নামের মাছটির বয়স সম্পর্কে নতুন তথ্য। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিজ্ঞান ও প্রকৃতিবিষয়ক সাময়িকী স্মিথসোনিয়ান ম্যাগাজিনের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানা যায়।
১৯৩৮ সালের নভেম্বরে ম্যাথুসেলাহ নামের অস্ট্রেলিয়ান লাংফিশটি একটি জাহাজে করে আনা হয় যুক্তরাষ্ট্রের স্টেইনহার্ট অ্যাকুয়ারিয়ামে। ফিজি ও অস্ট্রেলিয়া থেকে আনা আরও ২৩১টি মাছের সঙ্গে সানফ্রান্সিসকোয় পৌঁছে মাছটি। বাকি সঙ্গীদের থেকে শুধু দীর্ঘ জীবনই পায়নি মাছটি, এখনো দিব্যি সাঁতরে বেড়াচ্ছে ক্যালিফোর্নিয়া একাডেমি অব সায়েন্সের অ্যাকুয়ারিয়ামে।
২০১৭ সালে নিউ ইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে অনানুষ্ঠানিকভাবে অ্যাকোরিয়ামে বাস করা সবচেয়ে বয়স্ক জীবিত মাছের তকমা দেওয়া হয় লাংফিশটিকে। এখন নতুন এক ডিএনএ বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, আগে যা ভাবা হয়েছিল তার চেয়ে বেশি হতে পারে মাছটির বয়স। এ বছরের কোনো এক সময় প্রকাশিতব্য গবেষণাপত্রটিতে অনুমান করা হয়, মাছটি ৯২ বছর ধরে বেঁচে আছে। এমনকি ১০১ বছর পর্যন্ত হতে পারে এর বয়স।
‘আমরা জানি, মেথুসেলাহ আমাদের কাছে ১৯৩০-এর দশকের শেষ দিকে এসেছিল। সে সময় মাছটির বয়স নির্ধারণের কোনো পদ্ধতি ছিল না। তাই তার সত্যিকার বয়স সম্পর্কে বিজ্ঞানভিত্তিক তথ্য পাওয়াটা নিঃসন্দেহে দারুণ উত্তেজনাময়।’ স্টেইনহার্ট অ্যাকুয়ারিয়াম প্রকল্পের কিউরেটর চার্লস ডেলবিক এক বিবৃতিতে বলেন, ‘ম্যাথুসেলাহ তার প্রজাতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দূত। সারা বিশ্বের দর্শকদের জ্ঞান বাড়াতে এবং কৌতূহল জাগাতে সাহায্য করে সে। কিন্তু এর প্রভাব অ্যাকুয়ারিয়ামে অতিথিদের আনন্দ দেওয়াকেও ছাড়িয়ে যায়। এটি বিশ্বের গবেষকদের জীববৈচিত্র্য সম্পর্কে নতুন তথ্য জানাতে এবং কোনো প্রজাতির বেঁচে থাকা এবং সমৃদ্ধ হতে কী প্রয়োজন তা বুঝতে সাহায্য করে।’
বিজ্ঞানীরা যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের আরও ৩২টি লাংফিশের নমুনা সংগ্রহ করেন। এগুলোর মধ্যে আছে ক্যালিফোর্নিয়া একাডেমি অব সায়েন্সের আরও দুটি লাংফিশ। এদের একটির বয়স ৫২, অপরটির ৫৪। বেঁচে থাকা লাংফিশদের একটি ক্যাটালগ তৈরির জন্য এটি করা হয় বলে বিবৃতিতে জানানো হয়। লস অ্যাঞ্জেলেসভিত্তিক সংবাদমাধ্যম এবিসি ৭কে ডেলবিক বলেন, এ তথ্য সংরক্ষণে কাজ করা গবেষকদের সাহায্য করবে।
গভীর সমুদ্রে নতুন বাস্তুসংস্থানের সন্ধান পেলেন বিজ্ঞানীরাগভীর সমুদ্রে নতুন বাস্তুসংস্থানের সন্ধান পেলেন বিজ্ঞানীরা
আগে লাংফিশদের বয়স নির্ণয়ের প্রক্রিয়াটি অনেক জটিল ও আক্রমণাত্মক ছিল। এতে প্রাণীটির ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা ছিল অনেক বেশি। এ জন্য বিজ্ঞানীদের মাছের কানের হাড় পরীক্ষা করতে বা পুরো আঁশ ছাড়িয়ে ফেলতে হতো। এই নতুন পদ্ধতির সাহায্যে গবেষকেরা পাখনার আধ সেন্টিমিটারের কম দৈর্ঘ্য-প্রস্থের একটি ক্ষুদ্র নমুনা সংগ্রহ করেছেন কেবল।
গবেষকেরা ‘মিথাইল গ্রুপ’ নামে পরিচিত প্রাণীর ডিএনএর সঙ্গে লেগে থাকা নির্দিষ্ট অণুগুলোর সন্ধান করেছিলেন। এগুলো বয়সের সঙ্গে বৃদ্ধি পায় বলে বিজ্ঞানভিত্তিক অস্ট্রেলিয়ান সাময়িকী কসমসে লেখেন এলেন ফিডিয়ান। বিভিন্ন বয়সের লাংফিশদের নিয়ে গবেষণা করে, বিশেষ করে পুরানোগুলো, দলটি লাংফিশদের বয়স বাড়ার পদ্ধতি ও প্রজাতিটির দীর্ঘায়ু সম্পর্কে জানতে পারে।
দ্য অস্ট্রেলিয়ান লাংফিশ (নিওসেরাটোডাস ফরসটেরি) কিংবা কুইন্সল্যান্ড লাংফিশ এই মাছেদের ছয়টি প্রজাতির মধ্যে একটি। এই প্রাচীন প্রাণীগুলোকে কখনো কখনো ‘জীবন্ত জীবাশ্ম’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। কারণ প্রায় ৩৮ কোটি বছর আগের জীবাশ্মের রেকর্ডও আছে এই মাছদের। অস্ট্রেলিয়ান লাংফিশের যেকোনো প্রাণীর মধ্যে জানামতে সবচেয়ে বড় জিনোম রয়েছে। কসমস সাময়িকীর বিবেচনায় এটি এমনকি মানুষের চেয়ে প্রায় ১৪ গুণ দীর্ঘ।
আশ্চর্যজনক বিষয় হলো, লাংফিশের ফুলকা ছাড়াও একটি বা দুটি ফুসফুস থাকে। সাধারণত অস্ট্রেলিয়ান লাংফিশ অক্সিজেন পেতে তাদের ফুলকা ব্যবহার করে। কিন্তু যখন জলের গুণমান পরিবর্তন হয় বা যখন শুষ্ক মৌসুমে পানি কমে যায়, তারা এই অতিরিক্ত ফুসফুসের কারণে শ্বাস নিতে ওপরে উঠে আসতে পারে। দূষণ, বিভিন্ন আক্রমণাত্মক প্রজাতি এবং বাঁধের হুমকির কারণে প্রজাতিটিকে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন (আইসিইউএন) লাল তালিকায় বিপন্ন হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
ডাইনোসরদের সঙ্গে ‘হারিয়ে যাওয়া’ প্রাণী এখনো ঘুরে বেড়াচ্ছে সাগরেডাইনোসরদের সঙ্গে ‘হারিয়ে যাওয়া’ প্রাণী এখনো ঘুরে বেড়াচ্ছে সাগরে
‘সে চমৎকার একটি সুখী মাছ’, অ্যাকোয়ারিয়ামের প্রাণীর যত্ন এবং সুস্থতার দায়িত্বে থাকা পরিচালক ব্রেন্ডা মেল্টন ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম টাইমসকে বলেন, ‘সে অনেক দিন ধরেই আছে। স্টেইনহার্ট অ্যাকুয়ারিয়ামকে আমাদের কারও চেয়ে বেশি দেখেছে। আমরা তাকে পেয়ে ভাগ্যবান।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।