সাইফুল ইসলাম, মানিকগঞ্জ : মানিকগঞ্জে ফল বাজারে লাগামহীন হয়ে পড়েছে আমের দর। ব্যবসায়ীদের অতিরিক্ত মুনাফায় অস্বস্তিতে পড়েছেন ভোক্তারা। সাধারণ ক্রেতাদের দাবি ৫০ শতাংশের বেশি লাভে বিক্রি করছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। দাম নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপ নেই বলেও দাবি করেছেন অনেকে।
শুক্রবার (২৮ জুন) ভোর সাড়ে চারটার দিকে মানিকগঞ্জের ভাটবাউর ও জাগীর বন্দর আড়তে গিয়ে দেখা যায়, ফলের দোকানগুলোতে বিভিন্ন ধরনের আম সাজিয়ে রাখা হয়েছে। মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড, দুধবাজার, বেউথা, বান্দুটিয়া, গড়পাড়া, গোলড়াসহ বিভিন্ন বাজার থেকে আসা খুচরা ব্যবসায়ীরা আম কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। আড়তে হাঁড়িভাঙ্গা জাতের আম ৫০ থেকে ৬০ টাকা, আম্রপালি ৭০ থেকে ৮০ টাকা, ফজলি ৪০ থেকে ৫০ টাকা এবং ল্যাংড়া ৭০ থেকে ৮০ টাকা এবং হিমসাগর ৮০ থেকে ৯০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
এরপর বিকেল ৪ টার দিকে বাসস্ট্যান্ড ফল বাজারে গিয়ে দেখা যায়, হাঁড়িভাঙ্গা জাতের আম ৮০ থেকে ১০০ টাকা, আম্রপালি ১২০ থেকে ১৪০ টাকা, ফজলি ৮০ থেকে ১০০ টাকা, ল্যাংড়া ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা এবং হিমসাগর ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা দরে বিক্রি করছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। অর্থাৎ, পাইকারি ও খুচরা বাজারে ৫০ থেকে ৬০ টাকা ব্যবধানে বিক্রি হচ্ছে আম। এতে দেখা যায়, ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ লাভে বিক্রি করছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা।
খুচরা ব্যবসায়ীরা জানান, আড়তের কমিশন, আমের ঘাটতি ও লেবার খরচ, পরিবহন খরচ বাদ দিয়ে খুব বেশি লাভ থাকেনা। তবে ক্রেতারা বলছেন, আড়তের তুলনায় খুচরা বাজারে দামের তফাৎ অনেক বেশি। খুচরা ব্যবসায়ীরা সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে অতিরিক্ত মুনাফা করছে।
ভাটবাউর আড়তের ফল ব্যবসায়ী দেলায়ার হোসেন বলেন, আমার এখানে হাঁড়িভাঙ্গা ৫০ থেকে ৫৫ টাকা, আম্রপালি ৭০ থেকে ৮০ টাকা, ফজলি ৪০ থেকে ৪৫ টাকা দরে বিক্রি করছি। একই আড়তের সোহাগ ফল ফান্ডারের রুপচান মিয়া জানান, হাঁড়িভাঙ্গা জাতের আম ৫০ থেকে ৬০ টাকা, আম্রপালি ৬০ থেকে ৭০ টাকা, ফজলি ৪০ থেকে ৫০ টাকা এবং ল্যাংড়া ৭০ থেকে ৮০ টাকা দরে বিক্রি করছি।
জাগির আড়তের ব্যবসায়ী সাইদুর রহমান বলেন, আমাদের এখানে ল্যাংড়া আম ৮০ থেকে ৯০ টাকা, ফজলি ৪৫ থেকে ৫৫ টাকা, হাঁড়িভাঙ্গা ৫০ থেকে ৭০ টাকা এবং আম্রপালি ৬০ থেকে ৯০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করছি। তবে ৯০ টাকারটা একটু কম বিক্রি হয়। ৬০ থেকে ৭০ টাকারটার চাহিদা বেশি। আরেক ব্যবসায়ী জানান, আমরা ক্যারেটের ওজন থেকে দুই-আড়াই কেজি বাদ দেই। খুচরা ব্যবসায়ীদের ঘাটতি বলতে ক্যারেট ধরে আম কেনার পর সেটা বেশি পাকলে দেড়-দুই কেজি ওজন কমে যায়। কিন্ত খুচরা ব্যবসায়ীরা তো সেটা খরচ ধরেও অনেক বেশি দামে বিক্রি করে।
জাগির আড়তে আলাউদ্দিন নামের এক সাধারণ ক্রেতার সাথে কথা হলে তিনি বলে, আমি আত্মীয় বাড়িতে বেড়াতে যাবো। এজন্য এক ক্যারেট আম নিতে এসেছি। বাসস্ট্যান্ডে যেটা ১২০ টাকা কেজি সেটা এখানে ৬০-৬৫ টাকা কেজি। এজন্য বাসস্ট্যান্ড থেকে না কিনে আড়তে এসেছি।
বাসস্ট্যান্ড ফল বাজারের ব্যবসায়ী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমি ভাটবাউর ও জাগির আড়ৎ থেকে কিনে এনে বিক্রি করি। আম্রপালি ১৩০ টাকা কেজি, ল্যাংড়া ১২০ টাকা করে রাখা যাবে। কথা হয় পাশের আরেক ফল ব্যবসায়ীর সাথে। তিনিও একই ধরনের দাম হাকান। আবুল কালাম নামের ওই খুচরা ব্যবসায়ী বলেন, আম কেনার পর একটু পাকে। তখন দেড়-দুই কেজি ঘাটতি হয়। ঘাটতি, আড়ৎ কমিশন ও অন্যান্য খরচ ধরলে তেমন লাভ হয়না। মো: দুলুাল ও মো: ফারুক উদ্দিন নামের অন্য দুই ফল ব্যবসায়ী জানান, হাঁড়িভাঙ্গা ১০০ টাকা, আম্রপালি ১৪০ টাকা, ফজলি ১২০ টাকা হিমসাগড় ১৪০ টাকা এবং ল্যাংড়া ১৩০ টাকা কেজি রাখা যাবে। কেনা বেশি, তাই আমের দাম তুলনামূলক একটু বেশি।
মনির হোসেন নামের এক ক্রেতা বলেন, শশুড় বাড়ি জন্য কিছু আম কিনতে এসেছি। কিন্ত আম্রপালি ভালোটা ১৪০ এর নিচে দিচ্ছেনা। দামটা অনেক বেশি মনে হচ্ছে। সাধারণ মানুষের কথা ভেবে দাম নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের নিয়মিত নজরদারি প্রয়োজন।
বিষয়টি নিয়ে জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ কার্যালয়ের সহকারি পরিচালক আসাদুজ্জামান রুমেল বলেন, পাইকারি বাজারে প্রতিকেজি আমের দরদামের সাথে খুচরা বাজারের দরদাম যাচাই বাছাই করা হবে। খুচরা ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত মুনাফা করলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।