জুমবাংলা ডেস্ক : এখানো পানিতে টৈ-টুম্বুর হাওর-বাওর। মাছ ধরার পুরো মৌসুম এখন। কিন্তু এই ভরা মৌসুমেও মাছের দেখা মিলছেনা হাওর-বাওর, নদী, বিল, ডোবায়। জেলেরা নিরুপায় হয়ে পরিবর্তন করছেন তাদের আদি পেশা। সুনামগঞ্জের মধ্যনগর হাওর, বিল, নদ-নদী বেষ্টিত উপজেলা। এ সময় এখনকার হাওর, বিল, নদ-নদীতে প্রচুর পরিমাণ মাছ পাওয়া যেত।
বর্তমানে অল্প সংখ্যক মাছ পাওয়া গেলেও বাজারে তার দাম আকাশচুম্বী। ফলে চাহিদা পুরণে বিপাকে পড়েছেন স্বল্প আয়ের মানুষ।
উপজেলার টাঙ্গুয়ার হাওর ছাড়াও আশেপাশে বানচাপড়া হাওর, ঘোড়াডোবা হাওর, লুঙ্গা-তুঙ্গা বিল, হানিয়া-কলমা বিল, রুপেশ্বর বিল, শালদিঘা, লামাখলা দিঘা বিল সহ ছোট বড় ৪৪টি হাওর ও বিল এবং মনাই, সুমেশ্বরী নদী দেশীয় মাছের ভান্ডার হিসেবে পরিচিত ছিল। একসময় এসব হাওর-বিলগুলোর মাছ স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে রপ্তানি হতো। কালের পরিক্রমায় বদলে গেছে সেই চিত্র। মাছ ধরতে গিয়ে চাহিদা অনুযায়ী মাছ না পাওয়ায় জেলেদের মধ্যে চরম হতাশা বিরাজ করছে। এরসাথে অতিরিক্ত দাম দিয়েও মাছের অভাব পূরণ করতে না পারার কষ্টও রয়েছে ভোক্তা সাধারণের মাঝে।
দেশীয় প্রজাতির মাছ যেভাবে কমতে শুরু করেছে তাতে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে ‘মাছের ভান্ডার’ খ্যাত মধ্যনগর উপজেলা সহ সমগ্র হাওরাঞ্চলের মানুষ চরম আমিষ সঙ্কটে পড়বেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। উপজেলার হাওরগুলো বর্ষায় ছয় মাস থাকে পানিতে ভরপুর। এই মিঠা পানির হাওর গুলোর রুই, কালি বাউশ, পাবদা, চিংড়ি, আইড়, বাচা, বোয়াল, মাগুর, শোল, গজার, কালিয়া, বাইম, কাকিয়া, কৈ, চাপিলা মাছ স্বাদের জন্য বিখ্যাত।
দেশীয় প্রজাতির মাছ বিলুপ্তির কারণ জানতে চাইলে অনেকেই জানান, এজন্য জমিতে অতিরিক্ত কীটনাশক প্রয়োগ, কৃত্রিম সারের ব্যবহার, জলাশয় ভরাট হয়ে যাওয়া, পোনা ও মা মাছ নির্বিচারে ধরা, জলাশয়া শুকিয়ে মাছ ধরা এবং এবার মাছের প্রজননের সময় হাওরে পানি না থাকা দায়ী। এতে জেলেদের কপালে দুর্ভোগ নেমে এসেছে। পরিবার পরিজন নিয়ে চরম হতাশায় দিন কাটাচ্ছেন তারা। হাওরাঞ্চালের মানুষের একটি বৃহৎ আয় আসে মৎস্য আহরণ থেকে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, হাওরে মাছ না থাকায় উপজেলার ৪ টি ইউনিয়নের প্রায় ১০ থেকে ১২ হাজার জেলে পরিবার বেকায়দার পড়েছেন। মাছ না পাওয়ায় কর্মহীন জীবন পার করছেন তারা। অনেকেই জীবন-জীবিকার তাগিদে পাড়ি জমাচ্ছেন রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কাউহানী গ্রামের পেশাদার মৎস্যজীবি তারা মিয়া জানান, হাওরে মাছ না থাকার প্রধান কারণ হলো পোনা ও মা মাছ নিধন। এছাড়াও এখন ‘চায়না দুয়ারী’ নামীয় মশারীর মতো জাল ও ‘খনা জালা’ দিয়ে মাছের বংশবিস্তার নিধন করা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, হাওর-বাওরে দেশী প্রজাতির মাছ টিকিয়ে রাখা জরুরী। আমরা একসময় হাওরে মাছ ধরতাম। সে সময় হাওরে প্রচুর পরিমাণ দেশী জাতের মাছ পাওয়া যেত। মাছের প্রজনন মৌসুমে মা ও পোনা মাছ নিধন বন্ধে সরকারের সরাসরি কার্যকরী হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।
খিদিরপুর গ্রামের মো. রুহুল আমীন বলেন, একসময় হাওরে গেলে দিনপ্রতি প্রায় ৩-৪ হাজার টাকার মাছ ধরতাম। বর্তমানে হাওরে মাছ না থাকায় আমাদের পূর্বপুরুষের আদি পেশা ছেড়ে অনেকেই পরিবার-পরিজন নিয়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে গিয়ে দিনমজুরের কাজ করছে। সরকার যদি বিনা সুধে মৎস্যজীবিদের ঋণ সহায়তা দেয় তাহলে শুধু মাছ ধরার উপর নির্ভরশীল না হয়ে এই টাকা দিয়ে গৃহপালিত পশু পালন, হাসঁ-মুরগীর খামারসহ অন্যান্য পেশায় যুক্ত হতে পারবে। এতে হাওরের মাছ ধরার উপর একটু হলেও চাপ কমবে।’
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা (অঃদাঃ) প্রশান্ত দে বলেন, ‘এবছর প্রজননের মৌসুমে বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় মাছের বংশবৃদ্ধি হয়নি। এছাড়াও নাব্যতা সংকটের কারণে নদী, খাল এবং হাওর-বিলে মাছের আবাসস্থল নষ্ট হচ্ছে। সেই সাথে জেলেরা অনেকেই মশারী জাল, চায়না দুয়ারী জাল ব্যবহার করে মা ও পোনা সহ মাছের বংশবিস্তার ধ্বংস করে দিচ্ছে। এছাড়াও নিষিদ্ধ জাল দিয়ে মাছ ধরা বন্ধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনাসহ জেলেদের সচেতনতা মূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। মাছের প্রজনন মৌসুমে জেলের বিকল্প কর্মস্থানের বিষয়টি আমি আমার উদ্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট উপস্থাপন করেছি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।