জুমবাংলা ডেস্ক : মেয়েদের চুলের বেণীর মতো এঁকেবেঁকে চলা যমুনার জলরাশির মধ্যে দ্বীপের মতো যে ছোট্ট একটি নন্দন ভূমি আছে তার খোঁজ কেউ করে না। অনেকে জানেও না সুন্দর একটি চরের কথা। প্রায় ৩৫ বছর আগে চরটি খুঁজে বের করেছিলেন বগুড়ার তৎকালীন জেলা প্রশাসক নুরুজ্জামান ভূঁইয়া। বন বিভাগের সহযোগিতায় গড়ে তুলেছিলেন বনায়নের নিসর্গের ভূমি।
কিছুদিন টিকে থাকার পর কাঠুরিয়ার কুড়ালের কোপে সেই ভূমি থেকে অনেক গাছ উধাও হয়। কিছু টিকে থাকে। বাকি অংশ পরিণত হয় বালুচরে। তারপরও যমুনার বুকে জেগে থাকে চরের পরিচয়ে একটি দ্বীপ ভুমি। যার নাম ধারাবর্ষা। যমুনার স্রোত কখনো অশান্ত হলে ধারাবর্ষার কোনো পরিবর্তন হয় না। মনে হবে বরষার ধারা বহমান। যার সৌন্দর্য্য দেখে কেউ হয়তো নামই দিয়েছে ধারাবর্ষা।
বগুড়া শহর থেকে প্রায় ২১ কিলোমিটার দূরে যমুনা তীরের উপজেলা সারিয়াকান্দি সদর পর্যন্ত পাকা সড়ক। এই উপজেলার ১২ ইউনিয়নের মধ্যে ৯টি চরগ্রাম। তারমধ্যে একটি ধারাবর্ষা। জনবসতি প্রায় ৭ হাজার। তারা কৃষিজীবী। তাদের ছেলেমেয়েরা শিক্ষিত হচ্ছে। সারিয়াকান্দি সদর থেকে প্রায় ১৮ কিলোমিটার পূর্বে চরে পৌঁছাতে হয় নৌকায়। প্রায় তিন যুগ আগে বন বিভাগ চরের উন্নয়নে বনায়নসহ নানা কর্মসূচি গ্রহণ করে।
ধারাবর্ষা চরের পরিচিতি ছড়িয়ে পড়ে। চরের কথা এক কান থেকে চার কান হয়ে পৌঁছে যায় ভ্রমণপিয়াসীদের কাছে। বিভিন্ন সংগঠন ভরা চাঁদের পূর্ণিমা রাতে চরে তাঁবু খাটিয়ে উৎসবের আয়োজন করে। স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) সভাপতি ডা. সামির হোসেন মিশু জানালেন তিনি বাউল শিল্পীদের নিয়ে প্রথম অনুষ্ঠান করেন এই চরে। বিভিন্ন সংগঠন শুকনো মৌসুমে নানা ধরনের আয়োজন করে। ভ্রমণপিয়াসীরা রোমান্টিসিজমের জন্য খুঁজে পায় নিসর্গের এক ভূমি।
শান্ত ¯িœগ্ধ এই চরে ভরা চাঁদের পূর্ণিমার রাতে যমুনায় তাকালে মনে হবে আকাশের চাঁদ নেমে এসেছে ধরণীতে। শান্ত ঢেউয়ের সঙ্গে ধ্রুপদী নাচনে মাতিয়ে তুলেছে ভুবন। এই সময়ে ভ্রমণপিয়াসীদের কেউ সংগীত যন্ত্রে আনন্দের সুর তোলে। কেউ বেহালায় সুর তোলেন। আনন্দ-বেদনা সুখ-দুঃখ নিয়েই ধারাবর্ষা চরে মানুষের জীবনপ্রবাহ বয়ে চলে স্রোতের মতো। মাঝেমধ্যে বাইরে থেকে অতিথি হয়ে আসেন অনেকে।
ধারাবর্ষা চরে গিয়েছিলেন আন্তর্জাতিক একটি সংস্থার কয়েক সদস্য। সারিয়াকান্দি কালিতলা গ্রোয়েন পয়েন্ট থেকে শ্যালো নৌকায় দেড় ঘণ্টায় পৌঁছেন। ধারাবর্ষায় বনায়নে টিকে থাকা গাছের কাছেই খেয়াঘাট। চরের কাছেই পলি পড়ে আরেকটি চর জেগেছে। লোকজন জানাল এই চর ক্ষণস্থায়ী। বর্ষায় নদীর পেটে চলে যায়। তবে মূল ধারাবর্ষা চর জেগে থাকে দ্বীপের মতো।
চরে নেমে ভ্রমণপিয়াসী বাচিক শিল্পী শ্রাবণী সুলতানা বললেন বিদেশের মাটিতে এমন নিসর্গ দেখেছেন। ধারাবর্ষা যেন তেমনই। চরের চিকন বালি মসৃণ ও তুলতুলে। পা রাখতেই দেবে যায়। নিচ থেকে পানি উঠে আসে। চোরাবালির ভয়ে বেশিক্ষণ রাখা যায় না। স্রোতে নামলে সৈকতের কিছুটা অনুভূতি পাওয়া যায়। পার্থক্য সাগর পারের মসৃণ বালি শক্ত। যমুনার বালি খুবই নরম। ধারাবর্ষায় যমুনার জলে নামলে প্রথমে হাঁটু পানি।
তারপর কোমর পানি, তারপর গভীর জল। কেউ এই জলে নেমে জলকেলি খেলে। কেউ গভীর জলে রাবার বোট নিয়ে আনন্দ করে। কয়েকজন বললেন, এই চরকে পর্যটন স্পট বানিয়ে গ্লাইডারে উড়ে যমুনা ঢেউ দেখা যায়।
সারিয়াকান্দি এলাকার তরুণ রফিকুল ইসলাম বললেন, প্রায় ২৮ বছর আগে এই অঞ্চলকে বন্যানিয়ন্ত্রণ ও নদী ভাঙনের থাবা থেকে রক্ষা করতে যমুনার পশ্চিম তীরে বহু কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয় হার্ড পয়েন্ট, রিভেটমেন্ট। লোকজন রিভেটমেন্টের আশপাশে বিনোদনের জায়গা খুঁজে পায়। তরুণদের কাছে পরিচিতি পায় প্রেম যমুনার ঘাট নামে। তরুণরা ধারাবর্ষা চরকেও বিনোদনের স্পট হিসেবে বেছে নেয়।
শীত মৌসুমে পেশাজীবী সংগঠন সাংস্কৃতিক সংগঠন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এই চরে যায়। দিনভর নিসর্গের ধারায় থেকে ফিরে আসে। কোনো কোনো সংগঠন সারিয়াকান্দি হার্ড পয়েন্টে টি বাঁধের কাছে বাটিরচরে সন্ধ্যায় সার্চ লাইটের মতো বিশেষ ধরনের মশাল জ¦ালিয়ে সংগীতের আয়োজন করে।
একজন জনপ্রতিনিধি বলেন চরের ভূমি উর্বর। সব ফসল ফলে। যমুনায় এত সুন্দর একটি চর আছে তা অনেকেরই অজানা। চরের ওপারেই জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ি উপজেলা। ধারাবর্ষা চরগ্রাম চারভাগে বিভক্ত, পূর্ব পশ্চিম উত্তর দক্ষিণ। যমুনার বুকে নিসর্গের প্রাচীন দ্বীপ। পর্যটকদের আকর্ষণ করে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।