বিনোদন ডেস্ক : ভারতীয় বাংলা সিনেমার কিংবদন্তি ও সর্বশ্রেষ্ঠ মহানায়ক হিসেবে বিবেচনা করা হয় উত্তম কুমারকে। আজ তার জন্মদিন। মহানায়ক মারা গেছেন ৪৩ বছর আগে। এখনো তিনি বাঙালির ইমোশন। তিনি এমন একজন ব্যক্তিত্বের মানুষ ছিলেন, যাকে ভালো না বেসে থাকা যায় না।
এই মহানায়কের সঙ্গে সুচিত্রা সেনের জুটি ছিল বাংলা সিনেমার ইতিহাসে সেরা। মূল নায়িকা ছাড়াও সে সময় পার্শ্ব নায়িকা চরিত্রে যারা অভিনয় করতেন, তাদেরও ভালোলাগা, ভালোবাসার মানুষ ছিলেন উত্তম কুমার। তাদেরই একজন সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়।
এই প্রবীণ অভিনেত্রী একসময় উত্তম কুমারের প্রেমে অন্ধ ছিলেন। কী পরিমাণ ভালোবেসেছিলেন তিনি মহানায়ককে? আজ সাবিত্রীর সেই অজানা তথ্যই জানবো।
সংসারের অভাব অনটন সাবিত্রীকে বাধ্য করেছিল ছবিতে অভিনয় করতে। পরে পূর্ববঙ্গের সেই মেয়েটির অপূর্ব অভিনয়েই মুগ্ধ হয়েছিল চলচ্চিত্র মহল। সাবিত্রীর মতো সহজাত, স্বচ্ছন্দ অভিনেত্রী বাংলা ছবির জগতে বিরল। ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রয়াত প্রণব মুখার্জী ২০১৪ সালের ৩১ মার্চ নয়াদিল্লিতে রাষ্ট্রপতি ভবনে একটি বেসামরিক বিনিয়োগ অনুষ্ঠানে সাবিত্রীকে ‘পদ্মশ্রী’ পুরস্কার দিয়েছিলেন।
১৯৩৭ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের কুমিল্লার কামালপুরে জন্মগ্রহণ করেন সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়। শৈশব কেটেছে কামালপুরেই। তার বাবা শশধর চট্টোপাধ্যায় পেশায় রেলের স্টেশনমাস্টার ছিলেন। ১০ ভাইবোনের মধ্যে সাবিত্রী ছিলেন সবার ছোট। দেশভাগের পর তিনি এবং তার আরেক বোন কলকাতায় চলে যান। ছিলেন টালিগঞ্জে এক দিদির বাড়িতে।
কিন্তু তার বাবা শশধর চট্টোপাধ্যায় পর্যাপ্ত টাকা পাঠাতে পারতেন না সেই সময়ে। টাকার অভাবে খুব কষ্টে কাটছিল ১০ বছর বয়সী ছোট্ট মেয়েটার জীবন। এমনকি এও জানা গিয়েছিল যে, ভালো খাবারের জন্য কখনো কখনো আত্মীয়দের বাড়ি চলে যেতেন সাবিত্রী ও তার বোন।
এর পরই শুরু হয় তার অভিনয় জীবন। এক প্রকার খাদ্যাভাব ও ছোটবেলা থেকে সিনেমার প্রতি আকর্ষণই তাকে টেনে নিয়ে যায় অভিনয় জগতে। উত্তম কুমার থেকে শুরু করে বহু বড় বড় তারকার সঙ্গে অভিনয় করেছেন সাবিত্রী। তবে তার অভিনয়ের শুরুটা হয়েছিল নাটক দিয়ে।
সেই সময় ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় তার নতুন নাটক ‘নতুন ইহুদি’র জন্য একজন নতুন মুখ খুঁজছিলেন। ঠিক সেই সময়ে ভানুর পছন্দ হয়ে যায় সাবিত্রীকে। এরপর ‘নতুন ইহুদি’ নামের নাটক দিয়েই শুরু হয় তার অভিনয়ের পথ চলা। পরবর্তীতে ছোটপর্দা থেকে বড়পর্দায় কাজ করতে শুরু করেন তিনি।
‘সহযাত্রী’ ছবি দিয়ে রুপালি পর্দায় হাতেখড়ি হয় সাবিত্রীর। ওই ছবিতে মহানায়ক উত্তম কুমারের সঙ্গে পার্শ্ব নায়িকা চরিত্রে অভিনয় করার সুযোগ পেয়ে যান তিনি। এরপর ‘রাতভোর’, ‘নিশিপদ্ম’, ‘ধন্যি মেয়ে’ ইত্যাদি ছবিতে মহানায়কের পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি।
একসঙ্গে কাজ করতে গিয়ে ধীরে ধীরে মহানায়ক উত্তম কুমারকে ভালোবেসে ফেলেন সাবিত্রী। এ কথা তিনি নিজেই স্বীকার করেছেন। এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘প্রেম খানিকটা ছিল, তবে বেশির ভাগটাই রটনা’। আসলে সেই সময়ে রটে গিয়েছিল যে মহানায়ক উত্তম কুমার সাবিত্রীকে বিয়ে করে বালিগঞ্জে ভাড়া ছিলেন। কিন্তু এটি কাল্পনিক।
এরপর অভিনেত্রী জানান, তার বিয়ে বহুবার ভেঙে দিয়েছিলেন মহানায়ক, কিন্তু কেন তা জানা নেই। তবে কিছুটা পজেসিভনেস তো ছিলই সাবিত্রীর প্রতি উত্তম কুমারের। উত্তম কুমারের সঙ্গে গৌরী চট্টোপাধ্যায়ের কী কারণে সংসার ভেঙে যায় তা স্পষ্ট নয়। সবার মতো সাবিত্রীও কষ্ট পেয়েছিলেন তখন। তার মনে তখন মহানায়কের প্রতি ভালোবাসাটা গাঢ় হচ্ছিল।
তাই তো ১৯৮০ সালে যখন মহানায়ক মারা গেলেন, তখন একেবারেই ভেঙে পড়েছিলেন সাবিত্রী। তখনই বড়পর্দা থেকে সরে আসেন। তবে এ কথা সত্যি যে, সাবিত্রী বিয়ে করেননি। টলিউডে গুঞ্জন, এর কারণ উত্তম কুমারই। বর্তমানে বড়পর্দার পাশাপাশি ছোটপর্দায়ও চুটিয়ে কাজ করছেন বর্ষীয়ান এই অভিনেত্রী।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।