জুমবাংলা ডেস্ক : বিশ্বের এমন কোনো দেশ নেই যে, সেখানকার লোকেরা চা পছন্দ করেন না। আর দেশে দেশে অদ্ভুত সব চা-খোরদের গল্পও কত শত কবি-সাহিত্যিকের লেখায় উঠে এসেছে। আমাদের দেশের শহর কিংবা গ্রামে সকাল-সন্ধ্যা আড্ডায় সব শ্রেণির মানুষের অন্যতম অনুষঙ্গ এই চা। তবে সেই চায়ের নেশা যদি গরুর পেয়ে বসে তাহলে কেমন হয়!
এমনটাই ঘটেছে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার তিতুদহ ইউনিয়নের আড়িয়া গ্রামে। লাল্টু শেখ নামে এক দোকানির একটি গরু তিনমাস বয়স থেকেই নিয়মিত চা-পান করে হতবাক করেছে স্থানীয়দের। নিয়মিত দোকানে এসে চা পান করে গরুটি। দোকানি চা দিতেই দেরি করলেই অসংলগ্ন আচরণে বুঝতে বাকি থাকে না গরুটি চায়ে আসক্ত। এরই মধ্যে গরুটি ‘সেই রকম চা-খোরের’ তকমাও পেয়েছে।
জানা যায়, আড়াই বছর ধরে গরুটি লালন পালন করছেন লাল্টু শেখ। তার আরও গরু থাকলেও জন্মের তিনমাস বয়স থেকেই চায়ের পাশাপাশি পাউরুটি, কলা ও বিস্কুটও খায় ওই গরুটি। এমন আচরণে বিস্মিত এলাকাবাসী। তবে কেউ বিরক্ত হন না, দোকানে দাঁড়িয়ে চা খাওয়ার দৃশ্য উপভোগও করেন অনেকে।
চায়ের দোকান ও গরুর মালিক লাল্টু শেখ বলেন, গরুটি আমার খুব প্রিয়। যখন বাছুর ছিল, তখন থেকেই গরুকে চা-পান করাই। দু’বছরেরও বেশি সময় প্রতিদিন আসর নামাজের পর একদম নিয়ম করে চা খায়। সকালে পালের সঙ্গে মাঠে ঘাস খেতে যায়। কিন্তু বিকেলে যখন ফেরে, তখন অন্য গরুগুলো বাড়িতে ঢুকলেও এটি সোজা দোকানে চলে আসে। চা ভর্তি কেটলি রাখা চুলার পাশে এসে দাঁড়িয়ে থাকে। আমি যতক্ষণ চা না দেই, ততক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে। চা দিতে দেরি করলে হাম্বা হাম্বা করে ডাকে, অন্যরকম অঙ্গভঙ্গি করে।
লাল্টু আরও বলেন, আমার গরুটি এখন নিজেও একটি বাছুরের জন্ম দিয়েছে। এখন প্রতিদিন বিকেলে বাছুর সঙ্গে নিয়েই দোকানে আসে। তবে বাছুরটি চা না খেলেও মা চা খাবেই। মাঝেমধ্যে পাউরুটি, কলা ও বিস্কুটও খায়। মানুষের মতো তার অভ্যাস।
স্থানীয় হাট ব্যবসায়ী ও পার্শ্ববর্তী বেগমপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা শাহিন বলেন, আমি ব্যবসার প্রয়োজনে এ রোড দিয়ে প্রায়ই যাতায়াত করি। লাল্টু ভাইয়ের আমার ভালো সম্পর্ক। মাঝে মধ্যেই দেখি তার দোকানে একটি গরু দাঁড়িয়ে থাকে। গরুটি চা খায়। আমাদের সঙ্গে এ গরুও চা খায়। আমি দেখি আর আশ্চর্য হই। কোথাও এমনটা দেখিনি এমনকি শুনিনি। এটাই মনে হয় বাংলাদেশের একমাত্র চাপ্রেমী গরু।
একই গ্রামের বাসিন্দা কলেজছাত্র শাহরুখ বলেন, আমি প্রতিনিয়ত লাল্টু ভাইয়ের দোকানে চা পান করতে আসি। বিকেল ৪টার দিকে গরুটি দোকানে এসে দাঁড়ায়। অপেক্ষার পর চা না পেলে দোকানিকে বিরক্ত করে। চা দিলে পান করার পর মানুষের মতো শান্তসৃষ্ট হয়ে বাড়ির দিকে চলে যায়। আসলেই বিষয়টি খুব আশ্চর্যের।
লাল্টু শেখের বাবা ইয়াসিন শেখ বলেন, আমি প্রতিদিন গরু চরাতে মাঠে নিয়ে যাই। গরু চরিয়ে বিকেলে বাড়ি আসি। আসার পরে অন্যসব গরু বাড়ির ভেতরে চলে যায়। কিন্তু এ গরুটা বাড়ি না গিয়ে সরাসরি দোকানে চলে যায়। যদি দোকানে আমার ছেলে লাল্টু যদি থাকে ভালো। নাহলে চুলার কাছে গিয়ে ডাকাডাকি করবে। দোকানের খুঁটি ও আশপাশে কেউ থাকলে গুঁতোগুঁতি করবে। এরপর চা বানিয়ে দিলেই সব ঠান্ডা।
লাল্টুর স্ত্রী নেহারন খাতুন বলেন, আমার স্বামীর খুব প্রিয় গরু এটা। গরুটাকে আমরা ঘাসসহ অন্য সব খাবারই দিই। কিন্তু প্রতিদিন নিয়ম করে গরুটিকে চা খাওয়াতে হয়, তা নাহলে প্রচুর অশান্তি করে। এমন চা খাওয়া গরু আমি আর দেখিনি।
চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা. মিহির কান্তি বিশ্বাস বলেন, চা মূলত গরুর খাদ্য নয়। তবে গরুটি প্রায় দেড়-দুই বছর গরম চা পান করে আসছে শুনেছি। এটা গরুটির একটা রোগ বলতে পারেন। যেটা অ্যাবনরমাল টিটানস রোগ বলে। তবে এটা গরুর স্বাস্থ্যগত কোনো সমস্যা করবে না।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।