জুমবাংলা ডেস্ক : রহমত, বরকত ও নাজাতের বার্তা নিয়ে এসেছে পবিত্র মাহে রমজান। এই মাসে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা আল্লাহর দরবারে নিজেকে সপে দেন। সব ধরনের পাপ থেকে বিরত থেকে রহমত অনুসন্ধান করেন বিশ্বের মুসলিমরা।
বিশেষ এই মাসে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ইসলামি নিদর্শন ঐতিহাসিক মসজিদ নিয়ে বিশেষ আয়োজন করেছে সময় সংবাদ। এই আয়োজনে মধ্যযুগেরও আগে থেকে বর্তমান বাংলাদেশ নামে এই স্বাধীন ভূখণ্ডে নির্মিত মসজিদের তথ্য পাঠকদের সামনে তুলে ধরা হচ্ছে।
আজকের আয়োজনে গাজী কালু দরগাবাড়ির পাঞ্জেগানা মসজিদের তথ্য তুলে ধরা হলো।
বরিশালের চরমোনাইয়ের হোগলারচর গ্রামে গাজী কালু দরগাবাড়ির পাঞ্জেগানা মসজিদের অবস্থান। আকার বা ইতিহাসগত দিকের পাশাপাশি মসজিদটি নিয়ে অলৌকিক কিংবদন্তিও প্রচলিত আছে। যার মূল চরিত্র মসজিদটি ঘিরে রাখা বটগাছ বা মসজিদগাছ।
সবচেয়ে ছোট মসজিদ
স্থানীয়দের মতে, কম হলেও ৪ থেকে ৫শ’ বছরের পুরনো মসজিদ এটি। আয়তনে দেশেরতো বটেই, পৃথিবীর অন্য কোথাও এত ছোট মসজিদ নেই বলে দাবি এলাকাবাসীর। এক সঙ্গে ৩ থেকে সর্বোচ্চ ৫ জন ব্যক্তি নামাজ আদায় করতে পারেন এই পাঞ্জেগানা মসজিদে। এর প্রবেশের দরজার উচ্চতা মাত্র সাড়ে ৩ ফুট। দুপাশে রয়েছে ছোট দুটি জানালা। এই মসজিদটিতে একটি গম্বুজও রয়েছে।
স্থানীয়দের মতে, গায়েবিভাবেই এই মসজিদটি স্থাপিত হয়েছে। কেউ কেউ এটিকে আবার একটি কানা মসজিদ বলেও আখ্যায়িত করেন।
স্থানীয় আমিনুল ইসলাম সেলিম বলেন, মসজিদে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় না হলেও যারা মানত করেন, তারা নামাজ পড়েন এখানে। তার দাবি, আমার মনে হয় বিশ্বের ছোট মসজিদ এটি। গিনেস বুকে এ মসজিদের নাম ওঠানোর দাবি জানান তিনি।
গ্রামের আরেক বাসিন্দা হুমায়ূন বিশ্বাস বলেন, মসজিদের ইতিহাস সম্পর্কে কারও তেমন কিছু জানা নেই। আমার দাদা ১০৭ বছর বয়সে মারা গেছেন। তিনিও মসজিদের নির্মাণ সম্পর্কে তেমন কিছু বলতে পারেননি। তবে সবাই সম্মান, ভক্তি ও শ্রদ্ধা করত গায়েবি মসজিদ বলে।
মসজিদ জুড়ে বিশাল গাছ, তারও নানা গল্প
মসজিদটি জড়িয়ে রয়েছে একটি বিশাল গাছ। লতায় জড়ানো গাছটির নাম দেয়া হয়ছে লাহর গাছ। যার পাতার মধ্যেও রয়েছে ভিন্নতা। অদ্ভুত এই গাছের পাতাও বিরল প্রজাতির। গাছটি এমন ভাবে মসজিদটিকে ঘিরে রেখেছে, যাতে বাইরে থেকে মসজিদটির কোনো অংশই বোঝার উপায় নেই। মসজিদ, গাছ, এবং এখানকার পুকুর নিয়ে স্থানীয়দের আছে নানা বিশ্বাস, মতবাদ। কেউই এই মসজিদের উপরে গাছের ডালা ভাঙাতো দূরে থাক, একটি পাতাও ভুলক্রমে নষ্ট করেন না।
গাছ থেকে যে পাতা ঝরে পড়ে, তা পড়েই থাকে। জ্বালানি হিসেবেও কেউ ব্যবহার করেন না। তাদের বিশ্বাস, কেউ যদি এই গাছের ডাল ভাঙেন, কিংবা পাতা ছেঁড়েন তবে তার বিপদ হবেই হবে।
স্থানীয় বাসিন্দা মোতাহার হোসেন চৌধুরী বলেন, পুরোনো দলিলের রেকর্ডপত্রে আব্দুল মজিদ সিকদার ও বন্দে আলী সিকদারের খতিয়ানে ২১ শতাংশ জমি মসজিদের নামে জনসাধারণের ব্যবহার্য উল্লেখ করা রয়েছে। এ ছাড়া স্থানটিকে মসজিদ বাড়ি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এখন পর্যন্ত ধারণা করা হচ্ছে, পর্তুগিজ আমলে মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, মসজিদটি পর্তুগিজ আমলের নিদর্শন। শুধু এটি নয়, পতাং ও নাপিতের হাট নামক দুটি স্থানে এমন ছোট আরও দুটি মসজিদ ছিল। সেগুলো এখন বিলুপ্ত হয়ে গেছে।
যেভাবে যাবেন
বরিশাল শহর থেকে সড়কপথে বেলতলা খেয়াঘাট হয়ে চরমোনাইয়ে চরহোগলা গ্রামে যাবার পথ ৮ কিলোমিটার। এছাড়াও শহরের রুপাতলী হয়ে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ছুয়ে ভোলা সড়ক ঘুরে চরমোনাইয়ের এই গ্রামে সরাসরি যাতায়াত করা যায়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।