জুমবাংলা ডেস্ক : রহমত, বরকত ও নাজাতের বার্তা নিয়ে এসেছে পবিত্র মাস রমজান। এই মাসে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা আল্লাহর দরবারে নিজেকে সঁপে দেন। সব ধরনের পাপ থেকে বিরত থেকে রহমত অনুসন্ধান করেন বিশ্বের মুসলিমরা।
বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ইসলামি নিদর্শন ঐতিহাসিক মসজিদ নিয়ে এই রমজানজুড়েই রয়েছে বিশেষ আয়োজন। এই আয়োজনে মধ্যযুগেরও আগে থেকে বর্তমান বাংলাদেশ নামে স্বাধীন ভূখণ্ডে নির্মিত মসজিদের তথ্য পাঠকদের সামনে তুলে ধরা হচ্ছে।
আজকের আয়োজনে রয়েছে সিরাজগঞ্জের বেলকুচির আল-আমান বাহেলা খাতুন জামে মসজিদ।
ব্যক্তি উদ্যোগে নির্মিত দৃষ্টিনন্দন আল-আমান বাহেলা খাতুন জামে মসজিদ। আধুনিক নির্মাণশৈলীতে গড়ে তোলা মসজিদটি যে কারও দৃষ্টি কাড়বে। মসজিদটি নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছে বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা মার্বেল পাথর, টাইলস ও লাইট। ১ একর জমির ওপর নির্মিত তিন তলা বিশিষ্ট এই মসজিদটি নির্মাণ করতে সময় লেগেছে প্রায় ১২ বছর। মসজিদটিতে পুরুষদের পাশাপাশি নারীদেরও নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। দিনের আলোতে দেখতে যেমন নয়নাভিরাম, তেমনি রাতে রঙবেরঙয়ের আলোকবাতিতে অপরূপ শোভায় আলোকিত হয়ে ওঠে মসজিদটি। আর এই মসজিদটির সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ছুটে আসেন নানা বয়সী মানুষ। ধর্মপ্রাণ মুসুল্লিরা দৃষ্টি নন্দন এই মসজিদে নামাজ আদায় করতে পেরে আত্মতৃপ্ত হন।
দীর্ঘ ৯ বছর ধরে আধুনিক নির্মাণ কৌশল আর দেশ বিদেশের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে নির্মিত হয় দৃষ্টিনন্দন এই মসজিদটি। মসজিদের ভেতর- বাইর ভারত, ইতালি ও তুরস্ক থেকে আনা মার্বেল পাথর ও গ্রানাইড পাথরে মোড়ানো। এছাড়াও চীন থেকে আনা হয়েছে বড় বড় ঝাড়বাতি।
মসজিদের কোষাধ্যক্ষ মো. আনিস রেজা জানান, ২০১২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বেলকুচি উপজেলার ব্যবসায়ী মরহুম মোহাম্মদ আলী সরকার ব্যক্তিগত অর্থায়নে বেলকুচি পৌর ভবনের পাশে এক একর জমির ওপর তার ছেলে আল-আমান ও মা বাহেলা খাতুনের নামে ‘আল-আমান বাহেলা খাতুন জামে মসজিদ’ নির্মাণের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। কিন্তু ২০২০ সালের ২ আগস্ট মসজিদটি উদ্বোধনের আগেই তিনি যান। পরবর্তীকালে মরহুম মোহাম্মদ আলী সরকারের ছেলেরা এই মসজিদটির নির্মাণ কাজ শেষ করেন। পরে এপ্রিল মাসের ২ তারিখে জুমার নামাজের মধ্য দিয়ে উদ্বোধন করা হয়।
শুরু থেকেই প্রতিদিন গড়ে অর্ধশত শ্রমিক কাজ করেছেন এখানে। মসজিদটির মাঝখানে বিশাল আকৃতির গম্বুজের পাশাপাশি ছোট ছোট আরও ৮টি গম্বুজ রয়েছে। দুপাশে রয়েছে ১১০ ফুট উচ্চতার ২টি মিনার। আধুনিক স্থাপত্য শৈলীতে নির্মিত মসজিদের ভেতরে মার্বেল পাথরের পিলার, বিভিন্ন কারুকাজ করা টাইলস, মসজিদের চত্বরে পরিকল্পিতভাবে সবুজ ঘাস ও গাছপালা লাগানো হয়েছে বলে জানান তিনি।
বেলকুচি পৌরসভার মেয়র সাজ্জাদুল হক রেজা বলেন, দৃষ্টিনন্দন অপরূপ এই আল-আমান বাহেলা খাতুন জামে মসজিদটি দেখতে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নানা বয়সের দর্শনার্থী আসেনে। পবিত্র রমজান উপলক্ষে প্রতিদিনই বিভিন্ন জেলা থেকে মানুষ আসছেন এই মসজিদের নামাজ আদায় করতে। মসজিদটিতে পুরুষদের পাশাপাশি নারীদের নামাজ আদায়ের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তাই প্রতিদিন নামাজের সময় হলেই দলে দলে নারীরা আসেন এখানে নামাজ আদায় করতে। মসজিদটি পরিচালনায় রয়েছেন ২ জন ইমাম ও ৬ জন খাদেম।
মসজিদের খাদেম জানান, মুসুল্লিদের জন্য আধুনিক অজু খানা রয়েছে এখানে। মসজিদের প্রধান ফটকের সামনে সিঁড়ির দুপাশে রয়েছে স্বচ্ছ কাচে মোড়ানো অজুর পানি রাখার বড় বড় ২টি পাত্র। স্বয়ংক্রিয়ভাবে ফিল্টার হয়ে সেখানে পানি জমা হয়। আর পানি কমে গেলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পানি পূর্ণ হয়ে যায়।
আর দিনের আলো শেষে যখন রাতে আধার নামে তখন এই মসজিদ চত্বরে এক অন্য রকম আবহের সৃষ্টি হয়। জ্বলে ওঠে রঙবেরঙয়ের আলোকবাতি। বাহারি আলোর বাতিগুলো যেন মসজিদের রাতের সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে দেয়। রাতে নজরকাড়া আলোকবাতিতে আলোকিত হয়ে ওঠে এটি। দেশ বিদেশের ঝাড়বাতিতে মসজিদের ভেতরে ও বাইরে আলোকময় হয়ে যায়। দেয়ালে দেয়ালে লাগালো বিভিন্ন লাইটের আলো শোভা পায় মসজিদের চারপাশ। মসজিদের সৌন্দর্য উপভোগের সঙ্গে সঙ্গে এখানে নামাজ আদায় করতে পেরে প্রশান্তির কথা জানান দর্শনার্থীরা।
৩ তলা বিশিষ্ট আল-আমান বাহেলা খাতুন জামে মসজিদটিতে একসঙ্গে প্রায় ৭ হাজার মানুষের নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে মসজিদ কর্তৃপক্ষ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।