আন্তর্জাতিক ডেস্ক : রীতি মেনে প্রতি বছরই জাপানে সাড়ম্বরে পালিত হয় ‘নেকেড ফেস্টিভ্যাল’ বা ‘উলঙ্গ উৎসব’। ‘নেকেড’ শব্দ থেকেই স্পষ্ট, উলঙ্গ হয়ে উৎসবে সামিল হয় পুরুষেরা। শুনতে অবিশ্বাস্য হলেও বাস্তবে বছরের পর বছর ধরে কার্যত এমনটাই পালিত হয়ে আসছে জাপানে। একেবারে নামমাত্র পোশাকে মন্দিরের সামনে জমায়েত হয় পুরুষেরা। এবার পুরুষদের সঙ্গে এই উৎসবে সামিল হতে পারবে মহিলারাও। বহু আবেদন, অনুরোধের প্রেক্ষিতেই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে ফুমিও কিশিদার সরকার। যা জাপানে নতুন ইতিহাসের সূচনা করল।
‘নেকেড উৎসব’ জাপানে ‘হাদাকা মাৎসূরী’ উৎসব নামে পরিচিত। এটি মূলত ফসল উৎসব। অর্থাৎ ভাল ফসল উৎপাদন ও সমৃদ্ধির জন্য এই উৎসব পালন করে জাপানের ইনাজাওয়ার পুরুষেরা। কনকনে ঠান্ডার মধ্যেই পুরুষেরা প্রায় উলঙ্গ হয়ে, ‘লয়েন’ পোশাক এবং সাদা মোজা পরে সাইদাইজি মন্দিরের সামনে জড়ো হন এবং কয়েক ঘণ্টা মন্দিরের চারপাশে দৌড়াদৌড়ি করেন। তারপর তারা হিমশীতল পানিতে গোসল করে মূল মন্দিরের সামনে গিয়ে দাঁড়ান। এরপর মন্দিরের পুরোহিত মন্ত্রপুত ১০০টি লাঠি জমায়েত হওয়া হাজার-হাজার ভক্তের উদ্দেশে ছুড়ে দেন। তার মধ্য থেকে দুটি ভাগ্যবান লাঠি নিতে হুড়োহুড়ি পড়ে যায় সকলের মধ্যে। বলা ভাল, রীতিমতো সংঘর্ষে লিপ্ত হয় সকলে। বিশ্বাস, ওই ভাগ্যবান লাঠি যার দখলে যাবে, তার গোটা বছরটি ভাল কাটবে। দীর্ঘ লড়াইয়ের পর মন্দিরের তরফে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা হয় এবং ঈশ্বরের আশীর্বাদ নিয়ে প্রত্যেকে বাড়ি ফিরে যায়।
কেবল পুরুষদেরই এই উৎসবে সামিল হওয়ার অধিকার ছিল। মহিলাদেরও এই উৎসবে সামিল হওয়ার অনুমতি দেয়ার জন্য দীর্ঘদিন ধরে আবেদন জানানো হচ্ছিল। সেই আবেদন-অনুরোধ মেনে অবশেষে ৪০ জন মহিলাকে উলঙ্গ উৎসবে সামিল হওয়ার অনুমতি দিল জাপান সরকার। আর সরকারের এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে সঙ্গে ১৬৫০ বছরের ইতিহাস পরিবর্তিত হল। তবে মহিলাদের নেকেড উৎসবে সামিল হওয়ার অনুমতি দিলেও বিশেষ শর্ত আরোপ করেছে জাপান সরকার। নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, মহিলারা সম্পূর্ণ পোশাকে থাকবে এবং ঐতিহ্যবাহী হ্যাপি কোট পরতে হবে। পুরুষদের মতো তারা সংঘর্ষে লিপ্ত হতে পারবে না। কেবল নোয়াইজাসা’ রীতি পালন করবেন। এ রীতি অনুযায়ী মহিলারা শুধু মাঠে কাপড়ে মোড়ানো বাঁশের ঘাস বয়ে নিয়ে যেতে পারবেন।
নির্দিষ্ট সময় মেনে চলতি বছর ২২ ফেব্রুয়ারি উলঙ্গ উৎসব পালিত হবে। প্রায় ১০ হাজার স্থানীয় পুরুষ এই উৎসবে সামিল হবে বলে মনে করছে আয়োজক কমিটি। জাপানের ইতিহাসে পুরুষদের উলঙ্গ উৎসবে মহিলাদের সামিল হওয়ার অনুমতি ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত হলেও আয়োজক কমিটির এক কর্মকর্তা মিৎসুগু কাতায়ামা জানিয়েছেন, অতীতে এই উৎসবে মহিলাদের অংশ নেয়ার উপর কোনও নিষেধাজ্ঞা ছিল না। তারা স্বেচ্ছায় উৎসব থেকে দূরে থাকত।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।