সাইফুল ইসলাম, মানিকগঞ্জ : মানিকগঞ্জের দৌলতপুরে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধের দাবিদে জেলা প্রশাসক (ডিসি) বরাবর লিখিত অভিযোগ দেয়ার পর থেকেই অভিযোগকারীকে হুমকি-ধামকি ও ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় প্রভাবশালী চক্রের বিরুদ্ধে। হুমকিদাতাদের ভয়ে বাড়ি ছাড়া হয়ে বর্তমানে অন্যত্র অবস্থান করছেন সেই অভিযোগকারী।
জানা গেছে, দৌলতপুর উপজেলার রাহাতপুর চরের বাসিন্দা সিদ্দিক মিয়া অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধে গত ৮ জুলাই জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন।
অভিযোগে বলা হয়, সরকারিভাবে যমুনার রাহাতপুর এলাকায় বালু উত্তোলনের ইজারা থাকলেও সংশ্লিষ্ট চক্রটি সেটি না মেনে মুন্সিগান্দি মৌজার অংশে ড্রেজার বসিয়ে বালু তুলছে। প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে দীর্ঘদিন ধরে এই কার্যক্রম চলছে।
জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দেয়ায় অভিযোগকারীকে ফোনে হুমকি দেয়ার একটি অডিও রেকর্ড এই প্রতিবেদকের কাছে এসেছে।
অডিও রেকর্ডে শোনা যায়- মজনু নামের এক ব্যক্তি অভিযোগকারী সিদ্দিককে ফোন দিয়ে বলছেন, এটা নিয়েছে মানিকগঞ্জের প্রিন্স, পবন, শফিক, শিবুু, এরাই এটার মালিক। এদের চিনেন না?
উত্তরে সিদ্দিক বলেন, এদের নাম-ডাক শুনেছি, রাজনীতি করে সেটা জানি। কিন্ত তাদের সামনাসামনি দেখিনি, চিনিও না। আমরা সাধারণ মানুষ, রাজনীতি করিও না, তাই তাদের কখনো দেখিনি।
মজনু বলেন, আপনার বাড়ি দৌলতপুর ধানায়, আমার বাড়িও দৌলতপুর থানায়। প্রিন্স, পবন, শফিক, শিবুুকে চিনেন না? মানিকগঞ্জের মধ্যে যদি কাউকে চিনতে হয় এদের চেনা লাগবে। মানিকগঞ্জে যদি ডন থাকে তাহলে এরাই ডন। আপনি যেহেতু অভিযোগ দিয়েছেন, আপনাকে দরকার, মালিকপক্ষ আপনাকে চাইতেছে, এই হৃদয়বান ভাই কে? যেহেতু অভিযোগ দিয়েছে সে, নায়েব-সার্ভেয়াররা সাথে থেকে তাকে বুঝিয়ে দিয়ে যাক। আপনাকে নিয়ে বসে একটু চা খাবে তারা।
জানা গেছে, যমুনা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে নদীর পার্শ্ববর্তী চরপয়লা গ্রামের অন্তত আড়াইশ পরিবার চরম ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। স্থানীয়দের ভাষ্য, অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে এখন নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছে সাত শতাধিক মানুষের বসতভিটা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিন ভোররাত থেকে দুপুর পর্যন্ত ড্রেজার ও কাটার মেশিন ব্যবহার করে বালু তোলা হচ্ছে। বর্ষা মৌসুমে পানি বৃদ্ধির ফলে এমনিতেই ভাঙন দেখা দিয়েছে। তার ওপর বালু উত্তোলনের ফলে নদীর পাড় আরও দুর্বল হয়ে পড়েছে।
অভিযোগকারী সিদ্দিক মিয়ার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ডিসি অফিসে অভিযোগ দেয়ার পর মজনু নামের এক ব্যক্তি কয়েকজন নেতার নাম বলে আমাকে হুমকি দিয়েছে। তারপর থেকে ভয়ে আমি বাড়ি ছেড়ে অন্য জায়গায় আছি।
এ বিষয়ে মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক ড. মো. মানোয়ার হোসেন মোল্লা বলেন, হুমকি দিয়ে থাকলে এটা ফৌজদারি অপরাধ। এটা নিয়ে থানায় মামলা করতে হবে। আমাদের মোবাইল কোর্ট চলমান রয়েছে। কিন্ত মোবাইল কোর্ট তো স্থায়ী সমাধান না, স্থায়ী সমাধান হচ্ছে- সবাই আইন মেনে চলবে। থানায় মামলা হলে আসামীদের আটক করলে স্থায়ী সমাধান হবে।
তিনি আরো বলেন, আমাদের ওখানে অফিসার একজন। একজন অফিসার দিয়ে তো সব জায়গায় মোবাইল কোর্ট করা যায়না। একা কি দুই-তিন জায়গায় যেতে পারে? থানায় মামলা করলে আসামী ধরে জেলে দিয়ে দিবে। আমাদের ম্যাজিস্ট্রেট ও জনবল সঙ্কট থাকায় মোবাইল কোর্ট চালানো সমস্যা হচ্ছে। আর বেশিরভাগ অফিসার মহিলা, তাদের তো আর রাতে বাইরে পাঠানো যায়না। সঙ্কট কাটলে অভিযানের সংখ্যা বাড়ানো যাবে।
উল্লেখ, এর আগে গত ১০ জুলাই অনলাইন নিউজ পোর্টাল জুমবাংলাসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে যমুনায় অবৈভভাবে বালু উত্তোলন নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়। সেসময় প্রশাসনের পক্ষ থেকে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া বলে জানানো হলেও এখন পর্যন্ত কার্যকর কোন পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি উপজেলা ও জেলা প্রশাসনকে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।