আন্তর্জাতিক ডেস্ক : রাজকুমার হিরানী পরিচালিত বলিউড সিনেমা থ্রি ইডিয়টস-র কথা মনে আছে? সেই সিনেমায় ব্যতিক্রমধর্মী বিজ্ঞানী ফুংসুক ওয়াংরু চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন মিস্টার পারফেকশনিস্ট খ্যাত আমির খান। সিনেমার অংশ হলেও ফুংসুক ওয়াংরু চরিত্রটি কিন্তু সোনম ওয়াংচুক নামের এক ব্যক্তির ওপর ভিত্তি করে চিত্রিত করা হয়েছিল।
পেশায় যন্ত্রপ্রকৌশলী ও উদ্ভাবক সোনম ওয়াংচুক ভারতের তীব্র শীতল এলাকা লাদাখের বাসিন্দা। তিনি বরাবরই জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে সোচ্চার ভূমিকা পালন করে আসছেন। বৃহস্পতিবার (২৬ জানুয়ারি) থেকে লাদাখের প্রকৃতিকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করার দাবি জানিয়ে ৫ দিন ব্যাপী অনশন শুরু করেছেন সোনম ওয়াংচুক।
অনশনের তৃতীয় দিন অর্থাৎ শনিবার সোনম ওয়াংচুক জানান, লাদাখ প্রশাসন তার অনশন বন্ধ করার জন্য জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। এমনকি অনশন বন্ধে জোর করে একটি বন্ডে সই করার জন্যও তাকে চাপ দেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি। এক প্রতিবেদনে এ কথা জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে সোনম ওয়াংচুক সেই বন্ডের একটি অনুলিপিও পোস্ট করেন। বন্ডে সোনম ওয়াংচুককে এক মাসের জন্য কোনো বিবৃতি না দিতে এবং জনসভায় অংশ না নেওয়ার শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়।
এক ভিডিও বিবৃতিতে সোনম ওয়াংচুক বলেন, আমি গৃহবন্দী। আসলে এর চেয়েও খারাপ অবস্থায় আছি। আপনি যদি গৃহবন্দী হন তাহলে নিয়মগুলো সম্পর্কে আপনার পরিষ্কার জ্ঞান আছে এবং আপনি এটি মোকাবেলা করার জন্য আইনের আশ্রয় নিতে পারেন। কিন্তু এ মুহূর্তে আমাদের ইনস্টিটিউট এবং প্রতিষ্ঠানে আমার চলাচল সীমাবদ্ধ রাখা হচ্ছে।
শুরুতে সোনম ওয়াংচুকের খারদুংলায় অনশনে বসার কথা ছিল। সেখানকার তাপমাত্রা মাইনাস ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে সোনম ওয়াংচুকের অভিযোগ, প্রশাসন তাকে খারদুং লা পাসে পৌঁছাতে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করছে।
সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে অবশ্য সিনিয়র লেহ সুপারিনটেনডেন্ট অফ পুলিশ পিডি নিত্য জানান, ওয়াংচুক যখন খারদুং লা পাসের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন, পুলিশ তাকে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু তিনি তা মানেননি। পরে তাকে তার ইনস্টিটিউট হিমালয়ান ইনস্টিটিউট অব অলটারনেটিভ, লাদাখে (এইচআইএএল) আইনানুগ ব্যবস্থায় ফিরিয়ে আনা হয়েছে। আপাতত তাই নিজের ইনস্টিটিউটে বসেই ওয়াংচুকের অনশন চলছে।
সোনম ওয়াংচুকের জন্ম ১৯৬৬ সালে। তিনি এইচআইএএলের পরিচালক ছিলেন। ২০১৮ সালে ম্যাগসাইসাই পুরস্কার পান। লাদাখভিত্তিক এ প্রকৌশলী স্টুডেন্টস এডুকেশনাল অ্যান্ড কালচারাল মুভমেন্ট অব লাদাখ (এসইসিএমওএল) নামে একটি স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা। উদ্ভাবনমূলক এ স্কুল সৌরশক্তিতে পরিচালিত হয়। রান্না করা, আলো জ্বালানো কিংবা কক্ষ উষ্ণ রাখতে জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার করা হয়নি।
১৯৮৮ সালে এসইসিএমওএল গঠন করেন সোনম ওয়াংচুক। উদ্দেশ্য ছিল লাদাখি শিশু ও তরুণদের সহযোগিতা করা। প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থায় যেসব শিক্ষার্থীকে অকৃতকার্য বলে বিবেচনা করা হয়, তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজটিও করে এ স্কুল।
সরকারি স্কুলব্যবস্থায় সংস্কার আনতে ১৯৯৪ সালে ওয়াংচুক অপারেশন নিউ হোপ নামের কর্মসূচি শুরু করেন। লাদাখে ঠান্ডা আবহাওয়ার মধ্যে সহনীয় তাপমাত্রা বজায় রাখতে তিনি মাটি দিয়ে বিশেষ একধরনের ভবন নির্মাণে পারদর্শী। এ ধরনের ঘরে কম খরচে সৌরতাপ ব্যবহার করে ঘর উষ্ণ রাখা যায়।
পার্বত্য অঞ্চলে পানিসংকট সমাধানের ক্ষেত্রে আইস স্টুপা নামের আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগও নিয়েছেন ওয়াংচুক। ২০২১ সালে ওয়াংচুক সৌরতাপে পরিচালিত পরিবেশবান্ধব একটি তাঁবু তৈরি করেছেন। লাদাখ অঞ্চলের সিয়াচেন ও গালওয়ান উপত্যকার মতো অত্যন্ত শীতল এলাকাগুলোয় সেনাসদস্যরা এ তাঁবু ব্যবহার করতে পারেন। ২০২২ সালের নভেম্বরে পাওলোস মার গ্রেগরিয়াস পুরস্কার পান ওয়াংচুক।
কারগিল যুদ্ধসহ আরও কয়েকটি সংঘাতের ঘটনায় সামরিকভাবে লাদাখ খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থান। গত ২৩ জানুয়ারি লাদাখের মানুষের জন্য সহায়তা চেয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে আবেদন জানিয়েছিলেন ওয়াংচুক।
লাদাখে অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং এটিকে সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে পরিণত করতে ষষ্ঠ তফসিল বাস্তবায়নের দাবি জানিয়ে আসছেন স্থানীয় লোকজন। কোনো এলাকায় ষষ্ঠ তফসিল বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ওই এলাকায় ৫০% ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর বসবাস থাকতে হয়। লাদাখে ৯৫% মানুষই ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত।
সন্তানদের জিম্মা পেলেন জাপানি নারী, বাবাকে নিয়ে যা বললেন দুই মেয়ে
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।