বিনোদন ডেস্ক : বাবা-মায়ের উৎসাহে ছোটবেলা থেকেই বিনোদন অঙ্গনে নাম লেখান রেজমিন সেতু। শোবিজে যাত্রা শুরু করেন নৃত্যশিল্পী হিসেবে। ছোট্ট সেতু তখন থেকেই স্বপ্ন দেখতেন বড় পর্দার শিল্পী হবেন। তবে ছোট্ট মেয়েকে আগে পাড়ি দিতে হবে শিশুশিল্পীর পথ। কিন্তু টাঙ্গাইলের তিরঞ্জ গ্রামে বসে তা অনেকটাই সম্ভব ছিল না। তাই অভিনয়ের স্বপ্ন নিয়ে ২০১২ সালে ঢাকায় আসেন তরুণ এই অভিনেত্রী। এরপরের গল্পটা রেজমিন সেতু নিজেই তুলে ধরলেন দৈনিক আমাদের সময়’র কাছে।
তার ভাষ্য, ‘‘ছোটবেলায় কাজের উৎসহ আমার বাবা-মা’ই বেশি দিতেন। আমরা দুই বোন, এর মধ্যে আমি বড়। ছোটবেলায় নাচের সঙ্গে যখন যুক্ত হলাম, গ্রামের অনেকেই বিষয়টি ভালোভাবে দেখতেন না। কিন্তু বাবা-মা কখনও হাল ছাড়েননি। তারা আমাকে সব ধরনের সহযোগিতা করতেন। সর্বক্ষণ মা আমার পাশে ছিলেন এবং এখনও আছেন। আমাদের থেকে বেশি স্বপ্ন আমার বাবা-মা দেখতেন; তাদের মেয়ে একদিন সিনেমার পর্দায় সুনামের সঙ্গে এগিয়ে যাবেন।’
অভিনয়ের হাতেখড়ি হয় কীভাবে?
আমার এক দূর সম্পর্কের মামা নাট্যাঙ্গনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তার একটি নাট্যদল আছে মোহাম্মদপুরের টোকাই নামে। সেটা ২০১২ সালের কথা। ঢাকায় এসে সেই নাট্যদলের সঙ্গে যুক্ত হই। এরপর এই নাট্যদলের হয়ে বেশ কিছু মঞ্চ নাটকে কাজ করেছি। সেখানে কাজ করা অবস্থায় প্রথম নাটকের অভিনয় করার প্রস্তাব পাই। ‘ঢাকা অ্যাটাক’খ্যাত নির্মাতা দীপংকর দীপনের মুক্তিযুদ্ধের একটি স্কুল নাটকে প্রথম অভিনয় করি। তখন নাটকে ছোট একটি চরিত্রে অভিনয় করেছি। তখন আমি ক্লাস সেভেনে পড়ি।
তারপর…
এখন আমি অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে সমাজকর্ম বিভাগে পড়ি, থাকি মোহাম্মদপুরেই। শিশুশিল্পী হিসেবে পথচলা ছোট চরিত্র দিয়ে নাটকে অভিনয় শুরু। এরপর কাজ করেছি বেশ কিছু নাটক ও বিজ্ঞাপনে। এখন আর ছোট চরিত্র না, বড় হয়েছি তাই বড় চরিত্রেই কাজ করছি। এখনও হাতে অনেকগুলো নাটকের কাজ হাতে আছে। গত ঈদে বিভিন্ন টিভিতে শামীম জামানের ‘রতনে রতন চিনে’, ইয়ামিন ইলানের ‘ছাড় না দেওয়ার গল্প ২’, ফজলুল সেলিমের ‘গোল্ডেন বয়’, ‘সিরিয়াস প্রেমিক’ ও ‘পাত্রী নাম্বার ১০১’, লুৎফর হাসানের ‘যে প্রেম স্বর্গ থেকে আসে’ ও ‘ডার্ক লাভ’, সকাল আহমেদের ‘সরকার অ্যান্ড সনস’ ধারাবাহিক নাটক প্রচার হয়েছে। এছাড়াও বেশ কিছু বিজ্ঞাপনে কাজ করেছি।
আপনার পছন্দের তালিকায় কোন কাজটি এগিয়ে আছে?
আমার এখন পর্যন্ত সবচেয়ে পছন্দের কাজ হচ্ছে ইয়ামিন এলানের ‘সাইরেন’। ওনার সঙ্গে এটাই আমার প্রথম কাজ আর প্রথম কাজেই বেশ ভালো প্রশংসা পেয়েছি। যা নিয়ে কলকাতার পাঠশালা ইনস্টিটিউটেও কাজটি দেখানো হয়েছে। সেখানের দর্শকও কাজটির দারুণ প্রশংসা করেছে। এই কাজটি আমাকে এক দাপ এগিয়ে নিয়ে গেছে। এ ধরনের কাজ আরও করার ইচ্ছে আছে।
এক দাপ এগিয়ে নিয়েছে বলেই কী কাজটি পছন্দের তালিকায়?
হ্যাঁ, এটা একটা কারণ আর একটি কারণ হলো- এখানে তুলে ধরার মতো ভালো একটি সুযোগ ছিল। তাই নিজের কাজটি সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তুলতে পেরেছি।
নাটকের পথ পাড়ি দিয়ে এখন তো সিনেমাতেও নাম লেখালেন। আপনার বাবা-মা ও আপনার স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে। কেমন লাগছে?
অবশ্যই ভালো। তবে মন খারাপের কারণ আমার আব্বু এই কাজটি দেখার আগেই না ফেরার দেশে পাড়ি দিয়েছেন। সোলায়মান আলী লেবু ভাইয়ের ‘প্রেম প্রীতির বন্ধন’ সিনেমার প্রস্তাবটা আমার কাছে হুট করেই আসে। বিষয়টি নিয়ে আমার আম্মুর সঙ্গে কথা বলি। এরপর আর সময় নেইনি বলা যায়, গল্পটি ও চরিত্র দেখে তিনদিনের মধ্যেই রাজি হয়ে যাই। সিনেমায় আমি চিত্রনায়ক আশিক চৌধুরীর বিপরীতে অভিনয় করেছি। এখন অপেক্ষায় আছি বড় পর্দায় নিজেকে দেখার।
শোবিজে না আসলে কী করতেন?
তখন সরকারি চাকুরি করতাম। আমার বাবা গ্রামের মেম্বার ছিলেন। তিনি প্রায়ই বলতেন, ‘নাচ বা অভিনয়ে কিছু না হলে, তোকে সরকারি চাকরি দেবো।’ আমার মায়ের চাওয়াও ছিল তাই।
নাচ ও অভিনয়ের বাইরে আর কী পারেন?
কিছুই না। নাচ আর অভিনয়ই করতে পারি। অন্য কিছু করার সুযোগও হয়ে উঠেনি। আর আম্মুও পড়াশোনা আর অভিনয়ের বাইরে অন্য কিছু করার সুযোগ দেয় না। আমাকে রান্নাবান্না করার সুযোগও দেয় না।
তাহলে বিয়ের পর তো বেশ ঝামেলায় পড়বেন মনে হয়…
ঠেলায় পড়লে বাঘও ঘাস খায়। তখন যা যা প্রয়োজন সব শিখে নেবো। আর নিজের সঙ্গীর সঙ্গে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করে সমস্যগুলো দুর করব। বিশ্বাস করি, আমার সঙ্গী সে সুযোগগুলো দেবে।
আগামীর ভাবনা কী?
ভালো ভালো আরও অনেক কাজ করতে চাই। মানুষের ভালোবাসা ও ভালো কাজ দিয়ে সারাজীবন বেঁচে থাকতে চাই। সূত্র : দৈনিক আমাদের সময়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।