আন্তর্জাতিক ডেস্ক : “ভারত প্রস্তাব দিয়েছে। যেহেতু যৌথ নদী, সেটি আমাদেরকেতো প্রথমে সেই প্রস্তাবটা বিবেচনা করতে হবে, স্বাভাবিকভাবেই,” বলেন হাছান মাহমুদ।
তিস্তা মহাপরিকল্পনায় চীন অর্থায়নের প্রস্তাব দিয়ে রাখলেও বাংলাদেশ এখন ভারতের প্রস্তাব নিয়েই ভাবছে বলে ইংগিত মিলেছে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের কথায়।
তিনি বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেইজিং সফরের সময় ‘চীন চাইলে’ তবেই তিস্তা প্রকল্প নিয়ে আলোচনা হতে পারে।
সরকারপ্রধানের চীন সফরের বিস্তারিত জানাতে রোববার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে আসেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। সেখানেই তিস্তা প্রসঙ্গ আসে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “তিস্তা নদী দুই দেশের যৌথ নদী, ভারত বাংলাদেশের যৌথ নদী। এই যৌথ নদীরব্যবস্থাপনা নিয়ে ভারত একটি প্রস্তাব দিয়েছে এবং একইসাথে ভারত একটি কারিগরি দল পাঠাবে বলে আমাদেরকেজানিয়েছে। সমীক্ষার ব্যাপার আছে।
“ভারত প্রস্তাব দিয়েছে। যেহেতু যৌথ নদী, আমাদেরতো প্রথমে সেই প্রস্তাবটা বিবেচনা করতে হবে, স্বাভাবিকভাবেই। চীনও এক্ষেত্রে প্রস্তাব দিয়েছে, সেটি খুব ভালো। যেহেতু ভারত প্রস্তাব দিয়েছে এটি ভালো দিক।”
২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরের আগে দুই দেশের পানি সম্পদ মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তির বিষয়ে দুই পক্ষ একমত হয়েছিল।
মনমোহন সিংয়ের সফরেই বহু প্রতীক্ষিত তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি হওয়ার কথা থাকলেও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরোধিতায় তা আটকে যায়।
নরেন্দ্র মোদীর বিজেপি সরকার ভারতের ক্ষমতায় আসার পর তিস্তা চুক্তি নিয়ে আশার কথা শোনা গেলেও মমতার মত বদলায়নি।
ভারতের সঙ্গে তিস্তা নদীর পানিবণ্টন চুক্তি আটকে থাকার মধ্যে ‘তিস্তা রিভার কমপ্রিহেনসিভ ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড রেস্টোরেশন প্রজেক্ট’ শীর্ষক এ প্রকল্প হাতে নেয় সরকার।
২০১৯ সালের জুলাইয়ে বেইজিং সফরে এটিসহ আরো কয়েকটি প্রকল্পে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীন সরকারের সহায়তা চেয়েছেন বলে গণমাধ্যমে খবর আসে।
তিস্তা প্রকল্পে নদীটির উপকূল ব্যবস্থাপনায় অবকাঠামো নির্মাণ ছাড়াও বন্যা নিয়ন্ত্রণ এবং গ্রীষ্মকালে পানি সংকট দূর করতে বিভিন্ন ধরনের অবকাঠামো গড়ে তোলা হবে বলে সেসময় এক প্রতিবেদনে জানিয়েছিল বিবিসি।
এ প্রকল্পে চীনা কোম্পানিকে কাজ দেওয়ার বিষয়ে ঢাকাকে নয়া দিল্লির উদ্বেগ জানানোর মধ্যেই বেইজিং প্রায় ১০০ কোটি ডলারের আনুষ্ঠানিক প্রকল্প প্রস্তাব জমা দেয়। শেখ হাসিনার আসন্ন চীন সফরে ওই প্রস্তাব নিয়েই আলোচনা হবে বলে কিছুদিন আগেও বলা হচ্ছিল।
এর মধ্যেই গত মে মাসে ঢাকা সফরে এসে তিস্তা প্রকল্পে অর্থায়নে ভারতের আগ্রহের কথা জানান দেশটির পররাষ্ট্র সচিব বিনয় কোয়াত্রা। জুন মাসে প্রধানমন্ত্রীর দিল্লি সফরেও তিস্তা প্রকল্প এবং গঙ্গা চুক্তির নবায়ন নিয়ে আলোচনা হয়।
২২ জুন শেখ হাসিনার সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেন, তার সরকার ১৯৯৬ সালের গঙ্গা পানি বণ্টন চুক্তি নবায়নের বিষয়ে কারিগরি পর্যায়ের আলোচনা শুরুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আর তিস্তা নদীর সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার বিষয়ে আলোচনার জন্য ভারতের একটি কারিগরি দল শিগগিরই বাংলাদেশ সফর করবে।
বাংলাদেশ অংশে তিস্তা নদীর সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার মহাপরিকল্পনায় চীনের অর্থায়ন যখন চূড়ান্ত হওয়ার অপেক্ষায়, ঠিক তার আগে ভারত সরকারের এই আগ্রহে তিস্তার হাওয়া পাল্টে যায়।
ভারত সফর থেকে ফিরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, তিস্তা নিয়ে যাদের প্রস্তাব বেশি লাভজনক হবে, সেটাই বাংলাদেশ গ্রহণ করবে।
তবে তিনি এও বলেন, “ভারত যদি আমাদের তিস্তা প্রজেক্টটা করে দেয়, তাহলে আমাদের সব সমস্যারই তো সমাধান হয়ে গেল। তো সেটাই আমার জন্য সহজ হল না?”
এরপর গত ৪ জুলাই চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন ঢাকায় সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মত বিনিময় অনুষ্ঠানে বলেন, তিস্তা প্রকল্প নিয়ে বাংলাদেশের যে কোনো সিদ্ধান্তে চীন ‘খোলা মন নিয়ে’ কাজ করবে।
“যেমনটা আমি আগে বলেছি, যে সিদ্ধান্তই নেওয়া হবে, সেটাই আমাদের সবার স্বার্থে, আমরা চাই এ প্রকল্পটি দ্রুত শুরু হোক। যেহেতু বাংলাদেশের প্রায় তিন কোটি মানুষের জন্য প্রয়োজন এই প্রকল্প, সুতরাং আমরা চাই প্রকল্পটি দ্রুত শুরু এবং শেষ হোক।”
আর যা যা আলোচনায়
চীনের প্রধানমন্ত্রী লি চিয়াংয়ের আমন্ত্রণে সোমবার চারদিনের সরকারি সফরে বেইজিংয়ের উদ্দেশ্যে রওনা হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
৮ থেকে ১১ জুলাই এ সফরকালে প্রধানমন্ত্রী চীনের প্রেসিডেন্ট, প্রিমিয়ার অব দ্য স্টেট কাউন্সিল, সিপিপিসিসি’রজাতীয় কমিটির চেয়ারম্যান এবং এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের প্রেসিডেন্টের সাথে সাক্ষাত করবেন। পাশাপাশি ২০ থেকে ২২টি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরের সম্ভাবনা রয়েছে; আলোচনা হবে কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্প নিয়েও।
চীন থেকে বাজেট সহায়তা নেওয়া হবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “বাজেট সহায়তা নয় বরং চীনেরসাথে ব্যবসা ও অর্থনৈতিক খাতে পাঁচ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ সহযোগিতার প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা চলছে।”
চীনকে বাংলাদেশ অফশোর ব্যাংকিংয়ের প্রস্তাব দেবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, “অফশোর ব্যাংকিংইজ ওপেন ফর অল। যে কোনো দেশ যদি চায়, আমাদের সেন্ট্রাল ব্যাংকে চাইলে টাকা রাখতে পারে। যেমন যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল ব্যাংকে অনেক দেশ টাকা রাখতে পারে। তবে অফশোর ব্যাংকিং কিছুটা ভিন্ন বিষয়।”
মোংলা বন্দর উন্নয়নের বিষয়ে চীনের সাথে সমঝোতা হয়েছিল, ওই প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব চীনকে দেওয়া হবে কিনা, সেই প্রশ্নও রাখা হয় হাছান মাহমুদের সামনে।
জবাবে মন্ত্রী বলেন, “মোংলা বন্দর উন্নয়নের বিষয়ে চীনের সাথে আমরা আলাপ-আলোচনার মধ্যে আছি। এই সফরে আশা করছি বিষয়টা নিয়ে আলোচনা হবে।”
প্রতি মুহূর্তে রোমান্সের দৃশ্য, সাহসী দৃশ্যে ভরপুর এই ওয়েব সিরিজ
দুই দেশের বাণিজ্য ভারসাম্য নিয়ে প্রশ্নে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “চীনের সাথে আমাদের বাণিজ্য সম্পর্ক রয়েছে। দেশটি থেকে আমরা আমদানি করছি বেশি, রপ্তানি কম হয়। আমাদের পণ্য রপ্তানি বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।