বিনোদন ডেস্ক : মায়ের হাত ধরেই তার সংগীতে যাত্রা। গান করেন ছোটবেলা থেকেই। ছায়ানট ও সম্মেলন পরিষদ থেকে শাস্ত্রীয়, লোক এবং আধুনিক সংগীত শিখেছেন। পুরস্কারও পেয়েছেন বেশ কিছু।
করেছেন টেলিভিশন অনুষ্ঠান উপস্থাপনাও। তিনি সংগীতশিল্পী সিঁথি সাহা। তবে এসব কিছু ছাপিয়ে এই সময়ে তার কাছে জীবনের পরম পাওয়া মা হওয়া। গত সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝিতে মা হয়েছেন এই গায়িকা।
অন্য সবার চেয়ে তার মা হওয়ার গল্পটা একটু আলাদা।
অনেকেই অবশ্য এরই মধ্যে জেনে গেছেন ক্যান্সার আক্রান্ত হয়েছিলেন এই গায়িকা। এই ক্যান্সারের খবর শোনার পরই আসলে সিদ্ধান্ত নেন মা হবেন তিনি। হয়েছেনও।
কিন্তু মা হতে যাওয়ার সময়টাতে ছিলেন বাঁচা-মরার সন্ধিক্ষণে। সেই ভয়কে জয় করে সিঁথি সাহা জন্ম দিয়েছেন এক ফুটফুটে কন্যার। নাম রেখেছেন সামারা জয়ী। আসলে হয়তো সিঁথিই জয়ী হয়েছেন। তবে সন্তান জন্ম দেওয়ার আগ অবধি গল্পটা মোটেও সুখের ছিল না।
জয়েরও না।
সে প্রসঙ্গে যাওয়ার আগে জেনে নেওয়া যেতে পারে গান, উপস্থাপনা আর করপোরেট জব মিলিয়ে দারুণ সময় কাটছিল সিঁথির। পাকিস্তানের শাফকাত আমানত আলীর সাথে যেমন গান বেরিয়েছে সিঁথির, তেমনি তার গানে মডেল হয়েছেন পশ্চিবঙ্গের জনপ্রিয় অভিনেতা আবির চট্টোপাধ্যায়। আবার দক্ষিণ ভারতীয় সিনেমা ‘পুষ্পা: দ্য রাইজ’-এর উন্মাদনার মাঝে ছবিটির ‘সামি’ গানটির বাংলা ভার্সন গেয়ে আলোচনায় আসেন সিঁথি। এসব সফলতা উদযাপন করতে করতে যখন নতুন পরিকল্পনা সাজাচ্ছিলেন সিঁথি তখনই জানতে পারেন সেই বিষাদের খবর। ক্যান্সার বাসা বেঁধেছে তার শরীরে। ব্রেস্ট ক্যান্সারের মতো ভয়ংকর এক ব্যাধি নীরবে এই আনন্দযজ্ঞের মধ্যেই তাকে আপন করে নিয়েছে।
পরিবারের কাউকেই জানাননি সে খবর। অথচ তার সামাজিক মাধ্যমের আইডিতে চোখ রাখলে বোঝা যায়, সারাক্ষণ পারিবারিক আবহে থাকা তার অন্যতম কাজ। সেই সময়ের স্মৃতি স্মরণ করলেন সুদূর নিউজিল্যান্ড থেকে। বৈবাহিক সূত্রে সেখানেই তার অবস্থান। অবশ্য বেশ কয়েক বছর ধরে দেশেই ছিলেন তিনি। কিন্তু সম্প্রতি সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মাস কয়েক ধরে সেখানেই অবস্থান করছেন সিঁথি সাহা। তাই ক্যান্সারের শুরুর দিন থেকে সন্তানের জন্ম―সব গল্পই শোনার ভরসা ফেসবুক মেসেঞ্জার।
সিঁথি বলেন, ‘২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে জানতে পারি আমি ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত। পরিবারের কাউকে সে খবরটা দিই না। কারণ আমার বাবা-মা আর ছোট ভাই জানতে পারলে আমার চেয়ে বেশি কষ্ট পাবে। তাই খোঁজখবর নেওয়া শুরু করি কোথায় ভালো চিকিৎসা সম্ভব। সেসব জেনে একা একাই চিকিৎসা করাতে যাই সিঙ্গাপুর। সেখানকার ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি হাসপাতালের ডাক্তারের চেষ্টায় টিউমারটা অপসারণ করা হয়। তারপর চলে রেডিও থেরাপি। টানা ১০টা রেডিও থেরাপি নিতে হয় আমাকে। ওই সময়টা আমার জন্য খুব ভয়ংকর সময়। একা একটা অচেনা শহরে থাকি। ডাক্তারের কাছে যাই। থেরাপি নিয়ে ফিরি। নিজের যত্ন, দেখভাল সব নিজেকেই করতে হয়। পৃথিবীর ডিপ্রেশন ঘিরে ধরে আমাকে। এর মধ্যে বাঁচার আশা নিয়ে প্রতিটি দিন পার করি। তখনই ডাক্তাররা জানান থেরাপি শেষ হওয়ার দুই মাস পর থেকে টানা পাঁচ বছর ওষুধ খেতে হবে।’
ওষুধ খেতে হবে জানার পরপরই জানতে পারেন এটার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও। সিঁথি বলেন, ‘ডাক্তাররা জানান ওষুধ খাওয়া শুরু করলে আমার হয়তো সারা জীবনের জন্য পিরিয়ড বন্ধ হয়ে যেতে পারে। আর এটা বন্ধ হলে আমি আর কখনোই মা হতে পারব না। কিন্তু একজন নারী হয়ে যদি মা হতে না পারি তাহলে জীবনের সার্থকতা কোথায়? একটা সন্তানের স্বপ্ন আমার আজীবনের। পৃথিবীতে আমার কে থাকবে তাহলে?’
তখনই সিদ্ধান্ত নেন, ক্যান্সারের ওষুধ খাবেন না। চেষ্টা করবেন মা হওয়ার। সেই সিদ্ধান্ত থেকেই ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন শিকেয় তুলে রাখেন। এ বছরের এপ্রিল মাসে জানতে পারেন তিনি মা হতে যাচ্ছেন। বিষাদ ছাপিয়ে ওই সময়ে এর চেয়ে আনন্দের খবর আর কিছু ছিল না সিঁথির কাছে।
বলেন, ‘যখন জানতে পারি আমি মা হতে যাচ্ছি, সমস্ত পৃথিবীর আনন্দময় সংবাদের চেয়ে এই সংবাদ আমার কাছে সেরা। আমি ওই সময় মাতৃত্বটা উপভোগ করা শুরু করি।’
তারপর স্বাভাবিক নিয়মে মাতৃত্বের স্বাদ নেওয়ার আগের দিনগুলো নিয়ে অপেক্ষা করতে থাকেন। অবশেষে সেপ্টেম্বরে পৃথিবীতে আসে সিঁথি কন্যা সামারা জয়ী। তবে শুরুতে কিছু জটিলতা ছিল মেয়ের। এখন সেসব কাটিয়ে দারুণ সময় কাটছে মা-মেয়ের। খুব দ্রুত দেশে ফিরবেন বলে জানিয়েছেন এই গায়িকা। বলেন, ‘এ মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে ক্যান্সারের ওষুধ খাওয়া শুরু করেছি এবং জয়ীকে বুকের দুধ খাওয়ানো বন্ধ করতে হয়েছে। জয়ী ও আমি দুজনই ভালো আছি। খুব দ্রুত দেশে ফিরব। ফিরব গানেও।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।