জুমবাংলা ডেস্ক : শ্রমজীবী মানুষের পরিশ্রমে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল থাকলেও বছরের পর বছর তারা রয়ে গেছেন অবহেলিত। ১৪০ বছর আগে মে দিবসের যে চেতনা জন্ম নিয়েছিল, আজও সেই চেতনার পূর্ণ বাস্তবায়ন হয়নি। এখনও শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরির দাবিতে রাজপথে নামতে হয়। মালিকের খেয়ালে যেকোনো সময় হারাতে হয় চাকরি।
এই বাস্তবতায়, শ্রমজীবী মানুষের জন্য মে দিবসের মূল চেতনা আজও অধরা থেকে গেছে।
শ্রম বিশ্লেষকদের মতে, শ্রমিকদের অধিকার রক্ষায় আইন থাকলেও তা কার্যকরভাবে প্রযোজ্য হয় না। বর্তমানে প্রায় সব শ্রম আইন কেবল তৈরি পোশাক শিল্পখাতেই সীমাবদ্ধ। অন্য অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতগুলো থেকে যায় প্রায় অগোচরে। তাই শ্রম অর্থনীতির গঠনমূলক পরিবর্তন না আনলে সমাজ ও অর্থনীতি দুটিই হুমকির মুখে পড়বে।
এই বাস্তবতা মাথায় রেখে, আজ বাংলাদেশসহ বিশ্বের বহু দেশে পালিত হচ্ছে মহান মে দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য— ‘শ্রমিক-মালিক এক হয়ে, গড়ব এ দেশ নতুন করে।’
১৮৮৬ সালের ১ মে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরে শ্রমের মর্যাদা ও দৈনিক ৮ ঘণ্টা কর্মঘণ্টার দাবিতে যে আন্দোলন এবং আত্মাহুতি শ্রমিকরা দিয়েছেন, তার স্মরণে আজও বিশ্বজুড়ে মে দিবস পালন করা হয়। বাংলাদেশসহ প্রায় ৮০টি দেশে আজ জাতীয় ছুটি। আরও বহু দেশে দিবসটি পালিত হয় বেসরকারিভাবে।
এই দিবসের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি শ্রমিক সমাজে পরিবর্তনের সূচনা করেছে। শ্রমিকদের কর্মঘণ্টা কমে এসেছে ৮ ঘণ্টায়, তারা ধীরে ধীরে তাঁদের শ্রমের ন্যায্য মর্যাদা পেতে শুরু করেছেন। মে দিবস সমাজে বৈষম্যহীনতার এক নতুন অধ্যায়ও সূচিত করেছে।
শ্রম মন্ত্রণালয়ের একটি নির্দেশনায় বলা হয়েছে, মে দিবসে সব কারখানা বন্ধ রাখতে হবে। যৌক্তিক কারণ ছাড়া কাউকে চাকরিচ্যুত বা ছাঁটাই করা যাবে না। চাকরিচ্যুতি করতে হলে প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে। আইন লঙ্ঘন হলে মালিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রাষ্ট্রীয় পরিবর্তনের পর অন্তর্বর্তী সরকার জাতীয় শ্রম সংস্কার কমিশন গঠন করে। এই কমিশন জাতীয় ন্যূনতম মজুরি নিশ্চিত করার সুপারিশ করেছে, যা মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছে।
কমিশনের প্রধান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ জানান, বর্তমানে পোশাক শিল্পে ৫০% এবং অন্যান্য খাতে ৫০% নজর দেওয়া হচ্ছে, যেখানে আগে শতভাগ নজর ছিল পোশাক শিল্পেই। তিনি আরও বলেন, গত কয়েক মাসে লাখো শ্রমিক চাকরি হারিয়েছেন, যাদের কোনো সামাজিক নিরাপত্তা নেই। মালিক বা রাজনৈতিক প্রভাবে তারা চাকরি হারাচ্ছেন। তাই এটি শুধু শ্রমিক নয়, গোটা অর্থনীতি ও সমাজের জন্য হুমকি।
ইন্ডাস্ট্রিাল বাংলাদেশের সভাপতি তৌহিদুর রহমান বলেন, শ্রমিকদের নিম্ন মজুরির কারণে অতিরিক্ত কাজ করতে হয়, যা মে দিবসের মূল চেতনার পরিপন্থী। এতে তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ে, উৎপাদনশীলতা কমে এবং সন্তানদের বিদ্যালয়ের বদলে কাজে পাঠাতে হয়।
গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুর মঈন বলেন, বৈশ্বিক চাপে শ্রম আইন সংশোধন হলেও তা শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করতে ব্যর্থ। এখনও অবাধ ট্রেড ইউনিয়নের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়নি এবং শ্রম আইন মালিক-সমর্থিত ধারা দিয়ে পরিপূর্ণ। তাই এবারের মে দিবসে শ্রমিকরা গণতান্ত্রিক শ্রম আইনের দাবি তুলেছেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।