লাইফস্টাইল ডেস্ক : সাধারণত গতানুগতিক প্রক্রিয়ার বাইয়ে আমরা যা কিছু দেখি। সেটাই আমাদের আশ্চর্য করে। তা যদি হয় মানুষের বৈশিষ্ট্য, তাহলে তো তা নিয়ে আমাদের আগ্রহ থাকে তুঙ্গে। এই যেমন সবার জানামতে, আমরা ডান হাতে লেখালেখিসহ যাবতীয় কাজ করি। অথচ পৃথিবীতে অনেক মানুষই আছে যারা ডান হাত থাকলেও বিশেষ হোক বা স্বাভাবিক, সব কাজই করছে বাঁ-হাত দিয়ে। আর এই বৈশিষ্ট্য নিয়ে যেমন রয়েছে কিছু দারুণ সুবিধা আবার সমস্যায়ও পড়তে হয় অনেককে।
আমরা অধিকাংশ কাজ ডান হাতেই করে থাকি। তবে কিছু মানুষের ক্ষেত্রে ব্যাপারটি ভিন্ন। ডান নয়, বরং বাম হাতে কাজ করতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন তারা।
ডান বা বাঁ-হাতি হওয়ার অর্থটা কী? ঠিক কী কারণে কোনো একটি হাত অধিক সক্রিয় হয়ে ওঠে? আবার আমাদের পরিচিতজনদের মধ্যে বাঁ-হাতিদের সংখ্যাই বা এত কম কেন? এই বিষয়টা নিয়ে জানার আগ্রহের শেষ নেই।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ধ্যানধারণা পাল্টেছে। তাও যেনতেন পাল্টানো নয়, রীতিমতো ইতিবাচক মনোভাব এখন বাঁ-হাতিদের প্রতি। আর হবেই না বা কেন! বিশ্বে বাঁ-হাতি মানুষের সংখ্যা মাত্র ১০ শতাংশের কিছু কম বা বেশি।
তবে বাঁ-হাতিদের দুর্বল বা অদক্ষ ভাবার কোনো কারণ নেই। এটা জানা বিষয় যে, মস্তিষ্কের ডান পাশ নিয়ন্ত্রণ করে শরীরের বাঁ-পাশ। একইভাবে মস্তিষ্কের বাঁ-পাশ নিয়ন্ত্রণ করে শরীরের ডান পাশ। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, বাঁহাতিদের ক্ষেত্রে এই বিন্যাসটি হয় জিনগতভাবে। তবে এই বাঁ-হাতি হওয়ার বিষয়টি নিয়ে নানান গবেষণা হলেও মূলত এটি সম্পূর্ণ সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত ব্যাপার।
মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরো মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. মো. তরিকুল ইসলাম বলছেন, সাধারণত ছোট খাটো স্ট্রোক হওয়ার পর অনেকেই প্যালাইসড হয়ে যান। সেক্ষেত্রে বাঁ-হাতিদের স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি। কেননা বাঁ-হাতিদের সমস্ত অনুভূতি কাজ করে ডান মস্তিষ্ক থেকে।
পৃথিবীর বিখ্যাত ও সফল ব্যক্তিদের তালিকায় বাঁ-হাতিদের সরব উপস্থিতি দেখা যায়। নিজেদের মেধাকে কাজে লাগিয়ে নিজ নিজ অবস্থানে নিজেকে সেরা প্রমাণিত করেছেন। যেমন, হাস্যরসে পুরো পৃথিবীকে হাসিয়েছিলেন চার্লি চ্যাপলিন। বিশ্বের বিখ্যাত এই কৌতুক অভিনেতা ছিলেন বাঁ-হাতি।
মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠা বিল গেটস একজন বাঁ-হাতি। ধনীদের তালিকায় যার অবস্থান বেশ শীর্ষে। অ্যাপেলের প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ জবসও একজন বাঁ-হাতি। আইটি ওয়ার্ল্ডে স্টিভ একজন গুরু হিসেবেই খ্যাত। সফল বাঁহাতিদের তালিকায় আছে ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গও।
ভারতের অন্যতম সেরা অভিনেতা অমিতাভবচ্চন আছেন বাঁ-হাতির তালিকায়। একাধিক সিনেমায় তিনি এই হাতের ব্যবহার দেখিয়েছেন।
ভারতীয় ক্রিকেটের ভগবান শচীনও একজন বামহাতি। বাঁ-হাতের জাদুতেই ক্রিকেট দুনিয়া মাত করেছেন তিনি। আর বাংলাদেশী তারকা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান বাঁ-হাতে ব্যাট উড়িয়ে জায়গা করেছেন কোটি ভক্তের হৃদয়ে। লিওনেল মেসির বাঁ পায়ের ফুটবলে জাদুতে এখন কাঁপছে পুরো বিশ্ব।
এখানেই শেষ নয়। সর্বকালের সেরা চিত্রকর লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি, বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন, দার্শনিক অ্যারিস্টটল বাঁহাতি। সফল বাঁহাতির তালিকায় আরও আছেন ব্রায়ান লারা, ওয়াসিম আকরাম, রাফায়েল নাদাল, অ্যাঞ্জেলিনা জোলি, লেডি গাগা, প্রিন্স উইলিয়ামস, বিল ক্লিন্টন।
প্রাচীনকাল থেকেই বাঁ-হাতিরা নানা অপবাদ ও বৈষম্যের শিকার হয়ে আসছেন। তবে, এতে একজন শিশুর মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয় বলে জানান মস্তিস্ক বিশেষজ্ঞরা।
বাঁ-হাতি মানুষদের Left handed বলা হয়। এই বিশেষ ব্যক্তিদের জন্যই প্রতিবছর ১৩ আগস্ট পালিত হয় আন্তর্জাতিক বাঁ-হাতি দিবস।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।