জুমবাংলা ডেস্ক : জলাতঙ্ক অনিরাময়যোগ্য, এই রোগে আক্রান্ত রোগীর নিশ্চিত মৃত্যু হয়ে থাকে। পূর্বে এই রোগের প্রকোপ অত্যধিক থাকলেও বর্তমানে তা কমেছে। দেশে ২০১০ সালের পূর্বে জলাতঙ্ক রোগে প্রতি বছর মৃত্যু ছিল দুই হাজারেরও বেশি। গত এক যুগে মৃত্যুর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত ৮ মাসে জলাতঙ্কে মৃত্যু হয়েছে ৩৩ জনের। জলাতঙ্ক রোগীর সংখ্যা পূর্বে তুলনায় কমলেও গত পাঁচ বছরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যায় পরিবর্তন হয়নি বরং বেড়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর মহাখালী সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে ‘বিশ্ব জলাতঙ্ক দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব তথ্য জানান।
আজ বিশ্ব জলাতঙ্ক দিবস। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘জলাতঙ্কের অবসান, সকলে মিলে সমাধান’। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, জলাতঙ্ক আক্রান্তের হার শূন্যের কোটায় আনা সম্ভব হচ্ছে না তিন কারণে। এর মধ্যে রয়েছে- ক্যাটাগরি অনুযায়ী চিকিৎসা, র্যাভিস ইমিউনোগ্লোবুলিন-আরআইজি’র সঠিক ব্যবহার, জনসচেতনতা বৃদ্ধি।
দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইড লাইন অনুযায়ী, কুকুর বা প্রাণীর কামড়ের শিকার ব্যক্তিকে ক্ষতের ধরণ অনুযায়ী তিন ক্যাটাগরিতে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
ক্যাটাগরি-১: অক্ষত চামড়ার লেহন, প্রাণীর সংস্পর্শ কিন্তু কোনো আঁচর বা ক্ষতের চিহ্ন থাকবে না। এক্ষেত্রে টিকা দিতে হবে না।
ক্যাটাগরি-২: আঁচড় বা ক্ষতের চিহ্ন আছে কিন্তু রক্তক্ষরণ নেই। এক্ষেত্রে অ্যান্টি র্যাভিস ভ্যাকসিন (এআরভি) দিতে হবে। এক বা একাধিক রক্ত প্রবাহযুক্ত ক্ষত থাকলে, গলা, ঘাড় বা মাথার যেকোনো অংশে রক্তক্ষরণবিহীন ক্ষতের চিহ্ন থাকলে
ক্যাটাগরি-৩: এ বিবেচনা করতে হবে এবং রোগীকে অ্যান্টি র্যাভিস ভ্যাকসিন ও রেভিস ইমিউনোগ্লোবুলিন-আরআইজি দিতে হবে।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে ডা. বিকাশ কুমার সরকার জানান, সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে ২০২১ সালে কুকুর, বিড়াল ও শিয়ালের কামড় বা আঁচড়ের শিকার হয়ে জলাতঙ্কের টিকা নিয়েছে ৭৪ হাজার ৬৬২ জন। জলাতঙ্ক আক্রান্ত ছিল ৩৯ জন। ২০২২ টিকা নিয়েছেন ৮৯ হাজার ৯২৮ জন। আক্রান্ত হয় ৪৪ জন। আর ২০২৩ সালে আগস্ট মাস পর্যন্ত টিকা নিয়েছেন ৫৯ হাজার ২৯ জন। আক্রান্ত রোগী পাওয়া যায় ৩০ জন।
তিনি বলেন, জলাতঙ্কের টিকা গ্রহীতার সংখ্যার সঙ্গে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাও বেড়েছে। রোগীরা অভিযোগ করেন- আমার রোগী যথাসময়ে টিকা নিয়েছেন এবং আমার দ্রুতই তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেছি। কিন্তু এ রোগটা কেনো হলো? আমার এ রোগীর কি চিকিৎসা নাই। আমার মনে হয়, আমাদের দেখা উচিত, র্যাভিস ইমিউনোগ্লোবুলিন-আরআইজি’র সঠিক ব্যবহার হচ্ছে কি না।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালের মেডিক্যাল অফিসার ডা. জুবায়ের আহমেদ। তিনি বলেন, দক্ষিণপূর্ব এশিয়া জলাতঙ্কের জন্য ঝুঁকি প্রবণ এলাকা এবং এখানে মৃত্যু বেশি হচ্ছে। ইউরোপের দেশগুলোতে জলাতঙ্কের হার খুবই কম। কারণ সেখানে পোষা ও রাস্তার কুকুরগুলোকে নিয়মিত টিকা দেয়।
ডা. জুবায়ের আহমেদ বলেন, জলাতঙ্ক রোগী সবচেয়ে বেশি পাওয়া যাচ্ছে ঢাকায়। এরপর কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, ময়মনসিংহ ও কিশোরগজ্ঞ জেলার। এসব রোগীরা কুকুরের কামড়ের কারণে জলাতঙ্কে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করছেন। অথচ কুকুর কামড়ের পর ক্ষত জায়গায় ১৫ মিনিট ক্ষার সাবান দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেললে ৯০ শতাংশ জীবাণু মরে যায়। জলাতঙ্ক হওয়ার আশঙ্কা থাকে না।
তিনি বলেন, বর্তমানে আমরা যেসব রোগী পাচ্ছি এর ৯০ শতাংশের একটাই কথা, আমরা তো কুকুর কামড় দেওয়ার পর হাসপাতালে গিয়েছিলাম, চিকিৎসাও নিয়েছি কিন্তু আমাদের বাচ্চার তিন মাস পরে কেনো জলাতঙ্ক হলো? এসব রোগীর চিকিৎসা ব্যবস্থপত্র দেখলে দেখা যায় আরআইজি দেওয়া না। এসব রোগী টার্শিয়ারি পর্যায়ে হাসপাতাল থেকে আসছেন। যে কারণে তিন মাস পরে রোগীর জলাতঙ্ক হচ্ছে।
সভাপতির বক্তব্যে সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, শতকরা ৯৯ ভাগ ক্ষেত্রে কুকুরের কামড়-আঁচড়ে জলাতঙ্ক সংক্রমিত হয়ে থাকে। একবার জলাতঙ্ক হয়ে গেলে আর চিকিৎসার কিছু থাকে না। রোগীর নিশ্চিত মৃত্যু। এজন্য প্রতিটি রোগীকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে হবে। যারা মারা যাচ্ছে তাদের ডেথ রিভিউ করতে হবে। কোন কারণে মারা গেলো, কোন কারণে জলাতঙ্কে আক্রান্ত হলো- এই সমস্যাগুলো বের করতে পারলে আমাদের লক্ষ্য জলাতঙ্ক মুক্ত করা- সেটি করা সম্ভব।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।