জুমবাংলা ডেস্ক : ঈদ শেষে এখন বাজারে যে তরমুজগুলো আসছে, সেগুলো আবার তুলনামূলক ছোট। তবে সেগুলো ব্যবসায়ীরা আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বিক্রি করছেন কেটে। কাটার পর লাল টকটকে তরমুজগুলো মুখে নিলেই মিষ্টি রসে মুখ ভরে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে দাম কমে গেছে অনেকটাই।
একটি নয়, দুটি হাতে তিনটি তরমুজ নিয়ে কারওয়ান বাজারে হেঁটে যাচ্ছিলেন মিজানুর রহমান। আকারে ছোট হলেও রসালো ও পাকা তিনটি ১২ কেজির মতো হবে। হাঁটতে কিছুটা কষ্টও হচ্ছিল।
তিনি বলেন, ‘কম দামে পাইছি, তাই কিনে নিলাম। রমজানের শেষ দিকে কেজি ৫০ টাকাও পাই নাই। এখন কেজি হিসাব করলে ১৫ টাকারও কম দামেই পাইছি। বলতে পারেন পানির দর তাই তিনটা নিলাম। তিনটা মিলে ১০০ টাকা রাখছে।’
রোজার আগে বেজায় গরমে এবার যখন তরমুজ বাজারে আসে, তখন তরমুজ কেজি দরে নাকি পিস হিসেবে বিক্রি হবে- এ নিয়ে বিতর্ক দেখা দেয়। সে সময় কারওয়ান বাজারেই কেজি ৩৫ থেকে ৪০ টাকা উঠে যায়, এলাকার বাজারে তা ওঠে আরও বেশি। রোজায় চাহিদা তুঙ্গে ওঠার পর এই ফলের দাম আরও বাড়ে।
সে সময় তরমুজগুলো ছিল আকারে বড়। কিন্তু মিষ্টি ছিল না তেমন, বরং অনেকটা পানসে ফলটি খাওয়ার পর আক্ষেপই করেছেন ভোক্তারা।
তবে ঈদ শেষে এখন বাজারে যে তরমুজগুলো আসছে, সেগুলো আকারে তুলনামূলক ছোট। তবে সেগুলো ব্যবসায়ীরা আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বিক্রি করছেন কেটে। কাটার পর লাল টকটকে তরমুজগুলো মুখে নিলেই মিষ্টি রসে মুখ ভরে যাচ্ছে।
মিজানুর বলেন, ‘কেটে দেখলাম বেশ লালও আছে, মিষ্টিও আছে। আগে তো বেশি দাম দিয়া পানসে তরমুজ খাইছি। এখন কম দামেই পাকা তরমুজ।’
কারওয়ান বাজারে কাঁচাবাজারের পাশে ক্রেতাদের ডেকে ডেকে তরমুজ বিক্রি করছিলেন আলী হোসেন। দুই থেকে আড়াই কেজির প্রতি পিস ৪০ টাকায় এবং পিস জোড়া ৭০ টাকায় বিক্রি করছিলেন তিনি। বলেন, ‘তরমুজ ছোট হলেও লাল ও মিষ্টির গ্যারান্টি আছে, কাইটা নিবেন। রোজার সময় এ রকম একটা পিচ্চি তরমুজও ১০০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি করছি।’
দাম কম কেন জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ‘বৃষ্টি শুরু হইছে তো, মানুষ বৃষ্টির সময় তরমুজ কম খায়। গরম পড়লেই তরমুজ বেশি খায়। তাই এখন চাহিদা কমছে, দামও কমছে। আগে মানুষ আইসা দাম জিগাইত, এখন ডাইকা ডাইকা বিক্রি করতেছি, কাস্টমার পাইতেছি না। ৪০ টাকা বেচার (বিক্রির) পরও কাস্টমার ২০ টাকা দাম কয়। অনেক সময় ৩০ টাকায়ও ছাইড়া দিছি। দুদিনের বেশি তো রাখাও যাইব না।’
ক্রেতা আজাদ হোসেন বলেন, ‘আগে যে দামে একটা কিনছি, এখন তার অর্ধেক দিয়া দুইটা কিনছি। ২টা ৬০ টাকা। সাইজে একটু ছোট আছে, পাঁচ কেজির কম হইব না। দুই দিনে দুইটা খাওয়া যাবে।’
এ বাজারেই অন্য বিক্রেতা মো. ইউসুফ বলেন, ‘এগুলো সব খুলনার তরমুজ। বৃষ্টির কারণে গৃহস্থরা আগে থেকেই তরমুজ তুলে ফেলছে। এখন বাজারে মালের চাপ বাইড়া গেছে। তাই দাম একেবারেই নাই। বেপারিরা কেনা দামও পকেটে তুলতে পারতেছে না।’
দুটি তরমুজ দেখিয়ে তিনি বলেন, ‘দুইটা মাল ৮ কেজি হইব, আগে হইলে দাম ছিল ৩০০ থেকে ৪০০ টাকার ওপরে, এখন বেচছি ১০০ টাকা। এ রকম হইলে বেপারিরা আর বাজারে মাল আনব না। কারণ হ্যাগো গাড়ি ভাড়াই ওঠে না।’
আকারে বড় তেমন তার দামও একটু বেশি। আনেকটা বড় আকারে তরমুজ বিক্রি করছিলেন মোহাম্মদ ওয়ালীউল্লাহ। প্রতিটি ৮ থেকে ৯ কেজির কম না। এখন বাজারে এর চেয়ে বড় তরমুজ তেমন নাই। চারটা তরমুজ আছে ১০ কেজির ওপরে। একদাম ১৫০ টাকা। আর ৮-৯ কেজির যেকোনো তরমুজ ১৩০ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি করছি। এখন খুচরায় যে দামে তরমুজ বিক্রি করতাছি এক সাপ্তাহ আগে এর চাইতে বেশি দাম দিয়া পাইকারতেই কিনতে হইছে।
তবে পাড়া-মহল্লায় তরমুজের দাম এখনও একটু বেশি। বিজয় সরণিতে ভ্যানে করে তরমুজ বিক্রি করছিলেন স্বাধীন। মাঝারি আকারের প্রতিটি তরমুজ চাইলেন ৩০০ টাকা করে। প্রতিটির ওজন হবে সাত থেকে আট কেজি।
পাইকারিতে দাম কম, খুচরায় এত দাম কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পাইকারি বাজার থেকে আনতে ভাড়া লাগে। তাছাড়া আমরা তো কম বিক্রি করি, দাম কিছুটা বেশি না করলে কেমনে হইব? আমাগো সারা দিনের মজুরিও তো আছে, ভ্যান ভাড়া আছে।
‘দাম চাইলেও দিয়া দিলেন না। কাস্টমার তো দামাদামি করে, তাই একটু বেশি দাম চাই। এক দাম ২০০ টাকা রাখা যাইব। একেকটা সাত কেজির কম না, আট কেজিও হইব, মাইপা নিবেন।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।