আন্তর্জাতিক ডেস্ক : একটি ছাদ ছাড়া গুহা কিংবা গর্তের সঙ্গে তুলনা করতে পারেন একে। যেখানকার টলটলে স্বচ্ছ জল দেখলেই সাঁতার কাটতে মন চাইবে। গল্পটা মেক্সিকোর ইউকাতান উপদ্বীপে অবস্থিত সেনোতে ইক কিলের। এই অঞ্চলে এমন আরও অনেক প্রাকৃতিক সুইমিং পুল থাকলেও ইক কিলের সুনামই সবচেয়ে বেশি।
আগেই বলা হয়েছে, সেনোতে ইক কিলের ওপরের অংশটা খোলা। যেখানে এ ধরনের কিছু কিছু সেনোতে বা গর্তের ওপরটা আটকানো থাকে। কাজেই বুঝতেই পারছেন, গুহার মতো একটি জায়গার স্বচ্ছ জলে সাঁতার কাটতে কাটতে নীল আকাশটাও দেখতে পারবেন। তারপর আবার এখানে ঝুলতে থাকা নানা ধরনের লতা জায়গাটির আকর্ষণ আরও বাড়িয়েছে।
ইউকাতান অঞ্চলের তিনাম পৌরসভার মধ্যে পিসতে নামের একটি গ্রামের পাশেই সেনোতে ইক কিলের অবস্থান। বিশ্বের নতুন সপ্তাশ্চর্যের একটি এবং প্রাচীন মায়ান শহর চিচেন ইৎজার কাছেই এটি। ইক কিল আর্কিওলজিক্যাল পার্কের বড় আকর্ষণ এই সেনোতে। সাধারণ মানুষের গোসল ও সাঁতারের জন্য উন্মুক্ত এটি।
এবার বরং সেনোতে জিনিসটা কী, তা একটু খোলাসা করা যাক। চুনাপাথরের এলাকায় তৈরি হওয়া পানিতে ভরপুর একটি সিংকহোল বা গর্ত বলতে পারেন একে। পাতালের গুহা যখন প্রাকৃতিক কারণে বিধ্বস্ত হয় এবং এর ভূগর্ভস্থ জল বেরিয়ে আসে, তখনই জন্ম হয় এমন সেনোতে বা জলে ভরপুর গর্তের।
ইউকাতান উপদ্বীপে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে এমন হাজারের বেশি সেনোতে। তবে এগুলোর মধ্যে কোনো কোনোটি সৌন্দর্য ও স্বচ্ছ জলের জন্য বিশেষ পরিচিতি পেয়েছে, যেমন সেনোতে ইল কিল। যেহেতু মাটির নিচ থেকে পানি আসে, তাই সেনোতেগুলোর পানি সাধারণত শীতল হয়। মেক্সিকোর আগুনঢালা সূর্যের তাপে উত্তপ্ত শরীরকে শীতল করে নিতে এদের জুড়ি মেলা ভার। ইউকাতান অঞ্চলে সাধারণত খোলা, আধখোলা ও ভূগর্ভস্থ তিন ধরনের সেনোতেই দেখা যায়।
মায়ানদের সময় অনেক সেনোতেই বলি দেওয়ার কাজে ব্যবহার করা হতো। পরবর্তী সময়ে কোনো কোনো সেনোতের তলে তাই সোনা, মাটির সামগ্রী এমনকি মানুষ ও বিভিন্ন পশুর কঙ্কাল পাওয়া গেছে। মায়ান ধ্বংসাবশেষ চিচেন ইৎজার কাছে অবস্থিত ইক কিলও এদের একটি। জায়গাটিকে মায়ানরা পবিত্র বলে মনে করত এবং বৃষ্টির দেবতা চাকের উদ্দেশ্যে বলিদানের জায়গা হিসেবে ব্যবহার করত। প্রত্নতাত্ত্বিকেরা এর গভীর জলে হাড় ও গয়নার টুকরো খুঁজে পেয়েছেন।
মাটির সমতল থেকে মোটামুটি ২৬ মিটার (৮৫ ফুট) নিচে এখানকার পানি। সেনোতেটির ব্যাস ৬০ মিটার (২০০ ফুট) এবং এটি ৪৮ মিটারের (১৫৭ ফুট) মতো গভীর।
পাথর কেটে বানানো একটি সিঁড়ি ধরে পৌঁছে যেতে পারবেন সাঁতার কাটার বা পানিতে লাফ দেওয়ার প্ল্যাটফর্মে। তারপর সেখান থেকে জলে নামলেই জুড়িয়ে যাবে শরীর। ওপরের মাটি থেকে ঝুলতে থাকা লতা এবং তারও ওপরে গুহার খোলা মুখ দিয়ে দেখা যাওয়া আকাশটা আপনার এই সাঁতার কাটার আনন্দ বহুগুণ বাড়িয়ে দেবে। সেনোতের মধ্যে ছোট ছোট জলপ্রপাতের দেখাও পাবেন। ক্যাট ফিশসহ নানা ধরনের মাছেদের বাসস্থান এখানকার জলের রাজ্যে।
সাঁতার কেটে পেটে ছুঁচো ডন দিচ্ছে? তাতেও সমস্যা নেই। সেনোতে ইক কিলের পাশে একটি রেস্তোরাঁ ও হোটেল আছে। রেড বুল ক্লিফ ডাইভিং ওয়ার্ল্ড সিরিজের ২০১০ ও ২০১১-এর আসর জমেছিল এখানে।
সেনোতে ইক কিল এমনিতেই পর্যটকদের প্রিয় ভ্রমণ গন্তব্য। তারপর আবার জায়গাটি চিচেন ইৎজার কাছে। কাজেই এখানে পর্যটকদের চাপ অত্যধিক। বিশেষ করে চিচেন ইৎজা ভ্রমণ শেষে বিকেলের দিকে অনেক বাস এখানে হাজির হয় বলে প্রচুর লোকসমাগম হয় তখন। ভিড় এড়াতে যতটা সম্ভব সকাল সকাল প্রাকৃতিক সুইমিং পুলে পৌঁছে যাওয়াটা তাই জরুরি।
সূত্র: দ্য হোয়ল ওয়ার্ল্ড ইজ এ প্লে গ্রাউন্ড, এক্সপ্লোর শো, উইকিপিডিয়া
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।