জুমবাংলা ডেস্ক : খুলনা অঞ্চলে দিন দিন বাড়ছে ফেলে দেয়া মাছের আঁশ প্রক্রিয়াকরণের কাজ; যা পরবর্তীতে চীন, জাপানসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রফতানি হচ্ছে। বাড়তি আয় করছেন মাছ কাটার সঙ্গে জড়িত শ্রমিকরা। দক্ষতা বাড়িয়ে শ্রমিকদের উপযোগী করা গেলে এই খাত থেকে বছরে শত কোটি টাকা বাণিজ্য সম্ভব বলে মনে করছে মৎস্য অধিদফতর।
সংশ্লিষ্টরা জানান, খুলনা অঞ্চলে বিচ্ছিন্নভাবে রফতানিমুখী এই পণ্য প্রস্তুত করেন দুই শতাধিক মানুষ। এদের বেশিরভাগ বাজারে মাছ কাটার সঙ্গে জড়িত।
তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মাছ থেকে আঁশ আলাদা করে পানি দিয়ে ধুয়ে দিন দুয়েক রোদে শুকিয়ে বস্তায় রাখা হয়। ধরন ভেদে মাছের আঁশ মণপ্রতি তিন থেকে চার হাজার টাকা দরে রফতানিকারকদের কাছে বিক্রি করেন তারা। তবে মাছের আঁশ সংগ্রহে দক্ষতা না থাকায় অনেক আঁশ নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি সরাসরি বিক্রি করতে না পারায় উপার্জন কম হয় বলে জানান তারা।
খুলনা নগরীর নতুন বাজারে মাছ কাটার সঙ্গে জড়িত শ্রমিক রাকিব শেখ জানান, প্রতিদিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের মাছ কাটেন তারা। এর মধ্যে বড় মাছগুলোর আঁশ একটু বেশি যত্ন করে ছাড়িয়ে ঝুড়িতে সংরক্ষণ করা হয়। পরে এগুলো পানিতে ভালোভাবে ধুয়ে রোদে শুকানো হয়। নির্দিষ্ট সময় শুকানো শেষে বস্তায় করে রেখে দিলে কোম্পানির লোক এসে নিয়ে যায়।
মাসে দুই থেকে তিন মণ আঁশ সংগ্রহ হয় জানিয়ে রাকিব আরও জানান, আঁশ সংগ্রহ শুরু করার পর থেকে এক বছর ধরে তার মাসে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা আয় বেড়েছে।
একই বাজারের আলী হোসেন বলেন, যত্ন করে ওই আঁশ কেটে শুকাতে বেশ কষ্ট করতে হয়। তবে কয়েক হাত ঘুরে আঁশ রফতানি হওয়ায় লাভ কম হয়। এ ছাড়া নিজেদের দক্ষতারও কিছু অভাব রয়েছে। শ্রমিকদের প্রশিক্ষিত করে গড়ে তুলে সরাসরি বাজার ধরতে সংশ্লিষ্টদের এগিয়ে আসার দাবি জানান তিনি।
টেকেরঘাট এলাকায় নদীর ধারে ফেলে দেয়া আঁশ এনে শুকানোর কাজ করেন শক্তি রায় ও বিউটি রায় দম্পতি। কিছুদিন আগে সংসারে অভাব নিত্যসঙ্গী হলেও, এখন অনেকটাই ঘুরে দাঁড়িয়েছেন তারা।
বিউটি রায় জানান, স্বামী দিনভর বাজারে মাছ কেটে ও বিভিন্ন জনের কাছ থেকে কিনে বাড়িতে মাছের আঁশ নিয়ে আসেন। দিনে আট থেকে দশ কেজি আঁশ হয়। তিনি এসব আঁশ ভালোভাবে ধুয়ে নদীর পাড়ে মাচায় শুকান।
এ বিষয়ে ‘নবলোক পরিষদ’ থেকে আমাদের প্রশিক্ষণ, অ্যাপ্রোন ও গ্লাভস সরবরাহ, এবং আঁশ সংগ্রহে বিভিন্ন পরামর্শ দেয়া হয়। তাই আঁশ আগের তুলনায় কম নষ্ট হচ্ছে বলে জানান তিনি।
মাছের আঁশ ও স্থানীয়দের জীবনমান নিয়ে কাজ করা উন্নয়ন সংস্থা নবলোক পরিষদের মৎস্য কর্মকর্তা শুভ্রদেব বিশ্বাস বলেন, আমরা পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) আর্থিক সহযোগিতায় নবলোক পরিষদের বাস্তবায়নে মাছের আঁশ প্রক্রিয়াজাত ও বাজারজাতকরণে উদ্যোক্তা তৈরির কাজ করছি। সুনির্দিষ্ট নীতিমালা করে এই খাতকে সরকারি প্রণোদনার আওতায় আনা গেলে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি স্থানীয় অর্থনীতিতে তৈরি হবে নতুন সম্ভাবনা। এছাড়া ফেলে দেয়া এই আঁশ থেকে স্বাবলম্বী হতে পারবেন বেকার অনেক তরুণ।
আর এই খাতকে এগিয়ে নিতে বিভিন্ন পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জয়দেব পাল।
তিনি বলেন, জেলার দুই শতাধিক বাজারে মাছ কাটা শ্রমিকদের দক্ষ করে গড়ে তোলা হচ্ছে। প্রতিদিন ১০ থেকে ১২ মেট্রিকটন মাছ এসব বাজারে বিক্রি হয়। ফেলে দেয়া আঁশ সম্পূর্ণ ব্যবহার করা গেলে বছরে ১০০ কোটি টাকার রফতানি বাণিজ্য সম্ভব বলে জানান ওই মৎস্য কর্মকর্তা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।