জুমবাংলা ডেস্ক : অনেক দিন ধরেই দেশে ভারতীয় পেঁয়াজের আমদানি বন্ধ রয়েছে। তবে রোজায় পেঁয়াজের চাহিদার কথা চিন্তা নতুন সরকারের দায়িত্ব নেওয়া বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু গত ৩১ জানুয়ারি ভারত থেকে ২০ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির উদ্যোগের কথা জানান।
দেশটির সরকারের পক্ষ থেকেও পেঁয়াজ রপ্তানির অনুমোদন দেওয়া হয়। কিন্তু ১৩ রোজা শেষ হতে চললেও আমদানির অনুমোদন পাওয়া পেঁয়াজ দেশের বাজারে আসেনি। এর মধ্যে আগে থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত দেশটির পেঁয়াজ রপ্তানিতে ভারত সরকারের নিষেধাজ্ঞার সময়কাল ‘অনির্দিষ্টকালে’ গড়িয়েছে। আর তাতেই দেশের বিভিন্ন বাজারে মসলাজাত এই পণ্যের কেজিপ্রতি ১০ টাকা করে বাড়তে শুরু করেছে।
খাতুনগঞ্জের আড়তগুলোতে পেঁয়াজের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। দেশি উৎপাদিত পেঁয়াজের সরবরাহ রয়েছে প্রচুর। তবু গতকাল হঠাৎ করে কোনো কারণ ছাড়াই নগরীর বিভিন্ন এলাকায় পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ১০ টাকা বেশি নিতে দেখা যায় খুচরা দোকানিদের।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভারত সরকার পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর অনির্দিষ্টকালের জন্য নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, গতকাল ভারতের পত্রপত্রিকায় এমন একটি সংবাদ এসেছে। এরপর খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে দাম না বাড়লেও খুচরা বাজারে কিছু অসাধু দোকানদার বাড়তি মুনাফা লাভের জন্য ক্রেতাদের কাছ থেকে বাড়তি দাম নিচ্ছে।
খাতুনগঞ্জের আড়তদারদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, বর্তমানে সবগুলো আড়তই পেঁয়াজে ভরপুর। পাশাপাশি রয়েছে চোরাই পথে আসা ভারতীয় পেঁয়াজও। গতকালও আড়তে ভারতীয় পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৫৫ থেকে ৬০ টাকা ও দেশি পেঁয়াজ ৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
সাধারণ সময়ে পাইকারি থেকে খুচরা বাজারে দামের ক্ষেত্রে কেজিপ্রতি ৮ থেকে ১০ টাকার ব্যবধান থাকে। সেই হিসাবে সকালে বিভিন্ন এলাকায় খুচরা দোকানগুলোতে দেশি পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৬০ ও ভারতীয় পেঁয়াজ ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে বিকেল থেকে নগরীর বিভিন্ন এলাকার দোকানে ভারতীয় পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৮০ টাকা দাম নিতে থাকেন দোকানিরা।
জানতে চাইলে খাতুনগঞ্জের পেঁয়াজের ডিপোখ্যাত হামিদুল্লাহ মিয়ার বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ইদ্রিস বলেন, ‘বর্তমানে দেশি পেঁয়াজের যে সরবরাহ রয়েছে, তাতে আরও অন্তত তিন মাস আমাদের বাইরের পেঁয়াজের ওপর নির্ভর করতে হবে না। তা ছাড়া ভারত থেকে এই নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে গত বছর ৭ ডিসেম্বর থেকে। ওই সময় বাজারে দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ এতটা ছিল না। যে কারণে দাম বেড়েছিল। এখন আর সেভাবে দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, গত বছরের ৭ ডিসেম্বর থেকে চলতি বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল ভারত সরকার। ওই সময় পর্যাপ্ত সরবরাহের অভাবে পেঁয়াজের দাম প্রতি কেজি ৭০ থেকে বেড়ে ১৫০ টাকা পর্যন্ত হয়েছিল। কিন্তু দেশি উৎপাদিত পেঁয়াজ বাজারে চলে আসার পর তা ক্রমেই নিম্নমুখী হয় এবং পাইকারি বাজারে ৫০-৬০ ও খুচরা বাজারে ৬০-৭০ টাকায় নেমে আসে।
হিলি বন্দরের পেঁয়াজ আমদানিকারক শহীদ উল্লাহ বলেন, ‘ভারত সরকারের নিষেধাজ্ঞার কারণে গত ৭ ডিসেম্বর থেকে দেশে কোনো ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি হয়নি। এরপরও দেশের বাজারে প্রচুর ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। এগুলো সব চোরাই পথে আসা। ভারতীয় সরকারের এই নিষেধাজ্ঞা আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত ছিল। এ নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ বাড়লেও বর্তমানে আমাদের দেশে পেঁয়াজের দামে এর কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়ার কথা নয়।’
নগরীর দেওয়ানবাজার এলাকার গ্রোসারি শপ নাছির স্টোরের মালিক মো. নাছির বলেন, ভারত থেকে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের কথা শুনে হুজুগের বশে অনেকে দাম বাড়াচ্ছে। বাস্তবে পাইকারি বাজার থেকে এখন পর্যন্ত বাড়তি দামে কোনো পেঁয়াজ কিনতে হচ্ছে না।
টাঙ্গাইল প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ায় বাংলাদেশে কোনো প্রভাব পড়বে না বলে মন্তব্য করেছেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু। গতকাল শনিবার বিকেলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘ভারত থেকে পেঁয়াজ আজ কিংবা আগামীকাল ট্রেনে উঠবে। আগামী তিন দিনের মধ্যে বাংলাদেশে প্রবেশ করবে। ভারত থেকে পেঁয়াজ আসা নিয়ে কোনো রকম সমস্যা আছে বলে আমার জানা নেই। ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করেছে কি না, তা আমার জানা নেই।’
গতকাল বিকালে টাঙ্গাইল প্রেস ক্লাবের উদ্যোগে প্রতিমন্ত্রী ও জেলার সব এমপিদের সংবর্ধনা ও প্রেস ক্লাবের কার্যকরী সদস্যদের পরিচিতি সভায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
আহসানুল ইসলাম টিটু বলেন, বাজার তার আপন গতিতেই চলবে। ৫-১০ টাকা বাড়লে সেটা নিয়ে কিছু না করা হলেও কেউ যদি মজুদদারি করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। স্বাভাবিক বাজারে বেচাকেনায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কোনো রকম পুলিশি তৎপরতা বা ম্যাজিস্ট্রেসি তৎপরতার প্রয়োজন নেই। বাজারে যথেষ্ট পরিমাণ পণ্যের সরবরাহ আছে এবং দামও যৌক্তিক পর্যায়ে আছে মনে করেন তিনি।
চালের মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, চাল খাদ্য মন্ত্রণালয়ের বিষয়। আরেক মন্ত্রণালয়ের বিষয়ে কোনো কিছু বলা ঠিক হবে না।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক কায়ছারুল ইসলাম, পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার, টাঙ্গাইল প্রেস ক্লাবের সভাপতি অ্যাডভোকেট জাফর আহমেদ প্রমুখ। সূত্র : দেশ রূপান্তর
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।