জুমবাংলা ডেস্ক: ট্রেনে স্ট্যান্ডিং টিকেট বিক্রি বন্ধ থাকলেও বন্ধ নেই দাঁড়িয়ে যাত্রী পরিবহন। সে ক্ষেত্রে রেলের আইন অনুযায়ী দ্বিগুণ জরিমানা নিয়ে যাত্রীদের চলন্ত ট্রেনে টিকিট দেওয়া হয়। অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, যাত্রীরা চলন্ত রেলে যদি জরিমানা দিয়ে টিকিট কিনে দাঁড়িয়ে ভ্রমণ করতে পারে তাহলে কাউন্টারে কেন স্ট্যান্ডিং টিকিট বিক্রি চালু হচ্ছে না? কালের কন্ঠের প্রতিবেদক সজিব ঘোষ-এর প্রতিবেদনে উঠে এসেছে বিস্তারিত।
আবার দাঁড়িয়ে ভ্রমণ করা সব যাত্রী চলন্ত রেলে টিকিট কেনে না। তারা টিটিইকে কিছু টাকা দিয়ে ম্যানেজ করে।
স্ট্যান্ডিং টিকিট না থাকায় এতে একদিকে ফুলছে টিটিইর পকেট, আর অন্যদিকে রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। যাত্রীরা বলছে, এখনো রেলে স্ট্যান্ডিং টিকিট চালু না হওয়া এক ধরনের ‘তামাশা ছাড়া আর কিছুই না’।
কাছাকাছি চলে এসেছে ঈদুল ফিতর। ঈদ মানেই যাত্রীবোঝাই রেল। ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া প্রায় সব ট্রেনেই তিল ধারণের ঠাঁই থাকে না। এমন পরিস্থিতিতে ট্রেনে যাত্রীদের টিকিট পরীক্ষা করাও কঠিন হয়ে পড়ে। বর্তমানে ট্রেনে দাঁড়িয়ে (স্ট্যান্ডিং) যাতায়াত করার টিকিট বিক্রি বন্ধ রয়েছে। করোনায় অর্ধেক আসনে যাত্রী পরিবহনের সময় স্ট্যান্ডিং টিকিট বিক্রি বন্ধ করা হয়। এরপর শতভাগ আসনে যাত্রী পরিবহন শুরু হলেও স্ট্যান্ডিং টিকিট বিক্রি শুরু হয়নি।
তবে বাস্তবে ট্রেনে দাঁড়িয়ে যাত্রী পরিবহন বন্ধ না হওয়ায় এবং টিটিকে কিছু টাকা দিয়ে জরিমানা ফাঁকি দেওয়ার পরিস্থিতিতে এখন আবার স্ট্যান্ডিং টিকিট চালুর পরিকল্পনা করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। সে ক্ষেত্রে ঈদ যাত্রার তিন দিন—২৯ ও ৩০ এপ্রিল এবং ১ মে স্ট্যান্ডিং টিকিট বিক্রি করা হতে পারে। তবে সব রুটের রেলের জন্য স্ট্যান্ডিং টিকিট বিক্রির পরিকল্পনা হচ্ছে না। যেসব রুটে যাত্রীর চাপ বেশি থাকে সেসব রুটে স্ট্যান্ডিং টিকিট বিক্রি করা হবে।
রেলওয়ের সূত্র বলছে, রেলের কতসংখ্যক স্ট্যান্ডিং টিকিট বিক্রি করা হবে সেটা আগে কখনো নির্ধারিত ছিল না। স্বাভাবিকভাবে গড়ে মোট আসনের ৩৫ শতাংশ স্ট্যান্ডিং টিকিট বিক্রি হতো। এখন স্ট্যান্ডিং টিকিট আবার চালু হলে তা ট্রেনের মোট আসনের ২০ শতাংশের বেশি হবে না।
গত ২৩ এপ্রিল থেকে ঈদ যাত্রার অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু করেছে রেল। স্ট্যান্ডিং টিকিট অগ্রিম বিক্রি করা হয় না। তাই স্ট্যান্ডিং টিকিট চালুর সিদ্ধান্ত আসতে পারে ২৭ এপ্রিল। তবে টিকিট কিনতে গিয়ে হাজার হাজার মানুষ ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও তারা টিকিট পাচ্ছে না; এমনকি অনলাইনেও মিলছে না রেলের টিকিট।
এদিকে রেলের স্ট্যান্ডিং টিকিট নিয়ে এক ধনের ‘তামাশা’ চলছে বলে মনে করছেন সঞ্জয় সাহা নামের এক যাত্রী। তিনি নিয়মিত রেলে যাতায়াত করেন। সঞ্জয় সাহা এবার ঈদের ছুটিতে গ্রামের বাড়ি যাবেন সপরিবারে। তাই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বগির টিকিটের জন্য এসেছিলেন কমলাপুরে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোনো টিকিটই পাননি তিনি। ক্ষোভের সঙ্গে তিনি বলেন, ‘একা হলে দাঁড়িয়েই চলে যেতাম। ছোট বাচ্চা আর পরিবার নিয়ে তো সেটা সম্ভব না। ’ কিছুদিন আগের এক অভিজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কয়েক মাস আগে রাজশাহী থেকে আসার পথে দেখলাম, শত শত মানুষ ট্রেনে দাঁড়িয়ে আসছে। অথচ স্ট্যান্ডিং টিকিট বিক্রি বন্ধ। তাদের কাছ থেকে টিটিরা টাকা নিচ্ছেন। স্ট্যান্ডিং টিকিট বন্ধ থাকলেও মানুষের দাঁড়িয়ে যাওয়া তো বন্ধ নাই। টিটিদের টাকা পকেটে ঢোকানোর ধান্দাটা বাড়ল। ’
গত কয়েক মাসে বেশ কয়েকবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, স্ট্যান্ডিং টিকিট বিক্রি বন্ধ থাকার পরও রেলে বহু মানুষ দাঁড়িয়ে ভ্রমণ করছে। টিকিট ছাড়া ট্রেনে উঠতে না দেওয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই। বিভাগীয় বড় রেলস্টেশনগুলো ছাড়া প্রায় সব স্টেশনেই ট্রেন থেকে নামার পর যাত্রীদের টিকিট ছিল কি না তা দেখা হয় না।
রেলের টিকিট পরীক্ষার দায়িত্বে থাকা কয়েকজনের সঙ্গে কথা হলে তাঁরা জানান, চলন্ত ট্রেন থেকে কাউকে নামিয়ে দেওয়া অমানবিক হবে। তাই স্ট্যান্ডিং টিকিট বিক্রি বন্ধ থাকলেও তাদের নামিয়ে দেওয়া যায় না। আইন অনুযায়ী জরিমানা নিয়ে তাদের টিকিট তৈরি করে দেওয়া হয়।
জানতে চাইলে রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিচালন) সরদার শাহাদাৎ আলী বলেন, ‘স্ট্যান্ডিং টিকিট চালু নিয়ে আলোচনা চলছে। তবে আগের মতো করে আপাতত স্ট্যান্ডিং টিকিট বিক্রি করা হবে না। মোট আসনের সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ টিকিট বিক্রি করা হতে পারে। সব সময়ের জন্য নয়, আপাতত ঈদকেন্দ্রিক পরিকল্পনা করা হচ্ছে। ’
পথচারীর ফেলে যাওয়া ১ লাখ ৭৭ হাজার টাকা থানায় জমা দিলেন ভ্যানচালক আনোয়ার
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।