জুমবাংলা ডেস্ক : ছাত্রজীবনে বন্ধুদের সঙ্গে ট্রেনে করে ঘুরে বেড়াতেন বিভিন্ন জায়গায়—কখনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতে, কখনোবা পিকনিকে যেতে। কিন্তু কখনোই টিকিট কাটতেন না। ফেরার সময়ও একইভাবে বিনা টিকিটেই যাত্রা করতেন। প্রকৌশল বিষয়ে পড়াশোনা শেষে চাকরিতে যোগ দেওয়ার পর তার মধ্যে অনুশোচনা তৈরি হয়। কিন্তু কিভাবে সেই বকেয়া টাকা ফেরত দেবেন, তা বুঝে উঠতে পারছিলেন না। অবশেষে এক ট্রেনের ভ্রাম্যমাণ টিকিট পরিদর্শক (টিটিই) এর কাছে তিনি ৫২৫ টাকা পরিশোধ করে দায়মুক্তি নেন।
গত সোমবার (২১ জুলাই) দিবাগত রাতে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা ঈশ্বরদীগামী চিলাহাটি এক্সপ্রেস ট্রেনে তিনি এই টাকা পরিশোধ করেন।
ভাড়া পরিশোধকারী এই ব্যক্তির নাম হোসাইন আলম (৪৫)। তিনি পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার পিয়ারাখালী এলাকার বাসিন্দা এবং নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো)-এর ঈশ্বরদী অফিসে সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত।
ট্রেনে দায়িত্বে থাকা টিটিই আবদুল আলীম মিঠু জানান, হোসাইন আলম অনেক দিন ধরেই ছাত্রজীবনের বিনা টিকিটে ট্রেন ভ্রমণের টাকা পরিশোধ করতে চাচ্ছিলেন, কিন্তু সুযোগ হয়ে উঠছিল না। ওই রাতে চিলাহাটি এক্সপ্রেসে ঈশ্বরদী ফেরার সময় তিনি টিটিই’র সঙ্গে দেখা করে পুরো বিষয়টি ব্যাখ্যা করেন এবং টাকা পরিশোধ করতে চান।
কিন্তু কী পরিমাণ টাকা নেওয়া হবে, তা বুঝে উঠতে না পেরে টিটিই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পরামর্শ করেন। এরপর তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী ট্রেনটির সর্বোচ্চ ভাড়ার পরিমাণ ৫২৫ টাকা হোসাইন আলমের কাছ থেকে নিয়ে তাকে দায়মুক্ত করা হয়।
এ বিষয়ে টিটিই আবদুল আলীম বলেন, “চাকরিজীবনে এমন ঘটনা এই প্রথম দেখলাম। টাকা নেওয়ার পর ওই প্রকৌশলী স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন। বিষয়টি আমাকে খুব ভালো লেগেছে। আদায়কৃত টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়া হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “অনেক শিক্ষার্থীই টাকার অভাবে বিনা টিকিটে ট্রেনে যাতায়াত করে। তবে যখন তারা আর্থিকভাবে স্বচ্ছল হয়, তখন তাদের উচিত এসব বকেয়া টাকা ফেরত দিয়ে দেওয়া। হোসাইন আলম তা করেছেন, এজন্য আমরা পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের পক্ষ থেকে তাকে ধন্যবাদ জানাই।”
ভাড়া পরিশোধকারী হোসাইন আলম বলেন, “ছাত্রজীবনে বন্ধুদের সঙ্গে অনেক ট্রেনে ঘুরেছি। কখনো পরীক্ষায় অংশ নিতে গিয়েছি, কখনো পিকনিকে। কিন্তু একবারও ট্রেনের ভাড়া দিইনি। বিষয়টি নিয়ে চাকরি পাওয়ার পর থেকেই মন খারাপ হতো। কিভাবে পরিশোধ করব বুঝে উঠতে পারছিলাম না।”
তিনি আরও বলেন, “গত সোমবার ঢাকা থেকে ঈশ্বরদী ফেরার পথে ট্রেনে টিটিই’র সঙ্গে দেখা হয়। তাকে পুরো ঘটনা বললে তিনি টাকা নেওয়ার ব্যবস্থা করেন। টিটিই আব্দুল আলীম ভাই আমাকে এই সুযোগ করে দিয়েছেন। সত্যি বলতে এখন মনটা অনেক হালকা লাগছে। জীবনে আর কখনো বিনা টিকিটে ট্রেনে ভ্রমণ করব না।”
সবাইকে উদ্দেশ্য করে হোসাইন আলম বলেন, “শৈশবে হয়তো না বুঝে, কিংবা অভাবে বিনা টিকিটে ট্রেন ভ্রমণ করেছেন অনেকেই। কিন্তু চাকরি জীবনে এসে সেসব হিসেব করে সরকারি কোষাগারে টাকা ফেরত দেওয়া উচিত। এতে মনে প্রশান্তি আসে।”
পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় ব্যবস্থাপক লিয়াকত শরীফ উদ্দিন খান বলেন, “হোসাইন আলমের এই সচেতনতা অবশ্যই প্রশংসনীয়। যারা কখনো বিনা টিকিটে ট্রেনে ভ্রমণ করেছেন, তারা চাইলে এখান থেকে শিক্ষা নিতে পারেন। এমনকি কেউ হিসেব না দিলেও একদিন এই খাতার হিসাব দিতে হবে। তাই যতটা সম্ভব এখনই সেসব টাকা ফেরত দেওয়া উচিত। এতে আত্মিক শান্তি পাওয়া যায়।”
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।