জুমবাংলা ডেস্ক : দোহাজারী–কক্সবাজার রেললাইনে লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যে এশিয়ায় সর্বপ্রথম ‘এলিফ্যান্ট ওভারপাস’ নির্মাণ করা হয়েছে। এতে ওভারপাসের উপর দিয়ে হাতি ও নিচ দিয়ে ট্রেন চলাচল করবে। রেললাইনের কারণে বন্যপ্রাণী চলাচলে যেন কোনো বাধা সৃষ্টি না হয়, এজন্য তৈরি করা হয়েছে ‘এলিফ্যান্ট ওভারপাস’।
জানা যায়, চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের মাঝ দিয়ে গেছে রেললাইন। এর প্রায় ১০ কিলোমিটার অংশ অভয়ারণ্যের মধ্যে পড়েছে। এই অংশে বন্যহাতির চলাচলে যাতে সমস্যা না হয় বিষয়টি মাথায় রেখে তিনটি আন্ডারপাস ও একটি ওভারপাস নির্মাণ করা হয়েছে। ‘এলিফ্যান্ট ওভারপাস’ নির্মাণের জায়গা নির্ধারণে জন্য এশিয়ার উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ দল প্রায় দুই বছর কাজ করেছেন। ভারত–বাংলাদেশ–মিয়ানমারের মধ্যে যাতায়াত করা এশিয়ান প্রজাতির হাতি সবচেয়ে বেশি চলাচল করে চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য এলাকা দিয়ে। ওভারপাস দিয়ে হাতিরা এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ে যাতায়াত করতে পারবে। অপরদিকে অভয়ারণ্য এলাকায় বন্যপ্রাণীরা যাতে রেললাইনে আসতে না পারে তার জন্য করা হচ্ছে লবণ পানির লেক। বন্যহাতি লবণ পানি পান করতে পছন্দ করে। এছাড়া বন্যহাতির দল কোথাও পানি দেখলে সেখানে অবস্থান করতেও পছন্দ করে।
বুধবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, ৫০ মিটার দীর্ঘ এলিফ্যান্ট ওভারপাসের কাজ প্রায় পুরোটা সম্পন্ন হয়েছে। ওভারপাসের উপরে লাগানো হয়েছে হাতির পছন্দের কলা, বাঁশসহ প্রায় ৪১ প্রজাতির গাছ। যার ফলে এই ওভারপাস দিয়ে যাতায়াতে আকৃষ্ট হবে বন্যহাতির দল। ওভারপাসের দুই পাশে নির্দিষ্ট এলাকা পর্যন্ত সীমানা প্রাচীরের কাজ চলমান রয়েছে। ফলে চেষ্টা করলেও এই সীমানা প্রাচীরের কারণে বন্যহাতির দল রেললাইনে যেতে পারবে না।
দোহাজারী–কঙবাজার রেলপথ নির্মাণাধীন প্রতিষ্ঠানের ইনচার্জ রেজাউল হক জানান, চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যে এলিফ্যান্ট ওভারপাস নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। বর্তমানে সাইড ওয়াল নির্মাণের কাছ চলছে। আগামী ১৫ অক্টোবর রেলপথে ট্রয়াল হবে। এছাড়া আগামী ২৮ অক্টোবর দোহাজারী–কঙবাজার রেললাইন উদ্বোধন করার কথা রয়েছে।
চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. মাহমুদ হোছাইন জানান, বন্যহাতির দল যেই করিডোর দিয়ে বেশি যাতায়াত করে, সেখানেই এলিফ্যান্ট ওভারপাস নির্মাণ করা হয়েছে। মূলত অভয়ারণ্যের বন্যহাতিসহ অন্যান্য প্রাণীরা ওভারপাস ও আন্ডারপাস দিয়ে যাতায়তে অভ্যস্ত না। সেহেতু রেললাইন এড়িয়ে বিকল্প পথ দিয়ে চলাচল করতে একটু সময় লাগবে তাদের। রেললাইনের কাজ শুরুর পর থেকে বন্যহাতির চলাচল আগের তুলনায় অনেকটা কমে গেছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও হাতি বিশেষজ্ঞ ড. মোহাম্মদ আবদুল আজিজ জানান, অভয়ারণ্য এলাকায় রেললাইনে নির্মিত আন্ডারপাসগুলো স্ট্যান্ডার্ড সাইজের হয়নি। এছাড়া বন্যাহাতি চলাচলের জন্য নির্মিত এলিফ্যান্ট ওভারপাসের সাইজও আরো দীর্ঘ হওয়া প্রয়োজন ছিল। হাতি খুবই বুদ্ধি সম্পন্ন প্রাণী। সুতরাং চলাচলের পথে সামান্য পরিবর্তন হলেও তারা বুঝতে পারে। ওভারপাস দিয়ে বন্যহাতি চলাচল করাতে কিছু প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে। ওভারপাস দিয়ে প্রথমে বন্যহাতি চলাচল করতে দ্বিধাবোধ করলেও উপযোগী পরিবেশ পেলে তারা অভ্যস্ত হয়ে যাবে।
এদিকে, গত ২৮ সেপ্টেম্বর (বৃহস্পতিবার) বাংলাদেশ রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. হুমায়ুন কবীর চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যে নির্মিত এলিফ্যান্ট ওভারপাস পরিদর্শন করেছেন। এ সময় তিনি জানিয়েছেন, প্রকৃতি ও পরিবেশ সবকিছু বিবেচনা করে এলিফ্যান্ট ওভারপাস নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ফিজিক্যালি স্ট্যাডিতে ন্যাচারালি ওই জায়গা দিয়েই বন্যহাতি যাতায়াত করে। তাই তাদের নির্বিঘ্ন যাতায়াত নিশ্চিত করতে ওই স্থানে এলিফ্যান্ট ওভারপাস নির্মাণ করা হয়েছে। এশিয়ার কোনো দেশে বন্যপ্রাণীর জন্য এমন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। এটিই রেলপথে প্রথম এলিফ্যান্ট ওভারপাস।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।