আবির হোসেন সজল : ট্রেনের ছন্দময় গতিতে ছুটে চলা জীবন, আর সেই গতিকে পরিচালনার দায়িত্ব এক নারীর হাতে। লালমনিরহাট রেল বিভাগে একজন নারী ট্রেনচালক হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন নানা প্রতিকূলতাকে উপেক্ষা করে। বিভাগের কর্মকর্তারা এবং সাধারণ যাত্রীরা। ৪ সন্তানের জননী ফরিদা। মাত্র ৯ মাসের বাচ্চাকে বাড়িতে রেখে ট্রেন চালাচ্ছে ফরিদার। এর মধ্যে ১০ বছর চাকরির জীবন শেষ করেছেন। তার সাহসিকতা আর আত্মবিশ্বাসে মুগ্ধ রেল বিভাগ।
ট্রেন চালক ফরিদার স্বামীর টুটুলকে নিয়ে চাকুরি সুবাদে লালমনিরহাট রেলস্টেশনের সরকারি কোয়াটারে বসবাস করেন। দুই মেয়ে দুই ছেলে। তাদের বাড়ি দিনাজপুর জেলায়। তার স্বামী টুটুল লালমনিরহাটে বেসরকারি চাকরি করেন।
ট্রেন চালক ফরিদা বলেন, চ্যালেঞ্জ হিসেবে এই ট্রেন চালকের পথটি আমি নিয়েছি। আমার ছোট থেকে ইচ্ছে ছিল আমি চ্যালেঞ্জিং পেশায় যাব। আমি ৯/৯/২০১৪ সালে ট্রেন চালক হিসেবে রেল বিভাগে যুক্ত হই। পাশাপাশি পরিবার যদি সাপোর্ট না করে তাহলে আপনি এ পেশায় আসতে পারবেন না। আমি এই পেশায় এসে ব্যর্থতাকে পাশে ঘুরতে দেইনি। পাশাপাশি একজন পুরুষ ট্রেন চালকের সাপোর্টার প্রয়োজন রয়েছে। আমি একজন নারী হিসেবে ট্রেন চালক সমাজে কে কি বলল সেটা দেখার বিষয় না। নারী হিসেবে ট্রেন চালকের যে সুযোগ করে দিয়েছে তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই।
তিনি আরও বলেন, আমার দুই মেয়ে দুই ছেলে। সবচেয়ে ছোট ৯ মাসের মেয়েকে রেখে আমি ট্রেন চালাতে আসি। তারা আমাকে মামমাম বলে ডাকে। কাজে বের হলেও তারা কোনদিন বিরক্ত হয় না। বলে উঠে মামমাম কাজে যাচ্ছে।
জানা গেছে, লালমনিরহাটের রেল স্টেশনে নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছেন ফরিদা। চার সন্তানের মা হয়েও তিনি বেছে নিয়েছেন ট্রেন চালানোর মতো চ্যালেঞ্জিং পেশা। প্রথমে ভয় পেলেও এখন ট্রেনের স্টেশন থেকে স্টেশনে ছুটে চলার এই কাজটিকে ভালোবেসে ফেলেছেন। ২০১৪ সালের চাকরিতে যোগদান করে চাকরিজীবনের প্রায় ১০ বছর শেষ করেছেন।
ট্রেনচালক ফরিদা নারী হওয়ায় তাকে প্রতিনিয়ত নানান সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। কিন্তু কখনো দমে যাননি ফরিদা। ট্রেনের যান্ত্রিক ত্রুটি হলে, নিজের হাতেই তা সমাধান করার সাহস দেখান তিনি। তার এই সাহসিকতা ও পেশাদারিত্বে মুগ্ধ হয়েছেন রেল কর্তৃপক্ষ।
নারীরা এখন কেবল ঘরের কাজেই সীমাবদ্ধ নন। তারা এগিয়ে যাচ্ছে দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে। ট্রেন চালনায় নারীদের এই অংশগ্রহণ নতুন দিনের সূচনা করেছে। বলছেন রেল বিভাগের কর্মকর্তারা।
ট্রেন যাত্রী মনিরা আক্তার বলেন, নারীরাই ট্রেন চালিয়ে গন্তব্যে পৌঁছে দিচ্ছেন এটা আমাদের জন্য অনেক সাহসিকতার বিষয়। ট্রেন চালকের আসনে আমার মত নারীকে দেখে অনেক আনন্দ পেলাম।
লালমনিরহাট রেলওয়ে বিভাগীয় লোকো ইনচার্জ কাজী সুমন বলেন, নারীরা এখন আর ঘরের মধ্যে বন্দি নেই। তারা সমাজের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের ভূমিকা রাখছে। নারী (এল এম) চালকদের কাজে কোন গাফলিতি নেই। ফরিদার মতো নারীরা দেখিয়ে দিচ্ছেন, কোনো পেশাই নারীদের জন্য অসম্ভব নয়। সাহস, অধ্যবসায় আর আত্মবিশ্বাস থাকলে প্রতিটি বাধা জয় করা সম্ভব।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।