বিজ্ঞান ও প্রযক্তি ডেস্ক : ‘ক্যাশলেস বাংলাদেশ’ উদ্যোগের আওতায় ২০২৭ সালের মধ্যে দেশের ৭৫ শতাংশ লেনদেন ডিজিটাল করার পরিকল্পনা নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে দেশের বেশ কিছু ব্যাংক এখনো নিজস্ব অ্যাপস চালু করতে পারেনি। আবার কিছু ব্যাংকের নিজস্ব অ্যাপস থাকলেও সেখানে বাংলা কিউআর কোডের সংযোজন করতে সক্ষম হয়নি। এতে সারা দেশে ডিজিটাল লেনদেন প্রসার বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এমন অবস্থায় সম্প্রতি দেশের ৪০ ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক করে নিজস্ব অ্যাপস চালু ও সেই অ্যাপসে বাংলা কিউআর কোড সংযোজনের কর্মপরিকল্পনা জানতে চেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ ভিশন, বাংলাদেশ প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০২১-৪১ এবং অষ্টম-পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার সঙ্গে সমন্বয় রেখে দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে ডিজিটাল পেমেন্ট ইকোসিস্টেমে আনয়নের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক ‘ক্যাশলেস বাংলাদেশ’ উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এর অংশ হিসেবে সারা দেশে কিউআর পেমেন্টসহ অন্যান্য ডিজিটাল লেনদেনে সর্বসাধারণকে উদ্বুদ্ধকরণের কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। এর আগে গত ১৮ জানুয়ারি রাজধানীর মতিঝিল এলাকায় ‘ক্যাশলেস বাংলাদেশ, স্মার্ট বাংলাদেশ’ স্লোগানে নগদবিহীন প্রচারের উদ্যোগটির পাইলট কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়। এ উদ্যোগের আওতায় মতিঝিল এবং ঢাকা শহরের অন্যান্য এলাকায় ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক ব্যবসায়ীদের ব্যক্তিক রিটেইল হিসাব খোলার মাধ্যমে বাংলা কিউআর কোডভিত্তিক পেমেন্টসহ অন্যান্য ক্যাশলেস পেমেন্ট গ্রহণের সুবিধা চালু করা হয়।
এদিকে ক্যাশলেস বাংলাদেশ উদ্যোগ বাস্তবায়নে সব ব্যাংকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে নিজস্ব অ্যাপস ও বাংলা কিউআর কোডভিত্তিক লেনদেন চালুর ওপর জোর দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ বিষয়ে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত সভায় বলা হয়, ডিজিটাল লেনদেনে সর্বসাধারণকে উত্সাহিত করা সংক্রান্ত ক্যাশলেস বাংলাদেশ উদ্যোগে বর্তমানে ২৮ ব্যাংক এবং পাঁচটি মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের অ্যাপস ও বাংলা কিউআর কোডভিত্তিক লেনদেন ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ফলে এসব ব্যাংকই কেবল বাংলা কিউআর কোডভিত্তিক লেনদেন চালু করেছে। অবশিষ্ট ব্যাংকগুলোর মধ্যে কিছুসংখ্যক ব্যাংকের নিজস্ব অ্যাপস নেই। আবার কিছুসংখ্যক ব্যাংকের অ্যাপস থাকার পরও অদ্যাবধি বাংলা কিউআর কোড সংযোজন করা হয়নি। কিন্তু ‘ক্যাশলেস বাংলাদেশ’ রোডম্যাপ অনুসারে ২০২৭ সালের মধ্যে দেশের ৭৫ শতাংশ লেনদেন ক্যাশলেস করার পরিকল্পনা বাস্তবাস্তনে অতিদ্রুত সব ব্যাংককে বাংলা কিউআর কোডভিত্তিক লেনদেন ব্যবস্থা প্রচলন করা আবশ্যক।
বেসরকারি ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, বৈঠকে কোন ব্যাংক কবে নাগাদ বাংলা কিউআর কোডে লেনদেন শুরু করতে পারবে সেই পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়েছে। দুই-একটি ছাড়া বেশির ভাগ ব্যাংকই আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে এ কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত হতে পারবে বলে জানিয়েছে।
বৈঠকে আরো জানানো হয়, প্রাথমিক পর্যায়ে ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকায় এবং চার জেলায় ‘ক্যাশলেস বাংলাদেশ’-এর কার্যক্রমের অংশ হিসেবে প্রচুরসংখ্যক মার্চেন্ট অনবোর্ড করা হলেও লেনদেনের পরিমাণ আশাব্যঞ্জক নয়। তবে রোডম্যাপ অনুসারে এ বছরের শেষাংশে সারা দেশে ক্যাশলেস বাংলাদেশের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ব্যাপকভাবে বাংলা কিউআর কোডভিত্তিক লেনদেন কার্যক্রম সম্প্রসারণের পরিকল্পনা রয়েছে। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ব্যাপকভাবে বাংলা কিউআর কোডভিত্তিক লেনদেন কার্যক্রম শুরু করতে হবে। এ জন্য সব ব্যাংক ও মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসকে অন্তর্ভুক্ত করা সমীচীন হবে।
এর আগে গত ২ এপ্রিল দেশের সব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত ব্যাংকার্স সভায় বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেমস বিভাগ থেকে ক্যাশলেস বাংলাদেশ উদ্যোগ সংক্রান্ত একটি উপস্থাপনা তুলে ধরা হয়। ঐ উপস্থাপনায় বলা হয়, কিউআর কোডভিত্তিক পরিশোধ ব্যবস্থার প্রসারে ইন্টারঅপারেবল বাংলা কিউআর কোড সমর্থিত অ্যাপ এবং মার্চেন্ট পয়েন্ট প্রয়োজন। তাই ইন্টারঅপারেবল বাংলা কিউআর কোড সমর্থিত অ্যাপ এবং মার্চেন্ট পয়েন্টের সংখ্যা বৃদ্ধির মাধ্যমেই কিউআর কোডভিত্তিক লেনদেনের পরিমাণ বৃদ্ধি সম্ভব।
উপরন্তু ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়পক্ষকে প্রথাগত ক্যাশভিত্তিক লেনদেন হতে ডিজিটাল পেমেন্টের মাধ্যমে অভ্যস্ত করতে হবে। তাই এ ক্যাম্পেইনের আওতায় অবকাঠামো স্থাপনের পাশাপাশি ক্রেতা-বিক্রেতাদের সচেতনতা এবং আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্যও উদ্যোগ গ্রহণ করার প্রয়োজন রয়েছে। ব্যাংক ও অন্যান্য আর্থিক সেবাপ্রদানকারী ও তাদের গ্রাহকদের সমন্বিত প্রয়াসের মাধ্যমেই ক্যাশলেস লেনদেনের অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।