মাসুদ রুমী : দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে নিজ নিজ মুদ্রা ব্যবহার করে লেনদেন নিষ্পত্তি করতে সম্মত হয়েছে বাংলাদেশ ও ভারত। প্রক্রিয়াগত কাজ শেষ করে জুন মাস থেকে টাকা ও রুপিতে এই লেনদেন শুরু করা হবে। তৃতীয় কোনো মুদ্রার সংশ্লিষ্টতা ছাড়া সরাসরি টাকা ও রুপি ব্যবহার করে আমদানি-রপ্তানির মূল্য বিনিময় করবে দুই দেশ। এতে দুই দেশের লেনদেনের অংশবিশেষে ডলারের ওপর চাপ কমবে। পর্যায়ক্রমে ভারতে বাংলাদেশের রপ্তানি যত বাড়বে, রুপিতে বাণিজ্যের সম্ভাবনা তত বাড়বে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশ থেকে ভারতে রপ্তানির পরিমাণ প্রায় দুই বিলিয়ন ডলার। এর বিপরীতে বাংলাদেশ ভারত থেকে পণ্য আমদানি করেছে ১৩.৬৯ বিলিয়ন ডলারের। দুই বিলিয়ন ডলারের যে রপ্তানি করছে বাংলাদেশ, সে পরিমাণ বাণিজ্য ভারতীয় মুদ্রায় করার কথা ভাবা হচ্ছে। ফলে বাংলাদেশকে আমদানি মূল্যের বাকি অংশ আমদানি ব্যয় আগের মতো মার্কিন ডলারে পরিশোধ করতে হবে।
সূত্র জানায়, এই সিদ্ধান্ত কার্যকরের জন্য ভারতীয় স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া ও আইসিআইসিআই ব্যাংকে লেনদেন হিসাব খোলার প্রক্রিয়া শুরু করেছে সোনালী ব্যাংক ও ইস্টার্ন ব্যাংক। একইভাবে বাংলাদেশের এ দুটি ব্যাংকে হিসাব খুলছে ভারতীয় দুই ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, ব্যাংকগুলো রুপিতে এলসি করতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংক তাতে অনুমতি দেবে। বাংলাদেশের কোনো ব্যবসায়ী আমদানি বা রপ্তানির ক্ষেত্রে রুপিতে এলসি খুলতে চাইলে তা করতে পারবেন।
জানতে চাইলে ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (আইবিসিসিআই) সভাপতি ও নিটল-নিলয় গ্রুপের চেয়ারম্যান আবদুল মাতলুব আহমাদ বলেন, ‘এখন ব্যাংকে গেলে বলা হয় ডলার নেই। আবার পাওয়া গেলেও বেশি দাম দিতে হচ্ছে। এই পরিস্থিতির মধ্যে আমরা যদি দুই বিলিয়ন ডলার রুপি-টাকায় লেনদেন করতে পারি, তাহলে আমাদের সাশ্রয় হবে। আবার সরকারও এই দুই বিলিয়ন ডলার অন্য খাতে ব্যবহার করতে পারবে। সম্প্রতি ভারত থেকে একটি প্রতিনিধিদল ঢাকায় এসেছিল। তারা বাংলাদেশের দুটি ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা করেছে। দুই দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটা জুন মাস থেকেই শুরু হয়ে যাবে।’
এই পদ্ধতি চালু করা গেলে ভারতকে বাণিজ্যিক লেনদেনে যে পরিমাণ অর্থ দিতে হতো, তার একটি অংশ আর বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে দিতে হবে না। ফলে রিজার্ভের ওপর কিছুটা হলেও চাপ কমবে বলে আশা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, ‘ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে নিজ নিজ মুদ্রায় লেনদেনের জন্য দুই দেশের চারটি ব্যাংক বর্তমানে হিসাব খোলার কাজ করছে। এগুলো শেষ হলে এটি চালু হবে। আমাদের এখানকার ব্যাংক ওখানে এবং ওখানকার ব্যাংক আমাদের এখানে অ্যাকাউন্ট খুলবে।’
তিনি আরো বলেন, এতে এক্সচেঞ্জ রেটের ক্রস কনভারশন কিছুটা কমে আসবে। ব্যবসার খরচও কমবে। এটি চালু হওয়ার পর বোঝা যাবে কতটা সাশ্রয় হয়।
ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেডের (ইবিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী রেজা ইফতেখার বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিয়ে স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া ও আইসিআইসিআই ব্যাংকের কাছে অ্যাকাউন্ট খুলতে চিঠি পাঠিয়েছি। অ্যাকাউন্ট খোলা হয়ে গেলে ওরা একইভাবে আমাদের এখানে অ্যাকাউন্ট খুলবে। এগুলো শেষ হলে যাঁরা দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা করেন, তাঁদের নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে এটি উদ্বোধন করা হবে। আশা করছি জুনে টাকা-রুপির লেনদেন চালু করা যাবে।’
তিনি বলেন, ‘এতে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ডলারের ওপর নির্ভরতা খুব একটা থাকবে না। তবে এটা শুধু বাণিজ্যের ক্ষেত্রে, সাধারণ ভ্রমণকারীদের জন্য নয়।’
কেন টাকা-রুপিতে লেনদেন : রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্বজুড়ে ডলারের দামে অস্থিরতা চলছে। বাংলাদেশে ডলারের দাম ২০ শতাংশের বেশি বেড়েছে। কিন্তু বাড়তি দামেও ডলার পাওয়া যাচ্ছে না। এ অবস্থায় ডলার জোগান দিতে গিয়ে চাপ পড়ছে রিজার্ভের ওপর। আবার ব্যাংকগুলোতে চাহিদামতো ডলার না পাওয়ায় ব্যাহত হচ্ছে আমদানিপ্রক্রিয়া। এ ধরনের পরিস্থিতিতে অনেক দেশই বর্তমানে ডলারের পরিবর্তে নিজস্ব মুদ্রায় দ্বিপক্ষীয় লেনদেন ব্যবস্থা চালু করছে।
গবেষণা সংস্থা পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের (পিইবি) চেয়ারম্যান এম মাশরুর রিয়াজ বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে রুপিতে লেনদেনের উদ্যোগটি ভালো। এখান থেকে স্বল্প মেয়াদে সুফল আশা করা ঠিক হবে না। কারণ তাদের সঙ্গে আমাদের বাণিজ্য ঘাটতি বেশি। আমরা যতটুকু ভারতে রপ্তানি করে রুপি পাব, ততটুকুই লেনদেন করতে পারব। মুদ্রার প্রাপ্যতার দিক থেকে আমরা প্রতিকূল অবস্থায় আছি, এ কারণে বড় সুফল নিতে পারব না। বেসরকারি খাতে এটি জনপ্রিয় করতে সময় লাগবে। তবে জিটুজি পদ্ধতিতে দুই দেশের মধ্যে ঋণ বা অন্য যেসব লেনদেন হয়, সেগুলো খুব দ্রুত করা যাবে।’
সম্প্রতি রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া (আরবিআই) আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে রুপির ব্যবহার সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করেছে। নির্দেশনায় বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে, বিশেষ করে রপ্তানিতে গতি আনতে এ উদ্যোগ। ভারতের রপ্তানি বাণিজ্যসহ সার্বিক আন্তর্জাতিক ব্যবসা বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। সূত্র : কালের কণ্ঠ
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।