জুমবাংলা ডেস্ক : গাছে গাছে ঝুলছে ডাঁশা ডাঁশা বারি-৪, ব্যানানা ম্যাঙ্গো, কাটিমন ও গৌরমতি আম। এছাড়া কিছু গাছে ছোট ছোট আমের গুটি। আবার কিছু গাছে মুকুল। অর্থাৎ বাগানটিতে সারা বছর আম পাওয়া যাবে খুব সহজেই। আর এই বিশেষ পদ্ধতি অবলম্বন করে মৌসুমের আম অমৌসুমে অর্থাৎ সারা বছর আম ফলিয়ে জেলায় সকল চাষিদের তাক লাগিয়ে দিয়েছেন সফল কৃষি উদ্যোক্তা নওগাঁর রায়হান আলম। এখানকার আমগুলো অফ-সিজনে হওয়ায় অত্যন্ত সুস্বাদু, সুমিষ্ট এবং বিভিন্ন ফ্লেবারের। স্বাভাবিকভাবে বারি-৪ ও ব্যানানা ম্যাঙ্গো জুলাই মাসে শেষ হয়ে যায়।
আর কাটিমন জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়ে শেষ হয়। কিন্তু আগস্ট, সেপ্টেম্বর কিংবা তারপরে এসব আম সারা বছর পাওয়ার কথা কেউ ভাবতে পারেনি। কিন্তু গাছে মুকুল বিলম্ব করে আসা মৌসুমের আম অমৌসুমে উৎপাদন করে অন্য চাষিদের কাছে দৃষ্টান্ত তৈরি করেছেন সফল কৃষি উদ্যোক্তা রায়হান আলম। নওগাঁতে এই প্রথম বারি-৪, ব্যানানা ম্যাঙ্গো, কাটিমন ও গৌরমতি আমে এ পদ্ধতি ব্যবহার করে সফল হয়েছেন তিনি।
জানা গেছে, দেশের অন্যতম আম উৎপাদকারী জেলা নওগাঁয় দিন দিন বাড়ছে আম চাষের পরিধি। এ জেলায় সাধারণত জুনের মাঝামাঝি সময় থেকে জুলাই পর্যন্ত আমের ভরা মৌসুম থাকে। এই সময়ে এক সঙ্গে অধিক পরিমাণে আম বাজারে আমদানি হওয়ায় চাষিরা আমের ভালো দাম পান না। তাই বিশেষ পদ্ধতি অবলম্বন করে মৌসুমের আম অমৌসুমে অর্থাৎ সারা বছর আম ফলিয়ে জেলায় সকল আম চাষিদের তাক লাগিয়ে দিয়েছেন সফল কৃষি উদ্যোক্তা নওগাঁর রায়হান আলম। এই আমগুলো অত্যন্ত সুস্বাদু, সুমিষ্ট ও বিভিন্ন ফ্লেবারের। নওগাঁতে এই প্রথম বারি-৪, ব্যানানা ম্যাঙ্গো, কাটিমন ও গৌরমতি আমে এ পদ্ধতি ব্যবহার করে সফল হয়েছেন তিনি। আর তাকে সকল দিক দিয়ে সহযোগিতা করছেন কৃষিবিভাগ।
সফল কৃষি উদ্যোক্তা রায়হান আলম বলেনÑ ২০১৯ সালে নওগাঁর পোরশা উপজেলার বন্ধুপাড়া এলাকায় আমবাগান করেন তিনি। শুরুতে তিনি নাবি জাতের গৌড়মতি আমগাছ লাগান। পরবর্তীতে গৌড়মতি জাতের কিছু গাছের ডাল কেটে ওইসব ডালে কলম করে বারি-৪, ব্যানানা ম্যাঙ্গো, কাটিমন ও গৗরমতি জাতে রূপান্তরিত করেন। মৌসুমের আম অমৌসুমে নেওয়ার জন্য চলতি বছর আমগাছে মুকুল আসার এক মাস আগে গাছগুলোর ডাল ভেঙে দেন। এরপর গাছের গোড়ায় রাসায়নিক ও জৈব সার ব্যবহার করেন। এছাড়া কৃষি বিভাগের পরামর্শে এক ধরনের হরমোন খুব সীমিত পরিমাণে ব্যবহার করেন। এতে ওইসব গাছে মার্চের পরিবর্তে মে মাসের দিকে মুকুল আসে। সেই মুকুলের আম এখন বড় হয়েছে। আর গত ২১ আগস্ট বারি-৪ জাতের আম বাজারে বিক্রি করেছেন প্রতি মণ ১২,৭০০ টাকা দরে।
অথচ মৌসুমের সময় ওই আম বিক্রি হয়েছে মাত্র ২০০০-২৫০০ টাকায়। তিনি আরও বলেন, মুকুল আসা বিলম্বিত করে মৌসুমের আম অমৌসুমে উৎপাদন করলে ৪-৫ গুণ বেশি লাভবান হওয়া যায। মুকুল আসা বিলম্বিত করে ফলনে কোনো ঘাটতি হয়নি। বরং লাভ হয়েছে অনেক। এর আগে বারোমাসি আম বারি-১১ ও কাটিমনে এ পদ্ধতি ব্যবহার করে অসময়ে আম ফলানোর ঘটনা ঘটলেও নওগাঁতে এই প্রথম বারি-৪, ব্যানানা ম্যাঙ্গো, কাটিমন ও গৌরমতি আমে এ পদ্ধতি ব্যবহার করে সফল হয়েছেন তিনি। মুকুল আসা বিলম্বিত করে দেরিতে আম নেওয়ায় রায়হানের সফলতা দেখে অন্য আম চাষিরা উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন।
বাগানে কর্মরত শ্রমিকরা জানান, আমগুলো অত্যন্ত সুস্বাদু ও সুমিষ্ট। বাগানে নিয়মিত ১৫-২০ শ্রমিক বাগানের পরিচর্যা করে থাকেন। আর তারা যে পারিশ্রমিক পান তা দিয়ে সংসার ও পরিবার-পরিজন পরিচালনা করে থাকেন। আম ব্যবসায়ী মিঠুন হোসেন বলেন, মৌসুমের আম অমৌসুমে পেয়ে ক্রেতারা হুমড়ি খাচ্ছেন। আর জেলার একমাত্র সফল আম চাষি রায়হানের বাগানের বিভিন্ন জাতের আম ঢাকা, কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হচ্ছে। অসময়ে আম পাওয়ায় দামও অনেক। আর লাভ বেশি হওয়ায় সকলেই খুশি।
পোরশার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সেলিম রেজা বলেন, সিজনের সময় গাছে মুকুল এলে সেইসব মুকুল ও গাছের ডাল কেটে ওইসব গাছে ঠিক দুই মাস পরে আবারও মুকুল আসবে। এইভাবে মুকুল ধরা বিলম্বিত করে অমৌসুমে আম উৎপাদন করা সম্ভব। রায়হান শিক্ষিত। আম উৎপাদনের ক্ষেত্রে সবরকমের পরামর্শ এবং টেকনিক্যাল সাপোর্ট প্রদানের আশ্বাস তার। লেট ভ্যারাইটি জাতের আম বরেন্দ্র জেলা নওগাঁয় প্রথম চাষ করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন রায়হান। তাই দিন দিন এসব আম চাষ আরও বৃদ্ধি পাবে এমনটি মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।