জুমবাংলা ডেস্ক : মাছ, ফল ও সবজি জাতীয় পণ্য আমদানিতে শুল্ক নির্ধারণে নতুন নীতিমালা দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। নীতিমালায় পণ্যবাহী ট্রাকের চাকা অনুপাতে নির্ধারণ করা হয়েছে আমদানি পণ্যের শুল্ক। এতেই দেখা দিয়েছে বিপত্তি। নতুন এ নীতির প্রতিবাদ জানিয়ে যশোরের বেনাপোল বন্দরে গত বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) থেকে পণ্যবাহী ট্রাক খালাস বন্ধ রেখেছেন ব্যবসায়ীরা।
পণ্য খালাস বন্ধ থাকায় সরকার বঞ্চিত হচ্ছে রাজস্ব আয় থেকে। এনবিআরের নতুন নির্দেশনায় দেশে পণ্যের বাজার ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার শঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা। ক্ষোভ জানিয়ে নীতি বাতিলের দাবিতে করছেন বিক্ষোভকারীরা।
বন্দরসূত্রে জানা যায়, বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারত থেকে যেসব পণ্য আমদানি হয় তার বড় একটি অংশ ফল, মাছ ও সবজি। সাধারণত পণ্যের পরিমাপ ও সংখ্যার ওপর ভিত্তি করে আমদানি শুল্ক আদায় করা হয়ে থাকে। কিন্তু এনবিআর ফল, সবজি ও মাছের ক্ষেত্রে কত চাকার ট্রাকে পণ্য আসছে এই ভিত্তিতে শুল্ক আদায় করার নির্দেশনা দিয়েছে।
গত ২৩ জুন ট্রাকের চাকা অনুপাতে পণ্যের ওজন বাড়িয়ে শুল্ক নির্ধারণ করতে বন্দর কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেয় এনবিআর। এতে প্রতি ট্রাক পণ্যতে অতিরিক্ত তিন থেকে চার লাখ টাকা গুনতে হচ্ছে। এক পর্যায়ে লোকসানে পড়ে পণ্য খালাস বন্ধ রাখেন ব্যবসায়ীরা। আর নতুন করে চাপিয়ে দেয়া এ শুল্ক প্রত্যাহারে কাস্টমসের সামনে বিক্ষোভ করেছেন তারা।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ এ নিয়মে পণ্য আমদানি যেমন কমবে তেমনি সরকার রাজস্ব ও হারাবে।
আমদানি-রফতানি সমিতির সহসভাপতি আমিনুল হক জানান, প্রতিদিন বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারত থেকে শতাধিক ট্রাকে মাছ, ফল ও সবজিজাতীয় পণ্য আমদানি হয়। খালাস বন্ধ থাকায় গত তিন দিনে সরকার ৫০ কোটি টাকা রাজস্ব হারিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এনবিআরের নির্দেশনা পত্রে বলা হয়েছে ছয় চাকার ট্রাকে কমলা, মালটার জন্য বাধ্যতামূলক ১৮ টনের শুল্ক দিতে হবে। ১০ চাকার ট্রাকে আনা পণ্যের ২০ টনের শুল্ক দিতে হবে। ১৪ চাকার ক্ষেত্রে ২৫ টনে এবং ১৬ বা তার অধিক চাকার গাড়িতে থাকা পণ্যের ২৬ টনের শুল্ক দিতে হবে।
এছাড়াও ছয় চাকার ট্রাকে থাকা হিমায়িত মাছের জন্য ছয় টনের শুল্ক দিতে হবে। দশ চাকার ট্রাকের ১০ টনের, ১২ চাকার ট্রাকের ১৩ টনের শুল্ক, ১৪ চাকার ক্ষেত্রে ১৮ টনের এবং ১৬ বা তার অধিক চাকার গাড়িতে থাকা পণ্যের ২০ টনের শুল্ক দিতে হবে।
তিনি আরও জানান, টমেটো আমদানিতে ছয় চাকার ট্রাকের জন্য ১৮ টনের, দশ চাকার জন্য ২০ টনের, ১২ চাকার জন্য ২৪ টনের এবং ১৬ বা তার অধিক চাকার গাড়িতে থাকা পণ্যের ৩০ টনের শুল্ক দিতে হবে।
এমন পরিস্থিতিতে বন্দরে আটকে আছে ট্রাক চালকরা।
বন্দরে মাছ নিয়ে আটকে থাকা ট্রাক চালক মহিদুর রহমান জানান, কাস্টমস ছাড়পত্র না দেওয়ায় তিন দিন আটকে থেকে পণ্য নষ্ট হচ্ছে। তাদেরও ভোগান্তির শেষ নেই। একই কথা জানান সবজি বহনকারি ভারতীয় ট্রাক চালক উত্তম।
আমদানি-রফতানি কারক উজ্বল বিশ্বাস জানান, এনবিআর নির্দেশনায় বলেছে কোনো পণ্যবাহী ট্রাকে পণ্যের ওজন কম-বেশি হলে তা শতভাগ ওজন করে খালাস দেয়া যাবে। তবে কাস্টমস এনবিআরের চার নম্বর শর্ত মানছে না। ফলে পণ্য খালাস কঠিন হয়ে পড়ছে।
আমদানিকারক আবুল হোসেন জানান, এনবিআরের নির্দেশনায় খালাস বন্ধ থাকায় কেবল ব্যবসায়ীরা ক্ষতির মুখে পড়েনি, এতে আমদানি কমায় সরকারও রাজস্ব হারাচ্ছে।
বেনাপোল কাস্টমস হাউসের রাজস্ব কর্মকর্তা জাহিদ হাসান জানান, এনবিআরের নতুন আদেশ তারা কার্যকর করছেন। তবে কয়েকজন আমদানিকারক অভিযোগ জানিয়ে পণ্য খালাস নিচ্ছে না। আবার কেউ খালাস নিয়েছেন। তবে যারা পণ্য খালাস নেয়নি তাদের বিষয়ে সভা করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেবে।
সূত্র : সময় নিউজ
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।