আন্তর্জাতিক ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে ভয়েস অব আমেরিকার ১ হাজার ৩০০ জনের বেশি কর্মীকে শনিবার (১৫ মার্চ) থেকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের আরও দুটি সংবাদমাধ্যমের তহবিলও বাতিল করা হয়েছে।
এর এক দিন আগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সরকারি তহবিলে পরিচালিত সংবাদমাধ্যম ভয়েস অব আমেরিকার মূল প্রতিষ্ঠান এবং আরও ছয়টি ফেডারেল সংস্থাকে কর্মী হ্রাস করার নির্দেশ দিয়েছিলেন।
ভয়েস অব আমেরিকার পরিচালক মাইকেল আব্রামোভিচস বলেন, তার প্রতিষ্ঠানের প্রায় ১ হাজার ৩০০ সাংবাদিক, প্রযোজক ও সহযোগীদের প্রায় সবাইকে প্রশাসনিক ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। এর মাধ্যমে প্রায় ৫০টি ভাষায় পরিচালিত এই সম্প্রচার মাধ্যমকে প্রায় পঙ্গু করে দেওয়া হচ্ছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম লিংকডইনে এক পোস্টে আব্রামোভিচ লেখেন, ‘৮৩ বছরের মধ্যে প্রথমবার বহু ভাষাভাষীর ভয়েস অব আমেরিকা নীরব হয়ে যাচ্ছে, এ জন্য আমি গভীরভাবে ব্যথিত। বিশ্বজুড়ে স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের পক্ষে লড়াইয়ে এটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছিল।’
ভয়েস অব আমেরিকা, রেডিও ফ্রি এশিয়া, রেডিও ফ্রি ইউরোপ ও অন্যান্য গণমাধ্যমের হাজারো কর্মী সপ্তাহান্তে ইমেইলের মাধ্যমে জানতে পেরেছেন, তারা তাদের কার্যালয়ে ঢুকতে পারবেন না এবং শিগগিরই প্রেস পাস ও অফিসের কাছ থেকে পাওয়া অন্যান্য উপকরণ ফিরিয়ে দিতে হবে।
৪৩ দেশের ওপর যুক্তরাষ্ট্রে ‘ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা’র পরিকল্পনা ট্রাম্প প্রশাসনের দীর্ঘদিন ধরে রাশিয়া ও চীনের তথ্য অপপ্রচার মোকাবিলায় এসব গণমাধ্যমকে গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে।
ইতোমধ্যে ট্রাম্প মার্কিন আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থা ইউএসএইড ও দেশটির কেন্দ্রীয় শিক্ষা দপ্তরের কার্যক্রম প্রায় বন্ধ করে দিয়েছেন। তিনি শুক্রবার একটি নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে জানান, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম-সংক্রান্ত মার্কিন এজেন্সি (ইউএসএজিএম) হচ্ছে এমন একটি সংস্থা যার মধ্যে ফেডারেল আমলাতন্ত্রের আলামত রয়েছে, যা প্রেসিডেন্ট অপ্রয়োজনীয় বলে মনে করেন।
বর্তমানে ইউএসএজিএমের বিশেষ উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করছেন কট্টর ট্রাম্পসমর্থক হিসেবে পরিচিত কারি লেইক। তিনি ওই গণমাধ্যমগুলোকে ইমেইল করে জানান, তারা আর কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে তহবিল পাবেন না।
হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, তহবিল কর্তনের অর্থ হলো, ‘করদাতাদেরকে আর উগ্র প্রোপাগান্ডার জন্য অর্থের জোগান দিতে হবে না’।
বিশ্লেষকদের মতে, এই বক্তব্যের মাধ্যমে মার্কিন সরকার এ ধরনের গণমাধ্যম নিয়ে তাদের সুর পাল্টেছে। এতদিন পর্যন্ত এগুলোকে বহির্বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব বাড়ানোর উপকরণ হিসেবে বিবেচনা করা হত।
ভয়েস অব আমেরিকার পরিচালক মাইকেল আব্রামোউইৎজ জানান, শনিবার এক হাজার ৩০০ কর্মীকে ছুটিতে পাঠানো হয়েছে, যাদের মধ্যে তিনি অন্যতম।
‘ভয়েস অব আমেরিকার সুচিন্তিত সংস্কার প্রয়োজন, এবং আমরা এ বিষয়ে অগ্রগতিও দেখেছি। কিন্তু আজকের এই পদক্ষেপের পর ভয়েস অব আমেরিকা আর তাদের গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রমগুলো চালিয়ে যেতে পারছে না’, যোগ করেন তিনি।
ফেসবুকে দেওয়া পোস্টে তিনি আরও জানান, ৪৮টি ভাষায় ভয়েস অব আমেরিকা সেবা দিয়ে থাকে, যার গ্রাহক প্রতি সপ্তাহে কমপক্ষে ৩৬ কোটি মানুষ।
রেডিও ফ্রি ইউরোপ ও রেডিও লিবার্টির প্রধান স্টিফেন কেইপাস তহবিল বাতিলের বিষয়টিকে ‘আমেরিকার শত্রুদের জন্য সুবিশাল উপহার’ বলে অভিহিত করেন।
স্টিফেন এক বিবৃতিতে বলেন, ‘৭৫ বছর পর আরএফই/আরএল বন্ধ হয়ে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে ইরানের আয়াতুল্লাহ, চীনের কমিউনিস্ট নেতা এবং মস্কো ও মিনস্কের একনায়করা উদযাপন করবেন।’
তহবিল ও অর্থায়ন বন্ধের অন্যান্য উদ্যোগের মত ট্রাম্পের এই পরিকল্পনার বাস্তবায়নেও নানা বাধা আসবে বলে মত দিয়েছেন বিশ্লেষকরা। অর্থায়নের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার সাংবিধানিক কর্তৃত্ব দেশটির কংগ্রেসের কাছে থাকে, প্রেসিডেন্টের কাছে নয়।
অতীতে এই গণমাধ্যমগুলো, বিশেষত, রেডিও ফ্রি এশিয়া ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান, উভয় দলের প্রতিনিধিদের কাছ থেকেই সমর্থন পেয়ে এসেছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।