জুমবাংলা ডেস্ক : আওয়ামী লীগ সরকারের পতন এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশ ছেড়ে পালানোর তিন মাস পরে ঢাকায় একটি কর্মসূচির ডাক দিয়েছে আওয়ামী লীগ। দলটি নিজেদের ফেসবুক পোস্টে নেতাকর্মীরদের এই কর্মসূচিতে অংশ নেয়ারও আহবান জানিয়েছে। খবর বিবিসি’র।
তবে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বলেছে এ ধরনের কোন কর্মসূচির চেষ্টা করা হলে তা কঠোরভাবে প্রতিহত করা হবে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ লিখেছেন, গণহত্যাকারী/ নিষিদ্ধ সংগঠনের কেউ কর্মসূচি করার চেষ্টা করলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আওয়ামী লীগের ঘোষণার পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনও রোববার একই স্থানে পাল্টা গণজমায়েতের ঘোষণা দিয়েছে।
তবে আত্নগোপনে থাকা অবস্থায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির অন্তত দু’জন নেতা বিবিসি বাংলাকে বলেছেন ১০ই নভেম্বর রোববার তারা গুলিস্তানের জিরো পয়েন্টে কর্মসূচি পালন করবে।
দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাসিম বিবিসি বাংলাকে বলেন, “আমরা গণতন্ত্রের অধিকার ফিরে পাওয়ার জন্য গণমিছিল কর্মসূচির ডাক দিয়েছি। আমরা এটা পালন করবো। কিন্তু সরকার থেকে হুঙ্কার দেয়া হচ্ছে আওয়ামী লীগকে যেতে দেওয়া হবে না। এটা সরকারের কোন ধরনের গণতান্ত্রিক আচরণ”?
গত শুক্রবার ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি অডিও কল রেকর্ড প্রকাশিত হয় বিভিন্ন গণমাধ্যমে।
সেখানে শেখ হাসিনাকে বলতে শোনা যায় গুলিস্তানের কর্মসূচিতে যেন নেতাকর্মীরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ছবি নিয়ে অংশগ্রহণ করে।
যদিও সেই অডিও রেকর্ডটি স্বাধীনভাবে যাচাই করতে পারেনি বিবিসি বাংলা।
এটি নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা মি. নাসিমকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, “উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে কেউ যদি সেই মিছিলে ট্রাম্পের ছবি নিয়ে অংশ নেয় সেটা করতেই পারে। সে অধিকার তাদের আছে”।
তিন মাস পর আওয়ামী লীগের কর্মসূচি
গত পাঁচই অগাস্ট গণআন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর গা ঢাকা দিয়ে আছে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের অনেকে।
কেন্দ্রীয় নেতাদের অনেকেই আত্নগোপনে আছেন, কেউ কেউ দেশত্যাগ করেছেন, কেউ কেউ আটকও হয়েছেন।
সরকার পতনের দশ দিনের মাথায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের একটি ফেসবুক পোস্টের পর গত পনেরো অগাস্ট শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীতে আওয়ামী লীগের কিছু নেতাকর্মী ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে গেলে সেখানে সমবেত ছাত্র-জনতা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাধার মুখে পড়ে।
এরপর গত তিন মাসে আওয়ামী লীগের কোন আনুষ্ঠানিক কর্মসূচি দেখা যায়নি।
১৯৮৭ সালের সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে নিহত নূর হোসেনের স্মরণে প্রতি বছর ১০ই নভেম্বর বাংলাদেশে নূর হোসেন দিবস পালিত হয়।
আওয়ামী লীগ শনিবার তাদের ভেরিফাইড ফেসবুক পেইজে রোববারের এই কর্মসূচিতে অংশ নিতে দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি নির্দেশ দিয়ে বেশ কয়েকটি পোস্ট করে।
আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বিবিসি বাংলাকে বলেন, “কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগ নূর হোসেনকে স্মরণ করবে, শ্রদ্ধা জানাবে এটা আওয়ামী লীগের রুটিন কর্মসূচি। এটা আমাদের রাজনৈতিক, দলের গণতান্ত্রিক অধিকার”।
তিন মাস পর হঠাৎ কেন এই দিবসটি পালনে এতটা তৎপর আওয়ামী লীগ সেটি নিয়েও প্রশ্ন করা হয়েছিল দলটির নেতাদের কাছে।
আত্নগোপনে থাকা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মি. নাসিম বিবিসি বাংলাকে বলেন, “যেহেতু এখন মানুষের মৌলিক কোন অধিকার এখন আর অবশিষ্ট নেই। দখলদার সরকার মানুষের টুটি চেপে ধরে আছে। সে কারণে গণতন্ত্র মুক্তির দাবিতে আমাদের এই কর্মসূচি”।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ বিবিসি বাংলাকে বলেন, “আওয়ামী লীগের এই ঘোষণাটা একটা ফাঁকা আওয়াজও মনে হতে পারে। যারা আত্নগোপনে চলে গেছে তারা প্রকাশ্য হওয়ার ঝুঁকি নেবে কী-না সেটা বলা মুশকিল”।
শেখ হাসিনার নির্দেশনা কি সত্য?
আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে বিভিন্ন কথপোকথনের কল রেডর্ক ফাঁস হতে দেখা গেছে গত কয়েক মাসে।
সেখানে দলীয় নেতাকর্মীদের বিভিন্ন ধরনের নির্দেশনা দিতেও দেখা গেছে। কিন্তু সে সব নিয়ে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে স্পষ্ট করে কিছু বলা হয় নি কখনো।
গত শুক্রবার দলীয় এক নেতার সাথে এমন একটি কথপোকথনের অডিও রেকর্ড একটি গণমাধ্যমে প্রকাশের পর তা ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
সেই অডিওতে শেখ হাসিনার কণ্ঠে বলতে শোনা যায়, ডোনাল্ড ট্রাম্পের ছবি নিয়ে মিছিলে আসার জন্য একজনকে নির্দেশনা দিচ্ছেন তিনি।
যদিও সেই অডিওটির সত্যতা স্বাধীনভাবে যাচাই করতে পারেনি বিবিসি বাংলা।
তবে এ নিয়ে প্রশ্ন করা হয় আত্নগোপনে থাকা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মি. নাসিমের কাছে।
তিনি বিবিসি বাংলাকে কল রেডর্কের সত্য-মিথ্যা নিয়ে স্পষ্টভাবে কিছু বলেন নি।
তবে তিনি নতুন নির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ছবিসহ নেতাকর্মীরা থাকতে পারে এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন।
বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেছেন, “ব্যক্তিগত উদ্যোগ থেকে যে কেউ ট্রাম্পের ছবি নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে পারে। নূর হোসেন দিবসে ট্রাম্পের ছবি ব্যবহার করলে সেটি সাংঘর্ষিক কোন বিষয় হবে না। কারণ দুটো বিষয়ের সাথে কোন সংঘাতপূর্ণ সম্পর্ক নেই।
যদিও দলের অপর নেতা খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বিবিসি বাংলার কাছে দাবি করেছেন ফাঁস হওয়া শেখ হাসিনার কল রেকর্ডটি ‘সম্ভবত সত্য নয়’।
প্রতিহতের ঘোষণা সরকারের
শুক্রবার ওই কল রেকর্ডটি ছড়িয়ে পড়ার পরই ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ আবার মাঠে নামছে কী না সেটি নিয়ে নানা প্রশ্ন তৈরি হয়।
কিন্তু শনিবার যখন একই দিন বিকেল তিনটায় গুলিস্তানে নূর হোসেন দিবসে কর্মসূচি পালনে দলীয় নেতাকর্মীদের অংশ নিতে বলা হয় দলীয় ফেসবুকে তখনই এটি নিয়ে নড়েচড়ে বসে সরকার।
শনিবার সকালে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম তার ভেরিফাইড ফেসবুক একাউন্টে লিখেন, “বর্তমানে আওয়ামী লীগ একটি ফ্যাসিস্ট দল। এই ফ্যাসিস্ট দলকে বাংলাদেশে কোনো ধরনের প্রতিবাদ সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়া হবে না”।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই কর্মসূচি ঘোষণা শুধু ঘোষণাই থাকতে পারে কিংবা আওয়ামী লীগ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিও ঘটাতে পারে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ বিবিসি বাংলাকে বলেন, “তারা যদি বের হয়, তারা যদি ল অ্যান্ড অর্ডার চিচুয়েশন ক্রিয়েট করে তাহলে তা পুলিশ দিয়ে কতটুকু কন্ট্রোল করা যাবে সেটি নিয়ে সন্দেহ আছে”।
তবে তিনি অবশ্য এটিও বলছেন, শেষ পর্যন্ত সেনাবাহিনী মাঠে নামতে পারে সেক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা ঘোষণা দিলেও শেষ পর্যন্ত সেভাবে মাঠে নাও নামতে পারে”।
পাল্টা কর্মসূচি বৈষম্যবিরোধী
আওয়ামী লীগের এই ঘোষণার পর শনিবার রাতে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের এই কর্মসূচি প্রতিহতের ঘোষণা দিয়েছে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
রোববার দুপুর ১২টায় গুলিস্তান জিরো পয়েন্টে নূর হোসেন চত্ত্বরে গণজমায়েতের ডাক দেয়া হয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে।
সংগঠনটি বলছে আওয়ামী লীগকে শেষ পর্যন্ত এই কর্মসূচি পালন করতে দেবে না বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
গণজমায়েত কর্মসূচি ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহবায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ শনিবার রাতে তার নিজস্ব ফেসবুক ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে পোস্টও দিয়েছেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মূখ্য সংগঠক আব্দুল হান্নান মাসুদ বিবিসি বাংলাকে বলেন, “আমরা স্বৈরাচারের সাথে কোন আপোষ করবো না। দেশের মানুষকে সাথে নিয়ে প্রতিহত করা হবে। কারণ ছাত্ররা জানে কীভাবে স্বৈরাচার প্রতিহত করতে হয়”।
বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ বলছেন, “আওয়ামী লীগের তাদের ভুলগুলো না খুঁজে নিজেদের উৎখাতের পেছনে ষড়যন্ত্রকেই খুঁজেছে সব সময়। তাদের এই কর্মসূচি দলীয় কিছু উত্তেজনা ছড়ানো ছাড়া এই মুহুর্তে দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কোন কাজের কর্মসূচি নয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।