আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ইউক্রেইন যুদ্ধ বন্ধে রাশিয়ার সঙ্গে তুরস্কে দু’পক্ষের সরাসরি আলোচনার সম্ভাবনা তৈরি হওয়ায় তাতে অংশ নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প।
সোমবার হোয়াইট হাউজে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, বৃহস্পতিবার উপসাগরীয় আরব দেশগুলো সফরে থাকার সময় তিনি রাশিয়া-ইউক্রেইন শান্তি আলোচনায় যোগ দিতে তুরস্কে যেতে পারেন।
ইস্তাম্বুলের এই আলোচনা ইউক্রেইন যুদ্ধ বন্ধে সহায়ক হতে পারে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি। বিদেশ সফরে রওনা হওয়ার আগে ট্রাম্প বলেন, “আমার ইতোমধ্যেই অনেক বৈঠক জমে গেছে। তবে আমি আসলে তুরস্ক যাওয়ার কথা ভাবছি। সম্ভবত যেতে পারি- যদি মনে হয় কিছু একটা হতে পারে। আমাদের এই আলোচনাটা করতেই হবে।”
ইউরোপীয় দেশগুলো যখন যুদ্ধবিরতির জন্য ক্রেমলিনের ওপর চাপ বাড়াচ্ছে, তখন ট্রাম্পের এই প্রস্তাব এল।
ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি আগেই জানিয়েছেন, তিনি ইস্তাম্বুল সফরে যাচ্ছেন এবং সেখানেই রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন বলে আশা করছেন।
আগামী ১৫ মে ইস্তাম্বুলে বৈঠকে বসার কথা রয়েছে ইউক্রেইন ও রাশিয়ার। তার আগেই সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও কাতারে সফরের কথা রয়েছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের।
সাংবাদিকদেরকে ট্রাম্প বলেন, “তুরস্কে বৃহস্পতিবারকে হালকাভাবে নেবেন না।”
এই মন্তব্যের জবাবে ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি এক্সে লেখেন, “আশা করি, রাশিয়া এই বৈঠক এড়িয়ে যাবে না। আর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যদি তুরস্কে আমাদের সঙ্গে থাকেন, তাহলে ইউক্রেইনের সবাই তা কৃতজ্ঞচিত্তে গ্রহণ করবে। এটা যথার্থ সিদ্ধান্ত হবে।”
এর আগে সোমবার জার্মানির সরকার বলেছিল রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির নিঃশর্তে ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতিতে সম্মত না হলে ইউরোপ নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রস্তুতি শুরু করবে।
কিন্তু ইউক্রেইনের সেনাবাহিনী জানায়, রাশিয়া পূর্বাঞ্চলীয় ফ্রন্টে একের পর এক হামলা চালাচ্ছে। সোমবার রাতভর ১০০টির বেশি ড্রোন হামলা চালানো হয়। ইউরোপ ও কিইভের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব উপেক্ষা করে এগুলো চালানো হয়।
“সময় দ্রুত ফুরিয়ে আসছে,” বার্লিনে সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন জার্মান সরকারের একজন মুখপাত্র। তবে যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা না দিলে ইউরোপীয় নিষেধাজ্ঞা কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
গত শনিবার কিইভ সফরে গিয়ে ইউরোপের চারটি বড় দেশের নেতারা রাশিয়ার কাছে শর্তহীন ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছিলেন। পুতিন সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে পাল্টা আলোচনার প্রস্তাব দেন।
তিনি বলেছিলেন, ইস্তাম্বুলে রাশিয়া-ইউক্রেইনের সরাসরি আলোচনা হতে পারে, যা যুদ্ধবিরতির পথ খুলে দিতে পারে।
ক্রেমলিন এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে ইউরোপীয়দের প্রস্তাবের জবাব দেয়নি। পুতিন যুদ্ধবিরতিতে রাজি না হলে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হবে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেছেন, “আমার মনে হয় তারা (রাশিয়া) রাজি হবে। আমার এমনই মনে হচ্ছে।”
পুতিন ও জেলেনস্কির মধ্যে সর্বশেষ বৈঠক হয়েছিল ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে—রাশিয়ার পূর্ণ মাত্রার আগ্রাসনের আগে। এরপর থেকে তাদের সম্পর্ক প্রকাশ্যেই তিক্ত।
রাশিয়া বলছে, তারা যুদ্ধ অবসানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, তবে ইউরোপীয় দেশগুলো “সংঘাতময় ভাষা” ব্যবহার করছে। ওদিকে, ইউক্রেইনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রিই সিবিহা অভিযোগ করে বলেছেন, রাশিয়া যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পুরোপুরি উপেক্ষা করছে।
২০২২ সালে ইউক্রেইনে রাশিয়ার আগ্রাসন শুরুর পর থেকে দুই দেশের এই তিক্ততার মধ্যেও এবারই প্রথম সরাসরি দুইদেশের মধ্যে শান্তি আলোচনা অনুষ্ঠিত হতে চলেছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।