আন্তর্জাতিক ডেস্ক : লস অ্যাঞ্জেলেস এখন আর শুধুই ‘সিটি অফ অ্যাঞ্জেলস’ নয়। মঙ্গলবার সন্ধ্যা নামতেই শহরের চেহারা এক যুদ্ধক্ষেত্রের মতো হয়ে ওঠে। দোকানপাটে কাঠের বেড়া, রাস্তাঘাট ফাঁকা, গাড়িঘোড়া নেই বললেই চলে। রাত ৮টা থেকে জরুরি কারফিউ জারি করেন শহরের মেয়র কারেন ব্যাস। তিনি জানান, এটি হয়তো একাধিক রাত চলবে।
ট্রাম্প প্রশাসনের অভিবাসন নীতির বিরুদ্ধে গত কয়েকদিন ধরে চলা বিক্ষোভে কিছু সুযোগসন্ধানী দুষ্কৃতিকারী যুক্ত হয়ে লুটপাট, ভাঙচুর ও দেয়ালে গ্রাফিতি করা শুরু করেছে। অ্যাপল স্টোর ও অ্যাডিডাসের দোকানসহ অনেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান আক্রান্ত হয়েছে।
দেওয়ালে স্প্রে করা লেখা, “F— ICE”, “F— Trump”, “ICE out of LA”—এসবই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। এক জায়গায় লেখা ছিল, “America steals ppl since 1619।”
লস অ্যাঞ্জেলেস, একটি শহর যা গড়ে উঠেছে মেক্সিকো ও সেন্ট্রাল আমেরিকার অভিবাসীদের হাত ধরে, এখন ট্রাম্পের আমেরিকার বিরুদ্ধে স্পষ্টভাবে অবস্থান নিয়েছে। একজন বিক্ষোভকারী, কেভিন সারাবিয়া, যিনি মেক্সিকান অভিবাসীদের সন্তান, বললেন, “আমরা দুই দেশের মাঝে সেতুবন্ধন তৈরি করছি। নিজের শিকড় ভুলে নয়, বরং পরবর্তী প্রজন্মের উন্নতির জন্য আমরা সংগ্রাম করছি।”
তার সঙ্গী, ফুল ব্যবসায়ী সিওমারা মাতাও বলেন, “এটা দুঃখজনক, কিন্তু লস অ্যাঞ্জেলেস শক্তিশালী শহর। আমরা আমাদের অভিবাসীদের জন্য গর্বিত।”
১ম স্ট্রিটে নিজের দোকানের সামনে কাঠের বেড়া দিচ্ছিলেন কোস ট্রুজিলো। ১৯৯২ সালের রডনি কিং মামলার পর দাঙ্গার কথা মনে করে বলেন, “আমি তখন তরুণ ছিলাম। উত্তেজনায় অনেক কিছু করেছি, কিন্তু দোকানপাট ভাঙা ঠিক না। এতে আমাদের মতো ছোট ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।”
রুমি ফুজিমোতো নামের আরেক ব্যবসায়ী বলেন, “আমি একটু বাইরে গিয়েছিলাম, তখনই দোকানে লুট চালানো হয়। এখন আর সময় নেই উদাসীন থাকার।”
তবে এসব ব্যবসায়ীরাও বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে নন। ফুজিমোতো পরে মার্কিন-মেক্সিকান পতাকা হাতে জানালার বাইরে দাঁড়িয়ে বিক্ষোভকারীদের শুভেচ্ছা জানান।
দিনভর শহরে মিছিল চলতে থাকে। গাড়ির চালকরা হর্ন বাজিয়ে সমর্থন জানায়। বিকেলে শহরের একটি পার্কে প্রায় ৩ হাজার মানুষ একত্রিত হন এক বহু-ধর্মীয় প্রার্থনায়। মেয়র এবং ধর্মীয় নেতারা অভিবাসীদের জন্য ভালোবাসা ও ICE-এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধের আহ্বান জানান।
ডিয়েগো ক্যাস্ত্রো ও তার বোন মিয়া, যারা মেক্সিকান বংশোদ্ভূত, প্রার্থনায় অংশ নেন। ডিয়েগো বলেন, “আমার পরিবার আমেরিকায় একটি ভালো ভবিষ্যৎ গড়ে তুলেছে। এখন আমি তাদের স্বপ্ন রক্ষার জন্য লড়ছি।”
কারফিউ শুরুর কিছু পর বিক্ষোভকারী ছত্রভঙ্গ হতে শুরু করে। কিছু উগ্রতাবাদী “Our streets” ও “No justice, no peace, f— ICE and f— the police” স্লোগান দিতে থাকলে, পুলিশ কয়েক রাউন্ড রাবার বুলেট ছোড়ে। কিছু বিক্ষোভকারী গ্রেপ্তারও হন।
রাত বাড়তেই শহর নীরব হয়ে যায়। দোকানপাট বন্ধ, রাস্তায় পুলিশের সাইরেন আর হেলিকপ্টারের শব্দ ছাড়া কিছুই শোনা যায় না। কারফিউ প্রায় ২.৫ বর্গকিলোমিটারে সীমিত থাকলেও, শহরের মূল কেন্দ্র ছিল উত্তেজনায় ভরপুর।
মেয়র ব্যাস বলেন, “গোটা শহর এই সংকটে নেই, কিন্তু মিডিয়ায় যেসব ছবি দেখানো হচ্ছে, তাতে মনে হয় পুরো লস অ্যাঞ্জেলেস আক্রান্ত।” পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, যারা শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ করছে, তারা লুটপাটকারীদের সাথে এক নয়।
তবে এ শহরের প্রাণকেন্দ্রে, বিশ্বের চোখের সামনে, আমেরিকার আরেকটি অস্থির রাত শুরু হলো। আর এই দায় চাপছে ট্রাম্পের বিভাজনমূলক নেতৃত্বের ওপর।
সূত্র: সিডনি মর্নিং হেরাল্ড
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।