আন্তর্জাতিক ডেস্ক : অক্টোবরের শুরুতে অভিবাসন নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) আর্থিক সহায়তা প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে উত্তর আফ্রিকার দেশ তিউনিশিয়া। এরই ধারাবাহিকতায় ইইউর পাঠানো ৬০ মিলিয়ন ইউরো বা ৭০০ কোটি টাকা ফেরত পাঠিয়েছে দেশটি। ইউরোপীয় কমিশনের একজন মুখপাত্র বৃহস্পতিবার ইউরো নিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
ভূমধ্যসাগরে অনিয়মিত অভিবাসন ঠেকাতে চলতি বছরের জুলাই থেকে ‘কৌশলগত অংশীদার’ হিসেবে তিউনিশিয়াকে বিবেচনা করে আসছিল ইইউ।
এ লক্ষ্যে তিন মাস আগে একটি চুক্তিও সই করেছিল ইইউ ও তিউনিশিয়া সরকার। তবে সেপ্টেম্বরের শুরুতে ইউরোপীয় কমিশন জানায়, আফ্রিকা থেকে ইউরোপমুখী অনিয়মিত অভিবাসনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে করা চুক্তির অংশ হিসেবে তিউনিশিয়াকে ১২৭ মিলিয়ন ইউরো বা ১৩৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থ সহায়তা দেওয়া হবে।
কমিশনের এই সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় তিউনিশ প্রেসিডেন্ট কাইস সাইদ ২ অক্টোবর জানিয়েছিলেন, ‘ইউরোপীয় ইউনিয়ন যা ঘোষণা করেছে, তিউনিশিয়া তা প্রত্যাখ্যান করছে। শুধু অর্থের পরিমাণ কম বলে নয়, জুলাইতে সই হওয়া একটি সমঝোতা স্মারকের সঙ্গেও এটি সাংঘর্ষিক।’
দেশটির এমন সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে ইইউর পক্ষ থেকে পাঠানো ৬০ মিলিয়ন ইউরোর সহায়তা ফেরত পাঠানো হয়েছে। ইইউ কমিশন বৃহস্পতিবার অর্থ ফেরত আসার কথা নিশ্চিত করলেও তিউনিশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাৎক্ষণিকভাবে গণমাধ্যমের পাঠানো কোনো প্রশ্নের জবাব দেয়নি।
এই অর্থ মূলত ইইউ ও তিউনিশিয়ার মধ্যে জুলাইয়ে সই হওয়া সমঝোতা স্মারকের অধীনে ১২৭ মিলিয়ন ইউরো সহায়তার প্রথম কিস্তি হিসেবে কোষাগারে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল।
কাইস সাইদ গত সপ্তাহে এক প্রতিক্রিয়ায় আরো বলেছিলেন, ‘তিউনিশিয়া শুধু সহযোগিতা গ্রহণ করে।
আমরা দাতব্য বা অনুগ্রহের মতো কিছু গ্রহণ করি না। কারণ আমাদের দেশ ও জনগণ কোনো সহানুভূতি চায় না, আমাদের সম্মান করা না হলে আমরা সহায়তা গ্রহণ করি না।’
কাইস সাইদের এমন মন্তব্য ব্রাসেলসে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। কারণ দুই কর্তৃপক্ষের মধ্যে সম্পন্ন চুক্তিটিকে অভিবাসনপ্রবাহ রোধে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে ভবিষ্যত চুক্তির মডেল হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছিল।
এদিকে সংকট কাটাতে ইইউ কমিশন জানিয়েছে, ৩১ আগস্ট তিউনিশিয়ার অনুরোধের পর ৬০ মিলিয়ন ইউরো প্রকৃতপক্ষে বাজেট সহায়তা হিসেবে দেওয়া হয়েছে।
এটি নতুন চুক্তির অর্থ নয়।
তবে এনলার্জমেন্ট অ্যান্ড নেইবারহুড বিষয়ক ইউরোপীয় কমিশনার অলিভার ভারহেলি নিজের এক্স অ্যাকাউন্টে দেওয়া একটি পোস্টের পর দুই পক্ষের পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়। কাইস সাইদের ঘোষণার পর তিনি তিউনিশিয়াকে পাঠানো অর্থের স্ক্রিনশট দেখিয়ে দ্রুত এই অর্থ ফেরত দেওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘তিউনিশিয়া পারস্পরিক শ্রদ্ধার ভিত্তিতে আমাদের কৌশলগত ও ব্যাপক অংশীদারত্বের চেতনায় ফিরে আসার পরই কেবল সমঝোতা বাস্তবায়ন করা উচিত।’
প্রেসিডেন্ট কাইস সাইদ এই অর্থ ফেরত দেওয়ায় এখন কার্যত দুই পক্ষের মধ্যে জটিলতা বেড়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ইইউ কমিশন অবশ্য জোর দিয়ে বলেছে, ‘সাম্প্রতিক ধাক্কার পরও অভিবাসন চুক্তিটি অব্যাহত থাকবে। এমনকি আগামী দিনে নতুন করে কোনো অর্থ ছাড়ের সম্ভাবনা তৈরি না হলেও আরো বেশ কিছুদিন এটি বজায় থাকবে।’
অন্যদিকে কমিশনের প্রধান মুখপাত্র এরিক মামার বলেন, ‘এই সমঝোতা স্মারকটি তিউনিশিয়া ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রচেষ্টা। হ্যাঁ, চলার পথে কখনো কখনো বাধা আসে। তবে এটি শেষ হতে চলেছে। ইউ কমিশন তিনিশিয়ার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এটি বাস্তবায়নের জন্য কাজ চালিয়ে যাবে।’ আর এটাকেই নিজেদের বর্তমান অবস্থান হিসেবে তুলে ধরেছেন ইইউ কমিশনের প্রধান মুখপাত্র।
সূত্র : ইনফোমাইগ্রেন্টস
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।