বিজ্ঞান ও প্রযক্তি ডেস্ক : পঞ্চাশ বছর বয়সী মনোবিজ্ঞানী ডেনিস ডিয়ার। তার ফুসফুসে প্রদাহ দেখা দিয়েছিল। এ প্রদাহের নাম পলিমায়োসাইটিস। ইলিনয়ের এই ব্যক্তির কাজ করা খুব কঠিন হয়ে পড়েছিল। ফুসফুসের প্রদাহের কারণে তিনি কোনো কাজই স্বাভাবিকভাবে করতে পারছিলেন না। সামান্য হাঁটলেই হাঁফিয়ে উঠতেন। সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন, পরিস্থিতি ছিল ভয়াবহ। আমি ১০ পা-ও হাঁটতে পারছিলাম না। অক্সিজেনের জন্য হাঁসফাঁস করতে হয়েছে আমাকে।
এ অবস্থায় তার ফুসফুস প্রতিস্থাপন করা হবে। কিন্তু তিনি বাড়তি ঝামেলায় আছেন।
তার বুকে, পেটে যেসব অঙ্গ আছে, তার সবটাই এলোমেলোভাবে সাজানো। যেসব অঙ্গ ডানদিকে থাকার কথা, তা আছে বামদিকে। আবার বামদিকেরটা ডানদিকে। এসব নিয়ে অনলাইন সিএনএন একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের তথ্যমতে, তার এই জেনেটিক সমস্যা সিটাস ইনভারসাস নামে পরিচিত। প্রতি ১০ হাজার মানুষের মধ্যে একজনের এমন অস্বাভাবিকতা দেখা দিতে পারে। ঘটনাটি মানবভ্রুণ সৃষ্টি সময় ঘটে। ভিন্ন প্রায় ১০০ জিনের সঙ্গে সম্পর্কিত থাকে এই ডিজঅর্ডার।
নর্থওয়েস্টার্ন মেডিসিন ক্যানিং থেরাসিক ইনস্টিটিউটের থেরাসিক সার্জারির প্রধান এবং পরিচালক ড. অঙ্কিত ভরত বলেছেন, যখন ভ্রুণের বৃদ্ধিসাধন ঘটে এবং অঙ্গগুলো এলোমেলো অবস্থায় তৈরি হয় তখন তাতে জীবনের অস্তিত্ব না থাকলে সাধারণভাবেই গর্ভপাত হয়। স্বাভাবিকভাবে এমন ভ্রুণ থেকে মানবসন্তানের জন্ম নিলে তাতে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ এলোমেলো অবস্থায় সাজানো থাকে এবং সেই সন্তান স্বাভাবিকভাবেই বড় হয়।
অনেক আগে মানুষ এসব বুঝতে পারতো না। কিন্তু বর্তমানে নিয়মিত মেডিকেল চেকের সময়ে এ বিষয়টি ধরা পড়ে। কেউ যদি তাদের হার্টবিটের শব্দ শুনতে চান, তাহলে বুকের বামপাশে তা খুঁজে পাবেন না। এমন অবস্থায় এক্সরে করতে হয়। তাতে দেখা যায় সব উল্টো।
একই রকম আরেকজন রোগী ২৭ বছর বয়সী ইয়াহাইরা ভেগা। তার বসবাস শিকাগো থেকে প্রায় ৩৫ মাইল উত্তর-পশ্চিমে ইলিনয়ের এলগিন শহরে। ভেগা শ্বাসপ্রশ্বাসের জটিলতায় ভুগছিলেন। তিনিও জন্মেছেন একই সমস্যা নিয়ে। ড. ভরত বলেছেন, সিটাস ইনভারসাস একটি বিরল অবস্থা। এর সঙ্গে আর একটি বিরল জটিলতা যুক্ত থাকে। এর জন্য কাউকে পুরো ফুসফুস প্রতিস্থাপনই করে ফেলতে হয়।
এই বিরল অবস্থাটা পরিচিত প্রাইমারি সিলিয়ারি ডাইস্কিনেশিয়া বা পিসিডি নামে। ফুসফুসের ভিতর সিলিয়া নামের ক্ষুদ্র চুলের মতো স্ট্রাকচারের ত্রুটির ফলে সৃষ্টি হয়। শ্লেষায় আটকে থাকা জীবাণু এবং ময়লা আটকে রেখে তা বাতাসের চলাচলের পথে বাইরে বের করে দেয়। কিন্তু সিলিয়া যখন ঠিকমতো কাজ করতে পারে না, তখন ফুসফুসের শ্লেষা বা কফ বের করতে পারে না। এতে ফুসফুসে ভয়াবহ এক অবস্থার সৃষ্টি হয়।
ভেগার অবস্থা আরও খারাপ হয়েছিল। তিনি বলেন, প্রতিদিন কাশি দিতে দিতে দম বন্ধ হয়ে আসতো। প্রচুর কফ উঠতো। ডিয়ারের মতোই ভেগাকে রাখা হয় ফুসফুস প্রতিস্থাপনের তালিকায়। এ চিকিৎসাটি জটিল। ড. ভরত বলেন ফুসফুসের মতো গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ সরিয়ে তার স্থানে অন্য ফুসফুস প্রতিস্থাপন এবং তা কার্যকর রাখা এক কঠিন বিষয়।
এক্ষেত্রে আমাদেরকে পুরনো ফুসফুস ফেলে দিতে হয়। একজন ডোনারের কাছ থেকে নতুন ফুসফুস নিয়ে সেখানে প্রতিস্থাপন করতে হয়। এটা করতে প্রথমে প্রযুক্তিগত মডিফিকেশন সম্পন্ন করতে হয়। কোনো রোগীর বুকের বাম পাশে রক্তের প্রবাহ সৃষ্টি করে সেখানে ফুসফুস প্রতিস্থাপন করা খুবই জটিল একটি কাজ। এ জন্য থ্রিডি স্ক্যান করতে হয়। এরপর সঠিক স্থানে প্রতিস্থাপন করতে হয় ফুসফুস।
৯ মাস অপেক্ষা করার পর চিকিৎসকরা ভেগার জন্য ম্যাচিং করে এমন ডবল ফুসফুসের দাতা পেয়ে গেলেন। তারা ২৮শে এপ্রিল নর্থওয়েস্টার্ন মেমোরিয়াল হাসপাতালে ভেগার নতুন ফুসফুস প্রতিস্থাপন করেন। তারপর ভেগা সুস্থ। নতুন এক জীবন ফিরে পেয়েছেন তিনি। বলেন, আমার শরীর এখন নতুন। বিস্ময়কর লাগছে। আগের চেয়ে অনেক সুস্থভাবে কাজ করতে পারছি।
এর পরেই অপারেশন করা হয় ডিয়ারের। ২২শে মে তার বুকে স্থাপন করা হয় নতুন ফুসফুস। অপারেশনের পর তিনি যখন চেতনা ফিরে পান কোনো রকম সহায়তা ছাই তিনি স্বাভাবিক শ্বাসপ্রশ্বাস নিতে পারেন। বলেন, চেতনা ফিরে পেয়েই স্ত্রীকে বললাম- আমার অক্সিজেন জার কই? জবাবে স্ত্রী বললেন, তোমার আর বাড়তি অক্সিজেন প্রয়োজন নেই।
আমি তাকে বললাম- আমাকে অক্সিমিটার দাও। সে আমার আঙ্গুলে লাগালো অক্সিমিটার। এতে রিডিং উঠলো ৯৯%। আমার কাছে সব কেমন মিরাকল মনে হলো। এখন আমি ও ভেগা আমরা বিস্ময়করভাবে হাঁটাচলা করতে পারছি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।