জুমবাংলা ডেস্ক : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামে দুই শিশুকে বিষ খাইয়ে হত্যার ঘটনায় রিমা আক্তারের কথিত প্রেমিক সফিউল্লাহ ওরফে সোফাই মিয়াকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সফিউল্লাহ এই হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী বলে জানিয়েছে পুলিশ। গ্রেফতার সফিউল্লাহ আশুগঞ্জ উপজেলার মৈশার গ্রামের বাসিন্দা।
পুলিশ জানায়, দুই শিশু হত্যাকাণ্ডের পর তথ্য অনুসন্ধান করতে গেলে সফিউল্লাহ ওরফে সোফাই মিয়ার নাম উঠে আসে। সফিউল্লাহ ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশের আশুগঞ্জ উপজেলার দুর্গাপুরে এস আলম অ্যাগ্রো ফুডস অ্যান্ড রাইস মিলের পাশের একটি কারখানার শ্রমিক সর্দার ছিল। শ্রমিক সর্দারের পাশাপাশি বিভিন্ন মিল কারখানায় শ্রমিক সরবরাহ করতো সে।
ছয় মাস আগে এস আলম অ্যাগ্রো ফুডস অ্যান্ড রাইস মিলে চাকরি খুঁজতে যায় দুর্গাপুর গ্রামের ইটভাটা শ্রমিক ইসমাইল হোসেন সুজনের স্ত্রী রিমা আক্তার। সেখানে গিয়ে শ্রমিক সর্দার সফিউল্লাহর সঙ্গে চাকরির বিষয়ে যোগাযোগ করেন রিমা। পরে নিজের অধীনে ওই কারখানায় রিমাকে চাকরি দেয় সফিউল্লাহ। কিছু দিন পর তার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে। একপর্যায়ে রিমাকে বিয়ের আশ্বাস দেয় সফিউল্লাহ। তবে শর্ত দেয়, দুই সন্তানকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিতে হবে। কীভাবে সন্তানদের সরিয়ে দিতে হবে সেই পরিকল্পনা করে সফিউল্লাহ।
প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রিমার দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী স্বামী ইসমাইল হোসেন সিলেটের গোলাপগঞ্জের বৈটিঘর এলাকায় ইটভাটার শ্রমিকদের হাজিরার টোকেন বিলির কাজ করেন। দীর্ঘদিন বাড়িতে না আসার সুযোগে রিমার সঙ্গে সফিউল্লাহর সম্পর্ক অনেক দূর এগিয়ে যায়। একপর্যায়ে তারা বিয়ের সিদ্ধান্ত নেয়। এক্ষেত্রে রিমার দুই ছেলে ছিল বাধা। দুই শিশুকে হত্যার পরিকল্পনা করে তারা।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, গত ১০ মার্চ বিকালে বাড়িতে এসে রিমাকে বিষ মেশানো পাঁচটি মিষ্টি দিয়ে যায় সফিউল্লাহ। জ্বর এসেছে বলে শিশুদের দাদিকে দিয়ে স্থানীয় মা ফার্মেসি থেকে নাপা সিরাপ আনতে পাঠায়। সে সময় বড় ছেলে ইয়াছিনকে তিনটি ও ছোট ছেলে মোরসালিন খানকে দুটি মিষ্টি খাওয়ায়। শিশুদের দাদি নাপা সিরাপ নিয়ে বাড়িতে এলে সেখান থেকে আধা চামচ করে দুই সন্তানকে খাওয়ায় রিমা। কিছুক্ষণের মধ্যেই দুই শিশুর মুখ দিয়ে লালা বের হয়। পরে তারা বমি শুরু করে। তাদের প্রথমে আশুগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে বাড়িতে নেওয়ার পথে রাস্তায় রাত ৯টার দিকে মোরসালিন ও রাত ১০টার দিকে ইয়াছিনের মৃত্যু হয়। পরে নাপা সিরাপ ও চিকিৎসকদের ওপর দোষ চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে তারা।
এ ঘটনায় ১৭ মার্চ দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দ্বিতীয় আদালতের বিচারক বেগম আফরিন আহমেদের কাছে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়ে সন্তানদের হত্যার কথা স্বীকার করে রিমা। ওই দিন বিকালে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। এরপর থেকে গাঢাকা দেয় সফিউল্লাহ। পরে আশুগঞ্জ থানা পুলিশের একাধিক টিম তাকে গ্রেফতারে মাঠে নামে। কিন্তু দ্রুত সময়ের মধ্যে স্থান বদল করায় গ্রেফতার করতে পারছিল না পুলিশ।
সোমবার (২৮ মার্চ) বিকাল ৫টার দিকে রাজধানীর আব্দুল্লাহপুর থেকে তাকে গ্রেফতার করে আশুগঞ্জ থানা পুলিশ। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোল্লা মোহাম্মদ শাহিন।
তিনি বলেন, ‘আবদুল্লাহপুর থেকে রংপুরে যাওয়ার জন্য বাসে ওঠার সময় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। দুই সন্তান হত্যার ঘটনায় বাবা ইসমাইল হোসেন বাদী হয়ে স্ত্রী রিমা আক্তার ও সফিউল্লাহকে আসামি করে আশুগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা করেছেন। ওই মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।’
আশুগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজাদ রহমান বলেন বলেন, ‘গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সফিউল্লাহকে ঢাকা থেকে গ্রেফতার করে আশুগঞ্জে নিয়ে এসেছে পুলিশ।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।