জুমবাংলা ডেস্ক : স্কুল একটি, সেখানে প্রধান শিক্ষকের পদও একটি। তবে একই সময়ে দুজন প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেছেন। একে অপরের বিরুদ্ধে জালিয়াতি এবং মিথ্যাচারের অভিযোগ তুলেছেন দুজনই। চট্টগ্রামের কর্ণফুলী এলাকায় আছিয়া মোতালেব রিজিয়া নাছরিন উচ্চ বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটেছে।
২০১৫ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ওই স্কুলে প্রধান শিক্ষক কে ছিলেন তা নিয়ে বিরোধের জের ধরে ঘটনার সূত্রপাত। তবে সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে অস্বস্তিতের পড়েছে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড ও মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর কর্তৃপক্ষ। সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
অভিযোগ উঠেছে, স্কুলটির ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সোহেল মাহমুদ নিজেকে প্রধান শিক্ষক দাবি করে দীর্ঘদিন কাগজপত্রে স্বাক্ষর করে আসছেন। পরে বিষয়টি চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের নজরে আসলে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেয়। এরপরও বোর্ডের আদেশ অমান্য করে নিজকে প্রধান শিক্ষক পরিচয় দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে শিক্ষাবোর্ড থেকে শোকজও করা হয়েছে।
এর আগে ২০১৩ সালে ওই স্কুলে সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান সোহেল মাহমুদ। ২০১৯ সালে তৎকালীন প্রধান শিক্ষক অন্যত্র বদলি হলে তিনি প্রধান শিক্ষকের ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ২০২২ সালে স্কুলটি এমপিওভুক্ত হলে ভুয়া নিয়োগ পরীক্ষা দেখিয়ে জাল সনদ তৈরি করেন সোহেল মাহমুদ। ওই ভুয়া নিয়োগপত্র দেখিয়ে এমপিওভুক্তির চেষ্টা চালান তিনি। পরে ২০২৩ সালের মার্চে বিষয়টি চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের নজরে এলে সোহেল মাহমুদকে সতর্ক করেন শিক্ষাবোর্ডের স্কুল পরিদর্শক বিল্পবা গাঙ্গুলী। কিন্তু একই বছর আগস্টে সেই জাল সনদ আবারও মাধ্যমিক উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে পাঠিয়ে এমপিওভুক্তির চেষ্টা চালান সোহেল মাহমুদ।
আছিয়া মোতালেব রিজিয়া নাছরিন উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক (অতিরিক্ত) মো. জিয়া উদ্দিন বলেন, আমি এ স্কুলে ২০১৩ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত প্রধান শিক্ষকের (অতিরিক্ত) দায়িত্ব পালন করেছি। আমি ও সোহেল মাহমুদ ২০১৩ সালেই এক সঙ্গে নিয়োগ পাই। আমি প্রধান শিক্ষক হিসেবে এবং সোহেল সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে। কিন্তু আমি অন্য জায়গায় বদলি হওয়ার পর জানতে পারি ২০১৫ সালের একটি ভুয়া নিয়োগ দেখিয়ে ২০২৩ সালে ওনি এমপিওভুক্তির আবেদন করেছেন। অথচ আমার জানামতে ২০১৫ সালে কোনো নিয়োগ পরীক্ষা হয়নি। সেই নিয়োগে স্কুল কমিটির তৎকালীন সভাপতি নুরু সফার স্বাক্ষর জালিয়াতি করা হয়েছে।
তিনি বলেন, সোহেল মাহমুদ যদি ২০১৫ সাল থেকে প্রধান শিক্ষকই হোন কেন শিক্ষা বোর্ড ২০২৩ সালের মার্চে ব্যাখ্যা তলব করলেন? সোহেল মাহমুদই কেন ব্যাখা তলবের পর নিজে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সিল ও স্বাক্ষর করে ক্ষমা প্রার্থনা করেন? অতঃপর কেন ওই বছরেরর ২৮ মার্চ শিক্ষাবোর্ড থেকে সতর্কীকরণপত্র ইস্যু হয়। বিষয়টি নতুন এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হওয়ায় মিথ্যা তথ্য দিয়ে এমপিওভুক্তি হওয়ার প্রচেষ্টা।
এসব অভিযোগ অস্বীকার করে সোহেল মাহমুদ বলেন, ২০১৩ সালে আমি সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাই এবং ২০১৫ সাল থেকে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছি। এখন কেউ যদি বলে থাকে যে তিনি (জিয়া উদ্দিন) ওই সময়ে প্রধান শিক্ষক ছিলেন, এটা তিনিই ভালো ব্যাখা করতে পারবেন। আমার কাছে নিয়োগপত্র আছে, সবকিছু আছে। চট্টগ্রাম অঞ্চল মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের আঞ্চলিক উপপরিচালক এবং জেলা শিক্ষা অফিসার উত্তম খীসা বলেন, বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছে। ওনার (সোহেল মাহমুদ) এমপিও ভুক্তির আবেদন এসেছিল। কিন্তু এ বিষয়ে একটি পক্ষের অভিযোগ থাকার কারণে সেটা আমরা ফেরত পাঠিয়েছি। আমি দায়িত্ব নিয়েছি ৮ মাসের মতো। এর মধ্যে তিনবার এ আবেদন এসেছে। কিন্তু আমরা বারবার বলেছি স্কুল কমিটি যদি বিষয়টি নিষ্পত্তি করে না দেয় তাহলে ওই ফাইলটি ফরওয়ার্ড করা সম্ভব নয়। সূত্র : কালবেলা
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।