জুমবাংলা ডেস্ক : নাহার এগ্রোর তথ্য মতে, ফার্মের মুরগির ডিমের স্বাভাবিক আকার ৫০ গ্রাম হলেও ডাবল কুসুম ডিমের আকার ৭৫ থেকে ৮০ গ্রাম। বাজারে এসব ডিমের দাম ফার্মের ডিমের তুলনায় ২০ থেকে ২৫ শতাংশ বেশি। কম দামে বড় আকারের ডিম পাওয়ায় এই ডিমের চাহিদা প্রতিনিয়ত বাড়ছে।
চট্টগ্রামের কাজির দেউড়ি কাঁচাবাজার থেকে এক হালি বড় আকারের ডিম কেনেন ফাতেমা খাতুন রিমা। বাসায় ডিম ভাজতে গিয়ে দেখেন ডিমে দুটি কুসুম। বিষ্মিত হয়ে আবার ভাঙ্গলেন আরো একটি ডিম। সেটিতেও মিললো ডাবল কুসুম। বিষ্ময় আরো বাড়লো গৃহিণী রিমার।
বাকি দুটো ডিম নিয়ে গেলেন কাজীর দেউড়ির মায়ের দোয়া স্টোরের মালিক ইকবাল হোসেনের কাছে। ডাবল কুসুম ডিমের রহস্য জানার পর রিমা সেদিনই নিয়ে গেলেন এক ডজন ডিম। আকারে বড় এবং দাম তুলনামুলক কম হওয়ায় তিনি ২০১৯ সাল থেকে ডাবল কুসুম ডিমের নিয়মিত গ্রাহক।
চট্টগ্রামের ঝাউতলা, কাজীর দেউড়ি, দেওয়ানহাট এবং বায়েজিদ এলাকায় মিলছে এমন ডাবল কুসুমের ডিম। চট্টগ্রামের নাহার এগ্রো’র খামার থেকে সংগ্রহ করা এসব ডিমের চাহিদা বাড়ছে ক্রমাগত। শুরুতে ডাবল কুসুমের ডিম খাওয়া নিয়ে কুসংস্কার থাকলেও এখন সেটি আর নেই। চহিদার তুলনায় সরবরাহ তুলনামূলক কম থাকায় ক্রেতারা আগাম অর্ডারও দিয়ে থাকেন।
মুরগির বাচ্চা উৎপাদনের জন্য নাহার এগ্রো গ্রুপের মিরসরাই, সীতাকুণ্ড, ফটিকছড়ি সহ বিভিন্ন হ্যাচারিতে প্রায় ১০ লাখ পিস প্যারেন্ট স্টক মুরগী রয়েছে। এসব মুরগী থেকে প্রতিদিন ১ থেকে ২ লাখ পিস ডিম উৎপাদন হয়। এর মধ্যে প্রতিদিন এক হাজার থেকে ১৫০০ পিস ডাবল কুসুমের ডিম পাওয়া যায়। গত ১৫ বছরেরও অধিক সময় ধরে এসব ডাবল কুসুম ডিম উৎপাদন হচ্ছে নাহার এগ্রোর খামারে।
নাহার এগ্রোর তথ্য মতে, বিভিন্ন ফার্ম থেকে ডাবল কুসুমের ডিম সংগ্রহ করে নিয়ে আসা হয় চট্টগ্রাম নগরীর ঝাউতলা এলাকায় শিল্প গ্রুপটির কর্পোরেট অফিসের পার্শ্বে সেলস সেন্টারে। সেখানে বিক্রির পাশাপাশি কয়েকটি হাত ঘুরে যায় চট্টগ্রাম নগরীর তিনটি স্থানে। খুচরা পর্যায়ে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় কাজীর দেউড়ি কাঁচাবাজারে।
নাহার এগ্রোর সেলস সেন্টারে ডাবল কুসুমের ডিম বিক্রি হয় প্রতি পিস ১৩ টাকা দরে। খুচরা দোকানে বিক্রি হয় প্রতি পিস ১৪ থেকে ১৫ টাকায়।
চট্টগ্রাম জেলার সাবেক প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা এবং বর্তমানে নাহার এগ্রো গ্রুপের জেনারেল ম্যানেজার (এডমিন) ড. মো. আব্দুল হাই বলেন, “এটি প্রতি এক হাজারের মধ্যে একটিতে ঘটে। এটা ইয়াং এবং ওল্ড এইজ বার্ডে হয়। মুরগীর প্রি প্রোডাক্টিভ সিস্টেমে বা যে সিস্টেমে ডিম তৈরি হয় ওই সিস্টেম যখন ফুল ম্যাচিউরড হয় না, তখন একই সাথে দুটি কুসুম রিলিজ করে দেয়। ওই সময়ে একই সেলের মধ্যে দুটি কুসুম হয়। এটিকে অ্যাক্সিডেন্টাল ফেনোমেনা’ হিসেবেও অভিহিত করা যায়।”
ঝিনাইদহ সরকারি ভেটেরিনারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ড. মোহাম্মদ আবদুল হাই আরো বলেন, “ডাবল কুসুমের ডিম খাওয়ার জন্য একেবারে নিরাপদ। আমি এবং আমার পরিবারের সদস্যরা এই ডিম নিয়মিত খাই। এই ডিম খাওয়ার সাথে জমজ বাচ্চা হওয়া নিয়ে অনেক কুসংস্কার আছে। বাচ্চাতে রিফ্লেক্ট হওয়ার মতো কোন প্রোটিন ডাবল কুসুমের ডিমে নেই। একটি কুসুমে ১৩ ধরনের ভিটামিন এবং মিনারেল রয়েছে। ডাবল কুসুমের ডিম খেলে তার দ্বিগুণ ভিটামিন এবং মিনারেল পাওয়া যাবে।”
নাহার এগ্রোর তথ্য মতে, ফার্মের মুরগির ডিমের স্বাভাবিক আকার ৫০ গ্রাম হলেও ডাবল কুসুম ডিমের আকার ৭৫ থেকে ৮০ গ্রাম। বাজারে এসব ডিমের দাম ফার্মের ডিমের তুলনায় ২০ থেকে ২৫ শতাংশ বেশি। কম দামে বড় আকারের ডিম পাওয়ায় এই ডিমের চাহিদা প্রতিনিয়ত বাড়ছে।
চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোডাকশন অফিসার (প্রাণীসম্পদ) ডা. তারিকুল ইসলাম (অনীক) টিবিএসকে বলেন, “মুরগীর ডিমে ডাবল কুসুম থাকা একটি বিরল ব্যাপার। এটি পরিকল্পিত কোন ঘটনা নয়। এক্ষেত্রে জেনেটিক্যাল, এইজ, নিউট্রিশন ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করে। এই ডিম খেলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।”
নাহার এগ্রো গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাকিবুর রহমান টুটুল জানান, প্যারেন্ট স্টক মুরগি ২৬ থেকে ৩০ সপ্তাহের মধ্যে পিক প্রোডাকশনে যায়। ডিম দেওয়া এসব মুরগীর প্রতিদিন ১৫০ থেকে ১৬০ গ্রাম খাবার প্রয়োজন। কিন্তু কিছু মুরগি স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি পরিমাণে খাবার খায়। ওভার ফিড কনজাম্পশনের কারণেও কিছু মুরগীর ডিমে ডাবল কুসুম হয়ে থাকে। পিক টাইমে ডাবল কুসুম ডিমের পরিমাণ হয় ১ থেকে ১.৫ শতাংশ। ৩২ থেকে ৩৬ সপ্তাহের পর ডাবল কুসুম ডিমের পরিমাণ কমে চলে আসে দশমিক ২ থেকে দশমিক ৩ শতাংশে।
নাহার এগ্রোর ম্যানেজার (এইচ আর এন্ড এডমিন) মোঃ সোহেল রানা টিবিএসকে বলেন, “প্যারেন্ট স্টক থেকে উৎপাদিত ডিম থেকে আমরা সাধারণত বাচ্চা উৎপাদন করি। কিন্তু ডাবল কুসুমের এসব ডিম থেকে বাচ্চা উৎপাদন সম্ভব নয়। ফলে ডাবল কুসুম ডিমের উৎপাদন বাড়লে আমাদের লোকসান বাড়ে।”
ঝাউতলা এলাকায় নাহার এগ্রোর সেলস সেন্টারে কথা হয় এর ইনচার্জ সেলিম রেজার সাথে। তিনি টিবিএসকে বলেন, “বাজারে এই ডিমের চাহিদা ভালো। কিন্তু সেই তুলনায় সরবরাহ কম। দুই থেকে তিন দিন পর খামার থেকে সেলস সেন্টারে ডিম আসে। অনেক ক্রেতা আগে থেকেই অর্ডার দিয়ে রাখে। আমাদের সেলস সেন্টারের পাশাপাশি চট্টগ্রাম নগরীর কাজির দেউড়ি, দেওয়ানহাট এবং বায়েজিদ এলাকায় তিনজন পাইকার ডাবল কুসুমের ডিম নিয়ে যায়।”
চট্টগ্রাম নগরীর কাজির দেউড়ি কাঁচাবাজারের মায়ের দোয়া স্টোরে দেখা যায়, বিভিন্ন ডিমের সাথে সাদা এবং বাদামী উভয় রঙের ডাবল কুসুম ডিমের পসরা সাজানো আছে । আকারে বড় হওয়ায় অন্য ডিমের তুলনায় তা নজর কাড়ছে ক্রেতাদের। সেদিন কাজির দেউড়ি বাজারে প্রতি ডজন ১৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছিল ডাবল কুসুমের ডিম।
মায়ের দোয়া স্টোরের মালিক ইকবাল হোসেন বলেন, “ডাবল কুসুমের ডিমগুলো কয়েক হাত ঘুরে আমাদের এখানে আসে। প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৩৫০ পিস ডিম বিক্রি হয় এখানে। আমরা পাইকারি ১৩ টাকা দরে ক্রয় করে ক্রেতাদের কাছে ১৪ টাকায় বিক্রি করি।”
কাজীর দেউড়ি বাজার থেকে ডাবল কুসুমের ডিম কিনতে আসা হুমায়ুন কবির বলেন, “তুলনামুলক কম দামে বড় আকারের ডিম পাওয়া যায়। একসাথে দুটি কুসুম দেখতেও সুন্দর। এখান থেকে তাই নিয়মিত ডাবল কুসুমের ডিম ক্রয় করি।”
সূত্র: দি বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।