জুমবাংলা ডেস্ক : জয়পুরহাট চিনিকলের নির্গত বর্জ্য উপজেলার চিড়ি এবং তুলশীগঙ্গা নদীর পানি ব্যাপকভাবে দূষিত হয়েছে। এতে ওই নদীর পানি কালচে বর্ণ ধারণ করায় মাছ ও জলজ প্রাণী মরে ভেসে উঠছে। এতে এলাকায় দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পরিবেশেরও ক্ষতি হচ্ছে। তাছাড়া এই কালো পানি দিয়ে কৃষকরা জমিতে সেচও দিতে পারছেনা। ব্যাহত হচ্ছে চাষাবাদ। তবে চিনিকলের বর্জ্য নদী দূষণ হচ্ছেনা বলে দাবি করেছেন চিনিকল কর্তৃপক্ষ।
সরেজমিন দেখা গেছে, জয়পুরহাট চিনিকল থেকে অপরিশোধিত বর্জ্য একটি ড্রেনের মাধ্যমে আক্কেলপুর উপজেলার রুকিন্দীপুর ইউনিয়নের আওয়ালগাড়ি গ্রামের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া চিড়ি নদীতে এসে পড়ে। ওই নদীটি সেখান থেকে পৌর সদরের সোনামূখী সেতু এলাকায় তুলশীগঙ্গা নদীতে এসে মিলিত হয়েছে। উপজেলার জামালগঞ্জ পাঁচ মাথা থেকে সোনামুখী তুলশীগঙ্গা নদী পর্যন্ত চিড়ি নদী এবং তার দক্ষিণ পাশের অংশ থেকে শুরু করে হলহলিয়া রেলসেতু পর্যন্ত প্রায় আট কিলোমিটার তুলশীগঙ্গা নদীর পানি দূষিত হয়ে কালচে রং ধারণ করেছে। এতে করে ওই দুইটি নদীর মাছ ও পানিতে বসবাস করা জলজ প্রাণী মারা যাচ্ছে। দূষিত পানি প্রবেশ করায় নদী তীরবর্তী এলাকায় ব্যাপক দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে।
চিড়ি ও তুলশীগঙ্গা নদীপাড়ের কয়েকজন বাসিন্দা জানান, চিনিকলে পুরোদমে আখমাড়াই চলছে। এই আখ মারাড়াইয়ের ময়লা, দূষিত ও দুর্গন্ধযুক্ত পানি নদীগুলোতে প্রবেশ করায় বসবাস দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। আওয়ালগাড়ি গ্রামের ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া চিড়ি ও তুলশীগঙ্গা নদীর পানি দিয়েই দুই পাশের কৃষি জমিতে সেচ দেওয়া হতো। প্রায় ২০ থেকে ২৫ দিন ধরে ওই এলাকার কৃষকেরা কোনো কাজেই নদীর পানি ব্যবহার করতে পারছেন না।
আওয়ালগাড়ি গ্রামের কৃষক আবু কালাম বলেন, সুগার মিলের দূষিত পানি নদীতে আসায় আমরা ফসলি জমিতে সেচ দিতে পারি না। বেশি দামে গভীর ও অগভীর নলকূপ থেকে ফসলে পানি সেচ দিতে হয়। এতে আমাদের ফসলের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে।
চিরি নদীর পানি ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি আবদুল মোত্তালেব বলেন, চিনিকলের বর্জ্যের দূষিত পানিতে চিরি ও তুলশীগঙ্গা নদীর পানি কালচে ও দুর্গন্ধ হয়েছে। এই পানি দিয়ে কৃষকরা জমিতে সেচ দিতে পারছেনা। দূষিত পানি নিষ্কাশন বন্ধে আমরা এর আগে অনেকবার আন্দোলন করে ব্যর্থ হয়েছি।
উপজেলা মৎস্য সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মাশফেকুর রহমান বলেন, চিড়ি নদী থেকে দূষিত, ময়লা ও দুর্গন্ধযুক্ত পানি তুলশীগঙ্গা নদীতে প্রবেশ করছে। বর্জ্য মিশ্রিত পানি গুলো স্বচ্ছ নদীতে প্রবেশের কারণে পানিতে কার্বন—ডাই—অক্সাইডের পরিমাণ বেড়ে গেছে। এতে নদীর অনেক দেশীয় প্রজাতির মাছ ও জলজ প্রাণী মারা গেছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইমরান হোসেন বলেন, নদীর দূষিত কালো পানি দিয়ে কৃষি জমিতে সেচ কাজ না করার জন্য কৃষকদের নিরুৎসাহী করছি। এতে ফসলের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনজুরুল আলম বলেন, দূষিত পানিতে মাছ ও পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে জেলাতে আলোচনা হয়েছে। দূষিত পানির বিষয়ে চিনিকল কর্তৃপক্ষকে অবহিত করলে তারা সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন। দ্রুত তারা পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে তাঁদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জয়পুরহাট চিনিকলের ব্যবস্থাপক আখলাছুর রহমান বলেন, চিনিকলে আমাদের ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট রয়েছে। সেখানে নিয়মিত দূষিত পানি শোধন করা হচ্ছে। নদীর পানি কেন দূষণ হচ্ছে তা আমার জানা নেই। নদীতে আসা দূষিত পানি তাদের কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমি সেটি বলছি না। আপনি এসে দেখে যান।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।