সাম্প্রতিক সময়ে মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম অর্থনৈতিক কেন্দ্রবিন্দু সংযুক্ত আরব আমিরাতে (UAE) স্বর্ণের দামে বড় ধরনের পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। রোজগার ও বিনিয়োগের দিক থেকে স্বর্ণের প্রতি আগ্রহ বেড়েছে প্রবাসী বাংলাদেশি ও ভারতীয়দের মধ্যে। ফলে UAE-তে স্বর্ণের দাম এখন শুধু স্থানীয় বাজারেই নয়, বরং দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর বাজারে একটি আলোচিত বিষয় হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে বাংলাদেশের বাজারে ২২ ক্যারেট স্বর্ণের দাম ভরিতে ১ লাখ ৬৭ হাজার টাকা ছাড়িয়ে যাওয়ার পর থেকে এই আলোচনা আরও তীব্র হয়েছে।
UAE-তে স্বর্ণের দাম কত, বাংলাদেশের তুলনায় কত পার্থক্য?
UAE-তে স্বর্ণের দাম বর্তমানে বিশ্ববাজারের সাথে সামঞ্জস্য রেখে প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে। দুবাই, যা আন্তর্জাতিক স্বর্ণবাজারের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ হাব, সেখানে ২২ ক্যারেট স্বর্ণের দাম প্রতি গ্রাম প্রায় ২৫৭ দিরহাম (যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৮ হাজার ২০০ টাকা)। এতে করে ভরিতে (১১.৬৬৪ গ্রাম) হিসাব করলে মোট দাম দাঁড়ায় প্রায় ৯৫ হাজার ৫০০ টাকা।
Table of Contents
অন্যদিকে বাংলাদেশে বর্তমানে ২২ ক্যারেট স্বর্ণের দাম ভরিতে ১,৬৭,৮৩৩ টাকা, যা ইতিহাসে সর্বোচ্চ। অর্থাৎ, বর্তমানে UAE-এর সঙ্গে বাংলাদেশের মধ্যে ভরিপ্রতি স্বর্ণের দামে পার্থক্য দাঁড়াচ্ছে প্রায় ৭২,০০০ টাকারও বেশি। এই পার্থক্য প্রবাসীদের জন্য স্বর্ণ কিনে দেশে পাঠানোর বিষয়টিকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলছে।
এই বিষয়ে স্বর্ণে বিনিয়োগ কতটা নিরাপদ এ বিষয়েও আলোকপাত করা হয়েছে।
ভারতের বাজারে স্বর্ণের দাম ও তুলনামূলক বিশ্লেষণ
ভারতে ২২ ক্যারেট স্বর্ণের দাম বর্তমানে ভরিতে প্রায় ৬৭,০০০ রুপি, যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৮৮,০০০ টাকা। অর্থাৎ ভারতের তুলনায় বাংলাদেশের বাজারে স্বর্ণের দাম এখনো প্রায় ৮০ হাজার টাকা বেশি। এটি এই অঞ্চলের সবচেয়ে বড় মূল্য ব্যবধানগুলোর একটি।
এই বৈষম্যের অন্যতম কারণ হলো শুল্ক, কর এবং আমদানি নীতিমালার পার্থক্য। ভারত ও বাংলাদেশে স্বর্ণ আমদানিতে উচ্চ শুল্ক আরোপ করা হয়, যা দাম বাড়িয়ে দেয়। অন্যদিকে, WTO অনুযায়ী, মুক্ত বাজার নীতিমালায় পরিচালিত হওয়ায় UAE তে স্বর্ণের দাম অনেকটাই প্রতিযোগিতামূলক থাকে।
বাংলাদেশের ক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত স্বর্ণের বাজার পরিবর্তন হওয়ায় সাধারণ মানুষ ও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে।
স্বর্ণ কেনার সময় করণীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবিচার
বাজার মূল্য পর্যবেক্ষণ
স্বর্ণ কেনার আগে অবশ্যই আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় বাজারের মূল্য যাচাই করা জরুরি। বিশেষ করে UAE, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে দামের তুলনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া বুদ্ধিমানের কাজ।
শুল্ক ও করের প্রভাব
প্রতিটি দেশের শুল্কনীতি ও ভ্যাট হার ভিন্ন হওয়ায় স্বর্ণের চূড়ান্ত মূল্যেও তা প্রভাব ফেলে। বাংলাদেশে বর্তমানে ৫% ভ্যাট ও ৬% মজুরি যুক্ত করতে হয়, যা মূল্য অনেক বাড়িয়ে দেয়।
বিশ্ববাজারের প্রভাব
আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দাম প্রভাবিত হয় ডলার দর, জিও-রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও মুদ্রাস্ফীতির হারের মাধ্যমে। এই বিষয়গুলো নিয়মিত বিশ্লেষণ করা উচিত।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ: কোন বাজার থেকে কিনবেন?
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, যেহেতু UAE-তে স্বর্ণের দাম তুলনামূলকভাবে কম এবং বাজার অনেক স্থিতিশীল, তাই যারা প্রবাসে থাকেন, তাদের জন্য দুবাই বা আবুধাবি থেকে স্বর্ণ কেনা বেশি লাভজনক। তবে দেশে আনার ক্ষেত্রে শুল্ক নীতিমালার প্রতি সতর্ক থাকতে হবে।
অন্যদিকে, যারা দেশেই স্বর্ণ কিনতে আগ্রহী, তাদের জন্য প্রয়োজন যথাযথ যাচাই ও মানসম্মত দোকান নির্বাচন।
স্বর্ণের দাম নিয়ে প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী (FAQs)
- বর্তমানে UAE-তে স্বর্ণের দাম কত?
বর্তমানে ২২ ক্যারেট স্বর্ণের দাম প্রতি গ্রাম প্রায় ২৫৭ দিরহাম, অর্থাৎ ভরিতে প্রায় ৯৫ হাজার ৫০০ টাকা। - বাংলাদেশে স্বর্ণের দাম কেন বেশি?
শুল্ক, ভ্যাট, ও মজুরি যুক্ত হওয়ায় স্বর্ণের দাম বাংলাদেশের বাজারে অনেক বেশি। - ভারতের সাথে তুলনায় বাংলাদেশের স্বর্ণের দাম কেমন?
বর্তমানে ভারত থেকে বাংলাদেশে ২২ ক্যারেট স্বর্ণের দাম প্রায় ৮০ হাজার টাকা বেশি। - UAE থেকে স্বর্ণ কিনে বাংলাদেশে আনা কি নিরাপদ?
নিরাপদ হলেও শুল্ক ও কাস্টমস নীতিমালা ভালোভাবে জানা প্রয়োজন, যাতে কোনো সমস্যা না হয়। - স্বর্ণের দাম কোথায় সবচেয়ে কম?
বর্তমানে বিশ্ববাজারে তুলনামূলকভাবে UAE-তে স্বর্ণের দাম সবচেয়ে কম।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।