বাংলাদেশ থেকে অসংখ্য শিক্ষার্থী দেশের বাইরে উচ্চশিক্ষার জন্য পাড়ি জমান। উন্নত শিক্ষাব্যবস্থা, জীবনযাত্রার মান,গবেষণা, চাকরির সুযোগ-সুবিধার জন্য প্রায় সবাই দেশের বাইরে যেতে চায়।
তবে এ যাত্রা কিছুটা সময়সাপেক্ষ ও এর জন্য প্রয়োজন যথাযথ প্রস্তুতি। সঠিক দিকনির্দেশনা, প্রয়োজনীয় তথ্য ও সঠিক পরিকল্পনার অভাবে অনেকেই শেষ পর্যন্ত হাল ছেড়ে দেন। সম্প্রতি উচ্চমাধ্যমিক (এইচএসসি) বা সমমানের পরীক্ষা শেষ হয়েছে। অনেক শিক্ষার্থীই এখন বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য পাড়ি জমানোর স্বপ্ন দেখছেন। এজন্য পরীক্ষা-পরবর্তী সময়টিই তাদের জন্য উত্তম। কেননা, স্নাতক পর্যায়ে প্রায় সব দেশেই স্কলারশিপ পাওয়ার সুযোগ থাকে।
দেশ ও বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচন
বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য প্রথমেই দেশ ও বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচন করতে হবে। কেননা দেশ ভেদে জীবনযাত্রার মান, শিক্ষাব্যবস্থা, খরচ ও ভর্তির প্রয়োজনীয়তা ভিন্ন। তাই প্রথমেই নিজের লক্ষ্য স্থির করতে হবে। উচ্চশিক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, মালয়েশিয়া, জার্মানি, জাপানসহ ইউরোপের দেশগুলোর অবস্থান শীর্ষে। দেশের বাইরে পড়তে ইচ্ছুক প্রার্থীকে প্রথমেই কোন দেশে পড়তে চান তা নির্বাচন করতে হবে। দেশ নির্বাচনের পর ওই দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের সুযোগ-সুবিধাও দেখতে হবে। শুধু একটি দেশে আবেদন না করে একাধিক দেশের একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করাই উত্তম। পড়াশোনার মান, টিউশন ফি, স্কলারশিপের সুযোগ ইত্যাদি পর্যবেক্ষণ করে তবেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে।
পাঠ্যক্রমিক পরিকল্পনা
দেশ ও বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচনের পর সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কোর্স সম্পর্কে ভালোমতো খোঁজ নিতে হবে। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির শর্ত ভিন্ন হয়। এইচএসসি বা সমমান পরীক্ষার ফলাফল ও অন্যান্য অ্যাকাডেমিক রেকর্ড তাদের শর্ত পূরণ করে কিনা, তা যাচাই করে দেখতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে জিপিএর পাশাপাশি কিছু নির্দিষ্ট বিষয়ে ভালো নম্বর থাকাটাও জরুরি। নিজের আগ্রহ, যোগ্যতা ও খরচ সব যাচাই করে তবেই কোর্স বা বিষয় নির্ধারণ করতে হবে।
স্কলারশিপ
দেশের বাইরে পড়াশোনার খরচ অনেক বেশি হতে পারে, এজন্য স্কলারশিপ ও ফান্ডিং সুযোগ সম্পর্কে জানা গুরুত্বপূর্ণ। বাইরের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের অনেক ধরনের সরকারি-বেসরকারি বৃত্তি প্রদান করে থাকে। সেগুলো সম্পর্কে যাথাযথ তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। ইউরোপের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষার্থীদের সরকারিভাবে অনেক বৃত্তি প্রদান করে।
এ ছাড়াও জার্মানির ডিএএডি, জাপানের মনবুশো বৃত্তি ও মনবুকাগাকুশো বা মেক্সট বৃত্তি, এমএইচটিটি স্কলারশিপ প্রোগ্রাম, অস্ট্রেলিয়ার ডেভেলপমেন্ট স্কলারশিপ, শেভেনিং স্কলারশিপ রয়েছে।
ভাষাগত দক্ষতা
বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণে ভাষাগত দক্ষতা থাকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। অধিকাংশ দেশে ইংরেজি ভাষার প্রচলন বেশি থাকায় আইইএলটিএস (IELTS) বা টোফেলে (TOEFL) ভালো স্কোর করতে হবে। তবে এগুলোর পাশাপাশি অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন জিআরই (GRE), পিটিই (PTE), ডুয়োলিংগোসহ অনেক ইংরেজি ভাষা দক্ষতার স্কোর গ্রহণ করে। এসব পরীক্ষায় ভালো স্কোর তোলার মাধ্যমে নিজের ভাষাগত দক্ষতার প্রমাণ দেওয়া যায়।
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
উচ্চশিক্ষার ন্যূনতম যোগ্যতার প্রমাণ হলো বিগত শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ। তাই নিজের সব অ্যাকাডেমিক সনদ সাজিয়ে রাখতে হবে। এ ছাড়াও প্রয়োজনীয় যেসব কাগজ লাগবে-পাসপোর্ট, জন্ম নিবন্ধন সার্টিফিকেট, জাতীয় পরিচয়পত্র (যদি থাকে), এসএসসি ও এইচএসসির সার্টিফিকেট, ট্রান্সক্রিপ্ট ও টেস্টিমোনিয়াল, পাসপোর্ট সাইজের ছবি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির প্রমাণপত্র বা অফার লেটার, অর্থনৈতিক সামর্থ্যের প্রমাণপত্র, স্টেটমেন্ট অব পারপাস (এসওপি) লেটার, লেটার অব মোটিভেশন, লেটার অব রিকমেন্ডেশন, পুলিশ ছাড়পত্র, স্বাস্থ্যবিমার প্রমাণপত্র, ভাষাগত দক্ষতার সার্টিফিকেটসহ আরও বেশকিছু কাগজপত্র।
আর্থিক পরিকল্পনা
বিদেশে পড়াশোনার ক্ষেত্রে খরচ অনেক বেশি হয়। ভর্তি বা অ্যাকাডেমিক ফি তুলনামূলক বেশি হয়ে থাকে। যদিও বৃত্তি পেলে টাকার পরিমাণ কিছুটা কম লাগে। এ ছাড়াও বাইরের দেশে থাকা-খাওয়ার খরচ, যাতায়াত, প্লেন ভাড়াসহ বেশকিছু বড় খরচ রয়েছে। আবার ভিসা আবেদনের সময় ব্যাংক স্টেটমেন্ট বা স্পন্সরশিপের প্রমাণ দিতে হয়। তাই পূর্বেই একটা আর্থিক পরিকল্পনা সাজিয়ে নিতে হবে।
সূত্র: দ্য ডেইলি ক্যাম্পাস
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।