জুমবাংলা ডেস্ক : শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমাতে সব বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ে একক ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনের উদ্যোগ নিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)। এজন্য একটি খসড়া অধ্যাদেশও তৈরি করা হয়েছিল। তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সম্মতি না মেলায় সেই উদ্যোগ ভেস্তে গেছে। এখন ফের নতুন করে একক ভর্তি পরীক্ষা সংক্রান্ত নীতিমালা তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে তদারক সংস্থাটি।
জানা গেছে, এ উদ্যোগের অংশ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা পরিচালনায় ন্যাশনাল টেস্টিং অথিরিটি (এনটিএ) গঠন করতে যাচ্ছে সরকার। তবে এনটিএ গঠনের আগ পর্যন্ত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একক ভর্তি পরীক্ষা পরিচালনার জন্য একটি নীতিমালা তৈরির কাজ করছে কমিশন। গত ৩১ অক্টোবর ইউজিসি ‘কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণকারী কর্তৃপক্ষ অধ্যাদেশ, ২০২৩’ শীর্ষক একটি প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। যদিও এ প্রস্তাবিত অধ্যাদেশের বিভিন্ন দুর্বলতা তুলে এর অনুমোদন না দিয়ে নতুন করে প্রস্তাবনা চেয়েছে মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি সূত্র বলছে, কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণকারী কর্তৃপক্ষের কাঠামো, এর চেয়ারম্যান পদ ও ব্যয়ের ক্ষমতাসহ বেশকিছু বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের জোর আপত্তি থাকায় আলোর দেখা পায়নি ইউজিসির পাঠানো ওই নীতিমালা। এখন মন্ত্রণালয়ের প্রত্যাশা অনুযায়ী আগেরটি সংশোধন করে নতুন একটি নীতিমালা তৈরি করতে যাচ্ছে কমিশন। এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণকারী কর্তৃপক্ষে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন প্রতিনিধিকে যুক্ত করা হবে। পাশাপাশি কর্তৃপক্ষের ব্যয়ের ক্ষমতায়ও কিছু পরিবর্তনের কথা শোনা যাচ্ছে।
উচ্চশিক্ষা সংশ্লিষ্ট অনেকেরই অভিযোগ, একক ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতি আটকে যাওয়ার নেপথ্যে রয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসির ‘ক্ষমতার দ্বন্দ্ব। এ প্রক্রিয়া চালু হলে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওপর অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ পেতে যাচ্ছে ইউজিসি। আর নিয়ন্ত্রণ হারাবে মন্ত্রণালয়। এ কারণে অধ্যাদেশ জারির বিষয়ে পদক্ষেপ না নিয়ে উল্টো ইউজিসিকে থামিয়ে দেওয়া হয়েছে।
নতুন নীতিমালার ধরন নির্ধারণ করতে সম্প্রতি তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করেছে ইউজিসি। এ বিষয়ে সংস্থাটির চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘একক ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় আমাদের কাছে নতুন করে প্রস্তাবনা চেয়েছে। এই প্রস্তাবনা কীভাবে পাঠানো হবে তা নির্ধারণ করতে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটি সিদ্ধান্ত নেবে নীতিমালা কীভাবে তৈরি করা হবে।’
কমিটির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. হাসিনা খান। এছাড়া অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিলের সাবেক সদস্য অধ্যাপক ড. সঞ্জয় কুমার অধিকারী ও কমিশনের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা কমিটিতে সদস্য হিসেবে রয়েছেন।
কমিটি ও এর কার্যক্রম বিষয়ে জানতে চাইলে ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. হাসিনা খান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, ‘একক ভর্তি পরীক্ষার জন্য নতুন করে নীতিমালা তৈরি করা হবে। তবে আমাদের কোনো সভা এখনো হয়নি। সেজন্য নীতিমালায় কোন বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত হবে কিংবা কোন বিষয়গুলো বাদ যাবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না। নতুন নীতিমালায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন প্রতিনিধি থাকবে বলেও জানান তিনি।’
ইউজিসি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে স্নাতক পর্যায়ে ‘কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণকারী কর্তৃপক্ষ অধ্যাদেশ, ২০২৩’ প্রণয়নের প্রস্তাব করেছে। জাতীয় সংসদ অধিবেশন না থাকা অর্থাৎ বিলুপ্ত থাকা অবস্থায় রাষ্ট্রপতি জরুরি অবস্থা বিবেচনায় অধ্যাদেশ জারি করে থাকেন। বর্তমানে দেশে কোনো জরুরি অবস্থা বিদ্যমান নেই। তাই এক্ষেত্রে অধ্যাদেশ প্রণয়নের প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য নয়—শিক্ষা মন্ত্রণালয়
উচ্চশিক্ষা সংশ্লিষ্ট অনেকেরই অভিযোগ, একক ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতি আটকে যাওয়ার নেপথ্যে রয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসির ‘ক্ষমতার দ্বন্দ্ব। এ প্রক্রিয়া চালু হলে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওপর অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ পাবে ইউজিসি। আর নিয়ন্ত্রণ হারাবে মন্ত্রণালয়। এ কারণে অধ্যাদেশ জারির বিষয়ে পদক্ষেপ না নিয়ে উল্টো ইউজিসিকে থামিয়ে দেওয়া হয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের কথায়ও ক্ষমতার দ্বন্ধের আভাস পাওয়া যায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব পর্যায়ের এক কর্মকর্তা দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘অধ্যাদেশের খসড়াটা দেখে মন্ত্রণালয়ের সবাই অবাক হয়েছিলেন। এটা যেভাবে করা হয়েছে, তাতে ইউজিসি এককভাবে অনেক ক্ষমতার অধিকারী হবে। সেখানে মন্ত্রণালয়ের কাউকে রাখার সুযোগ নেই অজুহাতে কাউকে রাখা হয়নি। এটা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা ভালোভাবে নেননি। এছাড়া আমরা তাদের কাছে চেয়েছিলাম ‘প্রস্তাবনা’ অথচ তারা তৈরি করে পাঠিয়েছিল ‘অধ্যাদেশ’। এসব কারণে নতুন করে প্রস্তাবনা পাঠাতে বলা হয়েছে।’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ৩১ অক্টোবর ‘পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে স্নাতক পর্যায়ে ‘কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণকারী কর্তৃপক্ষ অধ্যাদেশ, ২০২৩’-এর খসড়া চূড়ান্ত করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠায় ইউজিসি। তবে সেটি সে সময় চূড়ান্ত করেনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এমনকি পাঠানো হয়নি রাষ্ট্রপতির কার্যালয়েও।
পরবর্তীতে গত বছরের ২৯ নভেম্বর একক ভর্তি পরীক্ষা সম্ভব নয় জানিয়ে ইউজিসিতে চিঠি পাঠানো হয়। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের উপসচিব মোছা. রোখছানা বেগম স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের আচার্যের অভিপ্রায় অনুসারে ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষ থেকে সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়কে একক ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের জন্য গত ১৫ এপ্রিল ইউজিসিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। প্রজ্ঞাপনের প্রেক্ষিতে ইউজিসি কেন্দ্রীয়ভাবে ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণের পদ্ধতি ও প্রক্রিয়া নির্ধারণের প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করার কথা। কিন্তু তা না করে ইউজিসি সরাসরি অধ্যাদেশের খসড়া প্রেরণ করেছে।
এতে আরও বলা হয়, ইউজিসি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে স্নাতক পর্যায়ে ‘কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণকারী কর্তৃপক্ষ অধ্যাদেশ, ২০২৩’ প্রণয়নের প্রস্তাব করেছে। জাতীয় সংসদ অধিবেশন না থাকা অর্থাৎ বিলুপ্ত থাকা অবস্থায় রাষ্ট্রপতি জরুরি অবস্থা বিবেচনায় অধ্যাদেশ জারি করে থাকেন। বর্তমানে দেশে কোনো জরুরি অবস্থা বিদ্যমান নেই। তাই এক্ষেত্রে অধ্যাদেশ প্রণয়নের প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য নয়।
এরপরই চিঠিতে ইউজিসির ক্ষমতার বিষয়টি ইঙ্গিত করেছে মন্ত্রণালয়। চিঠির ক্রমিক নম্বর ২(গ)-তে বলা হয়, প্রস্তাবিত অধ্যাদেশের ৫, ৬, ৭, ৮, ৯, ১০ ধারা পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, ‘বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে স্নাতক পর্যায়ে কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণকারী কর্তৃপক্ষ’ নামে একটি প্রস্তাবিত কর্তৃপক্ষ স্নাতক পর্যায়ে ভর্তি পরীক্ষা সংক্রান্ত সব কার্যক্রম সম্পন্ন করবে। যার চেয়ারম্যান হবেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান।
যিনি ইতোমধ্যেই একটি বিধিবদ্ধ সংস্থার প্রধান হিসেবে দায়িত্বরত। এ প্রেক্ষিতে তার আরেকটি কর্তৃপক্ষের প্রধানের দায়িত্ব পালন করা সমীচীন হবে না। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ‘বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন আদেশ, ১৯৭৩’ বলে গঠিত একটি বিধিবদ্ধ সংস্থা। একটি বিধিবদ্ধ সংস্থার অধীনে আইন দ্বারা প্রতিষ্ঠিত আরেকটি কর্তৃপক্ষ থাকতে পারে না।
এনটিআরসিএ’র উদাহরণ টেনে মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে বলা হয়, বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) একটি স্বতন্ত্র পরীক্ষা গ্রহণকারী সংস্থা। বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের একক পরীক্ষা গ্রহণ করার ক্ষেত্রেও এ বিভাগের অধীনে এরকম একটি স্বতন্ত্র কর্তৃপক্ষ গঠন করা যেতে পারে। এমতাবস্থায়, উপর্যুক্ত পর্যালোচনার আলোকে সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এককভাবে ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণের নিমিত্তে ন্যাশনাল টেস্টিং অথরিটির গঠনকাঠামো, কার্যক্রম, পরীক্ষা গ্রহণ পদ্ধতি বিষয়ে স্বয়ংসম্পূর্ণ প্রস্তাব নির্দেশক্রমে পাঠানোর অনুরোধ করা হলো।
জানা গেছে, দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি কার্যক্রমে জটিলতা, দীর্ঘসূত্রিতা, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের নিরাপত্তাহীনতা ও দুর্ভোগ, অতিরিক্ত টাকা ব্যয় এবং সময়ক্ষেপণ হয়। এ জন্য বিদ্যমান ব্যবস্থার উন্নয়ন ও সংস্কার প্রয়োজন। রাষ্ট্রপতিও একক ভর্তি পরীক্ষা চালুর অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন।
এ পরিস্থিতিতে ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষ থেকে একক ভর্তি পরীক্ষার উদ্যোগ নেয় সরকার। পরিকল্পনা অনুযায়ী, নতুন নিয়মে তিন বিভাগের (বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা) শিক্ষার্থীদের জন্য তিনটি আলাদা পরীক্ষা নিয়ে একটি ‘স্কোর’ দেওয়ার কথা। কোনো শিক্ষার্থী বিভাগ পরিবর্তন চাইলে সেই সুযোগও এর মধ্যে রাখা হবে। এরপর এই স্কোরের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা করবে। এর মানে হলো, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আলাদাভাবে কোনো পরীক্ষা নিতে পারবে না।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।