আন্তর্জাতিক ডেস্ক : রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে ‘কৃষ্ণসাগর শস্য চুক্তি’ অনুসারে আগস্টে যুদ্ধ-বিধ্বস্ত ইউক্রেন থেকে ৩২.৯ মিলিয়ন মেট্রিক টন খাদ্য রপ্তানি হওয়ার কথা। এসব শস্যের অর্ধেকেরও বেশি যাবে উন্নয়নশীল দেশে। যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে এ চুক্তি বেশ কয়েকবার বাড়ানো হয়েছিল। কিন্তু সম্প্রতি কৃষ্ণসাগর শস্য চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে রাশিয়া। এতে বিশ্বে ইউক্রেনের শস্য রপ্তানি অনেকটা স্থবির হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
শস্য চুক্তিটি আসলে কী এবং বিশ্বের জন্য এটি কতটা জরুরি তা জানা দরকার। এই চুক্তির মাধ্যমে ইউক্রেন থেকে কৃষ্ণ সাগরের মধ্য দিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শস্য রপ্তানি হয়ে থাকে। চুক্তিটি গত বছরের জুলাই মাসে জাতিসংঘ ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় সম্পন্ন হয়। চুক্তিতে সই করেন রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু ও ইউক্রেনের অবকাঠামো মন্ত্রী ওলেক্সান্ডার কুবরাকভ। এর মধ্যে দিয়ে ইউক্রেনের তিনটি বন্দর ওডেসা, ইউজানি ও চোরনোমস্ক দিয়ে শস্য রপ্তানির জন্য একটি নিরাপদ করিডোর তৈরি হয়।
চুক্তি অনুসারে তুরস্ক, ইউক্রেন ও জাতিসংঘের কর্মীদের একটি যৌথ টিম ইউক্রেনের বন্দর থেকে কৃষ্ণ সাগরের মধ্য দিয়ে যাওয়া শস্যভর্তি জাহাজগুলো পর্যবেক্ষণ করে থাকে। কৃষ্ণ সাগর মূলত রাশিয়া ও ইউক্রেনের যৌথভাবে খনন করা। জাহাজগুলো কৃষ্ণ সাগর পাড়ি দিয়ে যখন তুরস্কের বসফরাস প্রণালীতে চলে যায় তখন ইস্তাম্বুল থেকে জাতিসংঘ, ইউক্রেন, রাশিয়া ও তুরস্কের একটি যৌথ সমন্বিত টিম ঘনিষ্ঠভাবে তা পর্যবেক্ষণ করে। জাহাজগুলো অস্ত্র বহন করছে কিনা তাও নিশ্চিত করা হয় এই যৌথ সমন্বয় কেন্দ্রের তত্ত্বাবধানে।
এই চুক্তির লক্ষ্য কি?
ফেব্রুয়ারি থেকে ইউক্রেনে পূর্ণ মাত্রায় আগ্রাসন শুরু করেছে রাশিয়া। এরপর থেকে কৃষ্ণ সাগরে নিরাপদ জাহাহ চলাচলে একটি অবরোধ অবস্থা তৈরি হয়েছে। এর ফলে ইউক্রেনের রপ্তানি আগের অবস্থা থেকে ৬ ভাগের এক ভাগে নেমে এসেছে।
ইউক্রেন ও রাশিয়া বিশ্বের বৃহত্তম শস্য রপ্তানিকারক দেশ। কৃষ্ণ সাগরে এই অবরোধের কারণে শস্যের দাম সারাবিশ্বে ব্যাপকহারে বেড়েছে। এই চুক্তির উদ্দেশ্য ছিল দুর্ভিক্ষ এড়াতে খাদ্যশস্য সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা। বিশেষ করে গম, তেল, সারও অন্যান্য পণ্য বিশ্ব বাজারে সরবরাহ ঠিক রাখা। এছাড়া মানবিক প্রয়োজন মেটানোর লক্ষ্যও ছিল।
চুক্তিটি কি লক্ষ্য অর্জন করেছে?
বর্তমান চুক্তিটি বিশ্ব বাজারে খাদ্যশস্যের দাম কমিয়ে আনতে সাহায্য করেছে। এছাড়া বিশ্বব্যাপী খাদ্য সংকটও অনেকটা কমিয়ে এনেছে। রুটির প্রধান উপাদান গমের দাম এই বছর এখন পর্যন্ত ১৭ শতাংশ কমেছে। ভুট্টার দাম কমেছে ২৬ শতাংশ।
বিশ্বব্যাপী খাদ্য সংকট কমাতে ইউক্রেনের শস্য সরাসরি ভূমিকা পালন করেছে। ইথিওপিয়া, সোমালিয়া ও ইয়েমেনের মতো দেশে দরিদ্র দেশে জাতিসংঘে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির আওতায় ইউক্রেনের ৭ লাখ ২৫ হাজার ২০০ টন খাদ্য সহায়তা পাঠানো হয়। বিশ্বব্যাপী খাদ্য সংকট কমাতে ইউক্রেনের শস্য সরাসরি ভূমিকা পালন করেছে
রাশিয়া কেন চুক্তি বাতিল করল?
রাশিয়া কয়েক মাস ধরে বলে আসছে যে, চুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর শর্ত পূরণ করা হয়নি। এছাড়া রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন যে, তিনি রাশিয়ান কৃষি ব্যাংকের ওপর নিষেধাজ্ঞার অবসান চান।
রাশিয়ার বক্তব্য, দুর্ভাগ্যবশত কৃষ্ণ সাগর চুক্তির রাশিয়া সংশ্লিষ্ট কিছু বিষয় এখন পর্যন্ত বাস্তবায়িত হয়নি। ফলে এই চুক্তি স্থগিত করা হয়েছে। যখন চুক্তি অনুসারে রাশিয়া সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করা হবে, তখন তারা আবার চুক্তিতে ফিরে যাবে।
দেশটির অন্যান্য দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে কৃষি যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশের সরবরাহ আবার শুরু, বীমা ও পুনর্বীমার ওপর বিধিনিষেধ প্রত্যাহার, টোগলিয়াত্তি-ওডেসা অ্যামোনিয়া পাইপলাইন চালু, সম্পদের অবরোধ, খাদ্য ও সার রপ্তানির সঙ্গে জড়িত রাশিয়ান সংস্থাগুলোর অ্যাকাউন্টগুলো চালু করা।
কৃষ্ণ সাগরের শস্য করিডোর কি রাশিয়া ছাড়া চলতে পারে?
গত বছরের জুলাই মাসে চুক্তি না হওয়া পর্যন্ত ইউক্রেনের বন্দরগুলো অবরুদ্ধ করে রেখেছিল রুশ সেনাবাহিনী। চুক্তির ফলে রাশিয়া অবরোধ প্রত্যাহার করার পর থেকে শস্য সরবরাহ স্বাভাবিক হয়। এখন চুক্তি থেকে রাশিয়া বের হয়ে গেলে শস্য রপ্তানি সম্ভব হবে কি না তা স্পষ্ট নয়।
ইউক্রেন কি ইউরোপীয় ইউনিয়নের মাধ্যমে শস্য রপ্তানি করতে পারবে?
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ইউক্রেন পূর্ব ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোর মাধ্যমে যথেষ্ট পরিমাণ শস্য রপ্তানি করে আসছে। তবে এতে যোগাযোগ অবকাঠামোসহ কিছু চ্যালেঞ্জ আছে।
এছাড়া পূর্ব ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে ইউক্রেনের শস্যের সরবরাহ এই অঞ্চলের কৃষকদের মধ্যে অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। কৃষকরা বলছেন, এতে স্থানীয় সরবরাহ কমছে। এ কারণে ইউরোপীয় ইউনিয়ন পাঁচটি দেশ বুলগেরিয়া, হাঙ্গেরি, পোল্যান্ড, রোমানিয়া ও স্লোভাকিয়াকে তাদের দেশে ইউক্রেনের গম, ভুট্টা ও তেলের বীজের বিক্রি বন্ধ করতে বলেছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।