বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক : বাংলাদেশে প্রতিদিন লাখ লাখ মানুষ স্বাস্থ্যকর পানির অভাবে ভুগছেন, আর এই দুরবস্থার মধ্যে দেশের বাজারে প্রবেশ করেছে ‘পিওরইট’, একটি পানি বিশুদ্ধকরণ যন্ত্র যা ইউনিলিভার থেকে কিনে নেওয়া হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এও স্মিথ করপোরেশনের দ্বারা। কিন্তু, গ্রাহকদের কাছে আসা অভিযোগগুলির উপসংহার নিয়ে ভাবনা এখন জরুরী। অনেক গ্রাহক অভিযোগ করছেন যে এই যন্ত্রটির প্রতিশ্রুত সক্ষমতা পুরোপুরি অকার্যকর, যেখানে তারা বলছেন এটি নির্ধারিত লিটারের অর্ধেকও বিশুদ্ধ করতে পারছে না।
Table of Contents
পিওরইট: বিক্রয়ের পর গ্রাহকদের প্রতারিত হচ্ছেন
২০২৪ সালের নভেম্বরে ইউনিলিভার তাদের জনপ্রিয় পানি বিশুদ্ধকরণ প্রযুক্তি পিওরইট ১২০ মিলিয়ন ডলারে বিক্রি করে এও স্মিথ করপোরেশনের কাছে। এই পরিবর্তনের পর, পণ্যের গায়ে ইউনিলিভারের লোগো এখনও রয়েছে, যা বিক্রেতাদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে। একটি এও স্মিথের চাকরির দায়িত্বে থাকা কর্মী জানিয়েছেন, “আমরা বেশ কিছু সংখ্যক অভিযোগ পাচ্ছি, কিন্তু নতুন মালিকানা সম্পর্কিত তথ্য গ্রাহকদের কাছে পরিষ্কার নয়।” এখানেই সত্যিই প্রশ্ন উঠে, কতটুকু নিরাপদ পিওরইট?
গ্রাহক সমস্যার অঙ্গীকার: সমাধানের অভাবে অসহায়ত্ব
গ্রাহকরা বার বার অভিযোগ জানিয়েছেন যে পিওরইটের ফিল্টার কিট ১৫০০ বা ৩০০০ লিটার পানি বিশুদ্ধ করার সক্ষমতা দাবি করে, কিন্তু তারা যে বাস্তবে মাত্র ৭০০-৭৫০ লিটার পানি বিশুদ্ধ করেছেন, তার ফলে কিটটি অচল হয়ে পড়ছে। “আমরা কল করে কোনো সমাধান পাচ্ছি না, বরং সমস্যা জানানোর পর আমাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করা হচ্ছে,” বলেছেন ঢাকার মগবাজারের বাসিন্দা আয়শা আক্তার। পণ্যের অতিরিক্ত দামে গ্রাহকদের কি বেআইনিভাবে নির্যাতন করা হচ্ছে?
তথ্যের অভাব: দায়িত্বজ্ঞানহীনতার চিত্র
রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে দোকানিরাও পিওরইটের নতুন মালিককে নিয়ে চিন্তিত। অনেক দোকানি জানেন না এটি ইউনিলিভারের পণ্য নয়, তারা শুধুমাত্র এও স্মিথের নাম জানলেও তার কার্যক্রম সম্পর্কে কিছুই জানেন না। মতামত সংগ্রহ করতে গিয়ে, কিছু বিক্রয় প্রতিনিধিরা বলেন, “কিছুই জানি না, আমাদের কেউ কিছু বলেনি।” এর ফলে পণ্যের যথাযথ কার্যকারিতা সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হচ্ছে।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অসহায়ত্ব
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মাসুম আরেফিন জানিয়েছেন, “পিওরইটের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ আছে। তবে নির্দিষ্ট মানদণ্ড না থাকায় ব্যবস্থা নিতে পারছি না। কেউ আমদের কাছে রিপোর্ট করলে আমরা ব্যবস্থা নিতে পারবো।” এ কথা স্বীকার করে, বর্তমান আইনগত কাঠামোতে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেই বলেই মন্তব্য করেছেন তিনি।
ইউনিলিভারের পরিষ্কার বক্তব্য
ইউনিলিভার কাস্টমার কেয়ার লিমিটেডের কোম্পানি সেক্রেটারি নাহারুল ইসলাম মোল্লা বলছেন, “পিওরইট এখন আমাদের পণ্য নয়। এটি এও স্মিথের কাছে বিক্রি হয়েছে এবং তারা এখন পরিচালনা করছে।” এই সদিচ্ছা থাকলেও, গ্রাহকদের ধোঁকা এবং অবহেলায় তাদের উপস্থিতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এও স্মিথ: জনমনে উদ্বেগ ছড়ানো কর্তৃপক্ষ
এও স্মিথের চেয়ারম্যান কেভিন জে হুইলারকে যোগাযোগ করা হলে, তিনি কোনো মন্তব্য দেননি। একাধিক গ্রাহকসেবার ত্রুটি ও বিপণনের আপাত অতি গুরত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে তারা কেন নীরব? গ্রাহকদের জন্য প্রতিষ্ঠানটির এতো দীর্ঘ নীরবতা খুবই উদ্বেগজনক।
আপনার জন্য টিপস
- পণ্য কেনার আগে সবসময় উৎপাদক প্রতিষ্ঠান যাচাই করুন।
- গ্রাহকসেবার নম্বরে সাড়া না পেলে ভোক্তা অধিদপ্তরে অভিযোগ করতে পারেন।
- ফেরত নীতিমালা নেই, এমন ব্র্যান্ড থেকে দূরে থাকুন।
বহুজাতিক কোম্পানি যেন নিজেদের সমস্যার কথা জানাতে ভীত, এবং এর ফলে ক্রেতারা সমস্যায় পড়ছেন। সমস্যার সঠিক সমাধান নিশ্চিত না হলে যেমন ধোঁকাখোরি চলে যাবে, তেমনি গ্রাহকদের নিরাপত্তা চরম ঝুঁকিতে পড়বে।
জেনে রাখুন, সতর্কতা আপনার স্বাস্থ্য এবং নিরাপত্তা রক্ষায় অপরিহার্য।
FAQs
পিওরইট কি সত্যিই কার্যকর?
অধিকাংশ গ্রাহক অভিযোগ করছেন যে এটি নির্ধারিত লিটার ওয়াটার বিশুদ্ধ করতে পারে না।পণ্যের মান নিয়ে অভিযোগ কোথায় জানাব?
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে অভিযোগ জানাতে পারেন।এও স্মিথ নতুন মালিক কবে থেকে?
২০২৪ সালের নভেম্বরে ইউনিলিভার পিওরইট এও স্মিথকে বিক্রি করে।আমি যদি অভিযোগ জানাই, তারা কি আমাকে সেবা দেবে?
অনেক গ্রাহকের মতে, অভিযোগ জানানো পর তারা কার্যকর সেবা পাননি।- পিওরইট কি জনগণের জন্য বিপজ্জনক?
হ্যাঁ, মানহীন পণ্য বিক্রির ফলে তা গ্রাহকদের স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে ফেলতে পারে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।