বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘মোন্থা’ উপকূলের খুব কাছে চলে এসেছে। ভারতের কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দপ্তরের (আইএমডি) সর্বশেষ বুলেটিন অনুসারে, শেষ ছয় ঘণ্টায় দক্ষিণ-পশ্চিম এবং সংলগ্ন পশ্চিম-মধ্য ও দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরের ওপর দিয়ে ঘণ্টায় ১৭ কিলোমিটার গতিতে স্থলভাগের দিকে এগোচ্ছে মোন্থা।

আইএমডি বুলেটিনের তথ্য বলছে, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য অন্ধ্রের কাকিনাড়া এবং কলিঙ্গপত্তনম উপকূলের মধ্যবর্তী অংশে আছড়ে পড়বে মোন্থা।
আইএমডির সর্বশেষ বুলেটিন দেওয়া হয়েছে গতকাল সোমবার রাত ৯ টার দিকে। সেখানে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার সকালের মধ্যে ‘প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে’ পরিণত হবে। ‘প্রবল’ আকারেই মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর অন্ধ্রপ্রদেশের মছলিপত্তনম এবং কাকিনাড়ার কাছে কলিঙ্গপত্তনম উপকূলের মধ্যবর্তী অংশে আছড়ে পড়বে। এ সময় ওই অঞ্চলে বাতাসের সর্বোচ্চ গতি থাকবে ঘণ্টায় ৯০ থেকে ১০০ কিলোমিটার। দমকা হাওয়ার বেগ ছুঁতে পারে ১১০ কিলোমিটারের গণ্ডিও।
ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় দুই রাজ্য তামিলনাড়ু, অন্ধ্র এবং পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ওড়িশায় ইতিমধ্যে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। উপকূল থেকে সরানো হয়েছে লোকজনকে।
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘মোন্থা’র প্রভাবে আজ মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) দুপুর থেকেই বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে বিক্ষিপ্তভাবে বৃষ্টি শুরু হতে পারে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ওয়েদার অবজারভেশন টিম (বিডব্লিউওটি)।
বিডব্লিউওটির এক ফেসবুক পোস্টে বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে মঙ্গলবার দুপুর থেকে দক্ষিণাঞ্চলে বৃষ্টি শুরু হয়ে বুধবার (২৯ অক্টোবর) থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বাড়বে। যদিও ঘূর্ণিঝড়টি সরাসরি বাংলাদেশে আঘাত হানবে না, তবে এর বৃষ্টিবলয় ও আঁখি অংশের প্রভাবে উপকূলীয় জেলাগুলোতে প্রবল বাতাস ও ভারি বর্ষণ হতে পারে।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের সর্বশেষ বুলেটিনে বলা হয়, পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় ‘মোন্থা’ আরও উত্তর-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এটি সোমবার মধ্যরাতে অবস্থান করছিল—
চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১,৩০৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে,
কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১,২৬০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে,
মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ১,১৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, এবং
পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১,১৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে।
ঘূর্ণিঝড়টি মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) সন্ধ্যা বা রাত নাগাদ ভারতের অন্ধ্র প্রদেশ উপকূল অতিক্রম করতে পারে বলে পূর্বাভাসে উল্লেখ করা হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার, যা দমকা বা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ঘণ্টায় ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়ের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর বর্তমানে খুবই উত্তাল।
সতর্কতার অংশ হিসেবে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরগুলোকে ২ নম্বর হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
এছাড়া উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সতর্কভাবে চলাচল করতে বলা হয়েছে, যাতে প্রয়োজন হলে দ্রুত নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে পারে।
ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে আগামী পাঁচ দিন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়া অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
উল্লেখ্য, ‘মন্থা’ নামটি দিয়েছে থাইল্যান্ড। থাই ভাষায় ‘মন্থা’ শব্দের অর্থ ‘সুবাসিত ফুল’ বা ‘সুন্দর ফুল’।
২০০৪ সাল থেকে বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণের প্রথা চালু করে। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো নিয়ে গঠিত WMO/ESCAP প্যানেল অন ট্রপিক্যাল সাইক্লোনস ঘূর্ণিঝড়ের নামের তালিকা তৈরি ও অনুমোদন করে।
এই প্যানেলের সদস্য দেশগুলো হলো—বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, ওমান, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড, ইরান, কাতার, সৌদি আরব, ইয়েমেন ও সংযুক্ত আরব আমিরাত।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘মন্থা’ নামটি শান্ত ও কোমল অর্থ বহন করলেও প্রকৃতিতে এটি হতে পারে প্রবল ও বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।



